[bangla_date] || [english_date]

নিজস্ব প্রতিবেদক *

কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এগ্রিকালচারাল ইম্পর্ট্যান্ট পারসন- এআইপি) সম্মাননা পেয়েছেন ২২ জন। এই খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পাঁচ বিভাগে দ্বিতীয়বারের মতো এই সম্মাননা দেয়া হয়েছে।

রবিবার (৭ জুলাই) সকাল ১০টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২১ সালের এআইপি পুরস্কার প্রদান করা হয়।

পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার। এতে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ প্রধান অতিথি এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

এআইপিপ্রাপ্ত গুণী ব্যক্তিদের ‘ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ’ উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ বলেন, এমন ত্যাগী ব্যক্তিদের অবদানে আমাদের কৃষি এগিয়ে চলেছে। কৃষিকে সামনে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী সবসময় বাজেটে কৃষিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন, ভর্তুকি অব্যাহত রেখেছেন।

বিশেষ অতিথি প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শুধু কৃষির তাগিদই দেননি, তিনি নিজেও গণভবনে কৃষি কাজ করেন। আমরা শাইখ সিরাজ সাহেবের অনুষ্ঠানে তা দেখেছি। এই সরকার কৃষিকে প্রাধান্য দিয়েই দেশ পরিচালনা করছে।

এআইপি সম্মাননা গ্রহণের পর অনুভুতি জানিয়ে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ বলেন, সরকার কৃষিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে বলেই কোভিড ও বিশ্বসংকটে আমাদের দেশে খাদ্য ঘাটতি হয়নি। তবে আরও পরিকল্পিতভাবে কৃষিকে আধুনিকায়ন করা হলে কৃষির মাধ্যমেই দেশে সমৃদ্ধি আসবে।

এআইপি নীতিমালা-২০১৯ এর আলোকে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৫টি ক্যাটাগরিতে ব্যক্তি এবং নিবন্ধিত কৃষি সংগঠন শ্রেণিতে যারা সন্মাননা পেলেন, তারা হলেন- কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, পরিবেশবিষয়ক সংগঠক হিসেবে চট্টগ্রামভিত্তিক সংগঠন তিলোত্তমার প্রতিষ্ঠাতা সাহেলা আবেদীন এবং সমবায় উদ্যোক্তা হিসেবে সাতক্ষীরার ধানদিয়া সিআইজি মহিলা সমবায় সমিতির সভাপতি শিখা রানী চক্রবর্তী।

জাত বা প্রযুক্তি উদ্ভাবন শ্রেণিতে নির্বাচিত ব্যক্তিরা হলেন- এসিআই অ্যাগ্রিবিজনেসের প্রেসিডেন্ট একেএম ফারায়েজুল হক আনসারী, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বিষমুক্ত নিরাপদ সবজির কৃষি উদ্যোক্তা এমএ মতিন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য চুয়াডাঙ্গার জনতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. ওলি উল্লাহ এবং জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের জন্য বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাশ।

কৃষি উৎপাদন, বাণিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প শ্রেণিতে ১০ জন এআইপি হয়েছেন। তারা হলেন- উন্নতজাতের ফলচাষের জন্য টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের কৃষি উদ্যোক্তা মো. ছানোয়ার হোসেন, পেঁয়াজ বীজ চাষের জন্য ফরিদপুরের খান বীজ ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী শাহীদা বেগম, সাথী ফসল উৎপাদন করে জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য খুলনার ডুমুরিয়ার কৃষি উদ্যোক্তা সুরেশ্বর মল্লিক, ফলচাষের জন্য চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের গ্রিন প্ল্যানেট অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী মো. রুহুল আমীন, জলাবদ্ধতা নিরসণে কাজ করায় সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার অ্যাগ্রো বেইজড সোশিও ইকোনমিক্যাল ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেসের চেয়ারম্যান মো. সাখাওয়াত হোসেন, দুগ্ধ উৎপাদনে পাবনার ঈশ্বরদীর তন্ময় ডেইরি খামারের স্বত্বাধিকারী মো. আমিরুল ইসলাম।

মাছ চাষে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আল বারাকা মৎস্য খামার অ্যান্ড হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী মাছুদুল হক চৌধুরী, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মৌচাষী কৃষি উদ্যোক্তা মো. রফিকুল ইসলাম, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের ফলচাষী সিরাজ বহুমুখী খামারের স্বত্বাধিকারী মো. সিরাজুল ইসলাম এবং শেরপুর সদর উপজেলার ফলচাষী মা-বাবার দোয়া ফ্রুট গার্ডেন নার্সারি অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো. হযরত আলী।

রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্য উৎপাদন শ্রেণিতে দুজন এআইপির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। বৃক্ষরোপণ ও বনসাই নার্সারীর জন্য গাজীপুর সদর উপজেলার লিভিং আর্ট গার্ডেনের পরিচালক কেএম সবুজ এবং বারোমাসি আম চাষি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের কৃষি উদ্যোক্তা মোহা. রফিকুল ইসলাম।

বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শ্রেণিতে তিনজনকে এআইপি নির্বাচন করা হয়েছে। জৈবসার ও কেঁচোসার উৎপাদক নীলফামারীর ডোমার উপজেলার অন্নপূর্ণা অ্যাগ্রো সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী রাম নিবাস আগরওয়ালা, বাণিজ্যিক কৃষি খামারি হিসেবে ঢাকার নবাবগঞ্জের অমিত ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী মায়া রানী বাউল ও সফল বীজ উৎপাদকারী পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা মো. আবদুল খালেক।

এআইপি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি বছর মোট ৫টি বিভাগে এআইপি সম্মাননা প্রদান করা হয়। এআইপি কার্ডের মেয়াদকাল হচ্ছে এক বছর। এআইপিরা সিআইপিদের মতো সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন।

তাদের সুযোগ সুবিধার মধ্যে রয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রশংসাপত্র, বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য প্রবেশ পাস, বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ; বিমান, রেল, সড়ক ও জলপথে ভ্রমণকালীন সরকার পরিচালিত গণপরিবহণে আসন সংরক্ষণ অগ্রাধিকার; নিজের ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালের কেবিন সুবিধা প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার পাবেন এবং বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার সুবিধা।

কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০১৯ সালে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। তার আলোকে প্রথমবার ২০২০ সাল থেকে দেয়া হচ্ছে এ সম্মাননা। ২০২০ সালে এআইপি পেয়েছিলেন ১৩ জন।