নিজস্ব প্রতিবেদক *
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা শহীদজননী জাহানারা ইমামের ৯৫ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে “জাহানারা ইমামের আন্দোলনে তরুণদের দায়বদ্ধতা” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, শহীদজননী জাহানারা ইমামের অবদান শুধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পুরোগামী নেত্রী হিসেবে নয়, তাঁর অবদান ১৯৪৭ সালের সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সময় থেকে আমৃত্যু পর্যন্ত। বাংলা সাহিত্যে পড়া ও লেখালেখির সুবাধে এই মহিয়সী নারী হয়ে উঠেছিলেন উল্লেখযোগ্য কথাসাহিত্যিকও।
বক্তারা আরো বলেন, বত্রিশ বছর আগে শহীদজননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জামায়াত-শিবির চক্রের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের দাবিতে যে অভূতপূর্ব নাগরিক আন্দোলনের সূচনা হয়েছিলো তার আংশিক বিজয় অর্জিত হয়েছে শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তির মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের প্রধান গণহত্যাকারীদের বিচার হলেও দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম, মুসলিম লীগ কিংবা তাদের ঘাতক বাহিনী ‘রাজাকার’, ‘আলবদর’, ‘আলশামস’, ‘শান্তি কমিটি’র বিচার এখনও আরম্ভ হয়নি। যে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা স্মরণকালের ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যাযজ্ঞ সংঘঠিত করেছিল, যাদের বিচারের জন্য বঙ্গবন্ধুর সরকার বিশেষভাবে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩’ প্রণয়ন করেছিলেন তাদের বিচারও আরম্ভ হয়নি। এখন সময় এসেছে সকল গণহত্যাকারী সংগঠন ও বাহিনীর বিচার দ্রুত আরম্ভ করার।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি লেখক-সাংবাদিক শওকত বাঙালির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. অলিদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় শনিবার(৪ মে) বিকেলে সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয় নগরীর চেরাগী পাহাড়স্থ বঙ্গবন্ধু ভবনের ৩য় তলায় চট্টলবন্ধু এস এম জামাল উদ্দিন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন-কার্যকরী সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলা উদ্দিন, সহ-সভাপতি দীপংকর চৌধুরী কাজল ও মো. ফারুক, সহ-সাধারণ সম্পাদক আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, কাজী মুহাম্মদ রাজিশ ইমরান, সুমন চৌধুরী, এম.এ মান্নান শিমুল ও সূচিত্রা গুহ টুম্পা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবু সুফিয়ান ও মো. আলী আকবর বাবুল, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শুভ্রদেব কর, সহ-প্রচার ও গণমাধ্যম সম্পাদক রুবেল চৌধুরী, প্রকাশনা সম্পাদক রাজীব চৌধুরী রাজু, দফতর সম্পাদক অসিত বরণ বিশ্বাস, কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ জয়নাল আবেদিন, নাজমুল হক ভূইয়া, মো. শওকত উল ইসলাম খান, জয়নুদ্দীন আহম্মদ জয়, লুৎফর রহমান জুয়েল, মোহাম্মদ জামশেদুল ইসলাম, মো. রায়হান, অ্যাডভোকেট আহছান উদদৌলাহ মিনহাজ, নয়ন ধর প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে শওকত বাঙালি বলেন, শহীদজননী জাহানারা ইমামের আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা নির্মূলন। জঙ্গী, মৌলবাদী সন্ত্রাস দমনে আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট সাফল্য প্রদর্শন করলেও এই সন্ত্রাসের মূল দর্শন ওহাবিবাদ-মওদুদীবাদের বিরুদ্ধে সমন্বিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলে কোনো দেশ ও জাতি ধর্মের নামে সন্ত্রাসের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারবে না।
তিনি আরো বলেন, স্বাধীন বাঙলি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি হচ্ছে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক মূলবোধ-যা রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে বিধৃত হয়েছে ’৭২-এর সংবিধানে। মুক্তিযুদ্ধের এ চেতনা বাস্তবায়নের আন্দোলনে শুধু অংশগ্রহণ নয়, নেতৃত্ব দিতে হবে তরুণ প্রজন্মকে, যা আজ সময়ের দাবি।
গৃহিত কর্মসূচির মধ্যে ছিলো-শহীদজননীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা এবং নিবেদিত কবিতা পাঠ ও আবৃত্তি। সভার শুরুতে শহীদজননীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এছাড়া, সংগঠনের ৮ম জাতীয় সম্মেলন সফল করাসহ ‘মাস্টারদা সূর্যসেন ব্রিগেড’ গঠন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।