
কোটা সংস্কারের ন্যায্যতা, সংক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের আবেগ ও অনুভূতিকে পুঁজি করে তাদের আন্দোলনে স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তির অনুপ্রবেশ, মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কটুক্তি করে ’৭১-এ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহযোগী গণহত্যাকারী, নারী ধর্ষণকারী রাজাকারদের মহিমান্বিত করে স্লোগান দেয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক লেখক-সাংবাদিক শওকত বাঙালি বলেছেন, সরকারি চাকুরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারের জন্য শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে আরম্ভ হলেও সুযোগ বুঝে বিএনপি-জামায়াত চক্র বাইরে থেকে সমর্থনের কথা বলে তরুণদের একটি ন্যায়সঙ্গত ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে পরিণত করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এতে অনুপ্রবেশ করে। জামায়াত-বিএনপি ছাত্রকর্মীরা দলনিরপেক্ষ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুযোগে বিভিন্ন সময়ে সড়ক অবরোধ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিরোধ ও সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ে।
কোটা আন্দোলন শুরুতে ন্যায্য আন্দোলন ছিলো উল্লেখ করে সাংবাদিক শওকত বাঙালি আরও বলেন, আমরা এ আন্দোলনের প্রতি সংবেদনশীল ছিলাম এবং আন্দোলনকারীদের বার বার সতর্ক করার পরও আন্দোলন কখন ছিনতাই হয়ে গেছে আমার মেধাবী শিক্ষার্থীরা বুঝতেই পারেননি। তারা বিএনপি-জামায়াতের পাতা ফাঁদে পা দিয়েই আন্দোলনকে শুধু প্রশ্নবিদ্ধই করেননি পুরো দেশকে রক্তাক্ত করেছেন। এতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের যে কোন সচেতন নাগরিক ক্ষুব্ধ এবং ব্যথিত হয়েছেন।
শওকত বাঙালি জামায়াতের বর্বর ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, তারা যখনই সুযোগ পেয়েছে তখনই ছাত্রদের উপর গুলি করেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের গলাকাটা, রগকাটা থেকে হত্যা করা-সব জামায়াতের রাজনীতির ধারাবাহিক অংশ। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৪ সালে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জামায়াত হামলে পড়েছিলো সাধারণ ছাত্রদের উপর, নির্মূল কমিটির নিরস্ত্র নেতৃবৃন্দের উপর। প্রায় ৩০ বছর অতিক্রান্ত হলেও এটির কোনো বিচার হয়নি। শাস্তি পায়নি কেউ-ই। ৩০ বছর পর আমরা আবারো জোর দাবি জানাই, অনতিবিলম্বে এটির সুষ্ঠু তদন্ত শেষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
১৯৯৪ সালের ২৬ জুলাই একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহ্বানে চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে শীর্ষ রাজাকার নরঘাতক গোলাম আযমকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে ৫ শহীদের স্মরণে প্রতিবছরের মতো এবারও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, চট্টগ্রামের উদ্যোগে আয়োজিত “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিনাশী যাত্রায় দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র : সচেতন নাগরিক সমাজের করণীয়”-শীর্ষক আলোচনা সভায় শওকত বাঙালি প্রধান বক্তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

প্রধান আলোচক চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি-জামায়াত চক্র সংঘাত ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি প্রভুদের সহযোগিতায় ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। নানা সময়ে ছাত্র ও জনতার বিভিন্ন ন্যায়সঙ্গত ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনে তারা অনুপ্রবেশকারী হিসেবে সেগুলোকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে ’৭১-এ পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণের পাশাপাশি বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বানাতে চাইছে।
মুখ্য আলোচক প্রফেসর ড. সেকান্দর চৌধুরী বলেন, দলনিরপেক্ষ ছাত্ররা কোটা সংস্কারবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিলো এবং কোনো রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা এটি ছিলোনা। বিএনপি-জামায়াত শুরুতে এ আন্দোলনে সমর্থন দেয় এবং পরবর্তীতে অবস্থা বুঝে আন্দোলনে ঢুকে পড়েছে। সবচে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাদীপ্ত ঐতিহাসিক স্লোগান তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি’কে বিকৃত করে তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ এ স্লোগানের মাধ্যমে জামায়াত আন্দোলনটি কুক্ষিগত করেই ক্ষান্ত হয়নি গৃহযুদ্ধের দামামা বাজিয়ে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ দেয়ার অপচেষ্টা চালায় এবং নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরী করে সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটায়।
সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট সৈয়দ কামাল উদ্দিন বলেন, আন্দোলরত শিক্ষার্থীরা নিজেদের রাজাকার দাবি করার যে উদগ্র বাসনার কুৎসিত বহিঃপ্রকাশ দেখিয়েছে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। যারা মুক্তিযুদ্ধ ও একাত্তরের বীর শহীদদের সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেছে, নিজেদের রাজাকার বলে স্লোগান দিয়েছে তারা রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবিও জানান তিনি।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে শুক্রবার (২৬ জুলাই )বিকেল ৪টায় চেরাগী পাহাড়স্থ বঙ্গবন্ধু ভবনের তৃতীয় তলায় চট্টলবন্ধু এস.এম জামাল উদ্দিন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন গো. আযম প্রতিরোধ আন্দোলনের বীর সেনানী ,মহানগর ছাত্রলীগের সংগ্রামী সভাপতি ও বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক জননেতা মফিজুর রহমান। মুখ্য আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী। পরিবারের পক্ষে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন সেদিন শহীদ এহসানুল হক মণির মামা-বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, চট্টগ্রাম জেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর আহমদ। সম্মানিত আলোচক ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা জামশেদুল আলম চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা কিরণ লাল আচার্য্য, যুদ্ধাপরাধী মামলার স্বাক্ষী দেবব্রত সরকার দেবু। প্রধান বক্তা ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি লেখক-সাংবাদিক শওকত বাঙালি।
সংগঠনের চট্টগ্রাম জেলার সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আলহাজ্ব সৈয়দ কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সহ-সাধারণ সম্পাদক এম.এ মান্নান শিমুলের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন- সংগঠনের কেন্দ্রীয় বিভাগীয় সম্পাদক আবু সাদাত মো. সায়েম, জেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এ.কে.এম জাবেদুল আলম সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক রুবা আহসান, সহ-সাধারণ সম্পাদক কাজী মুহাম্মদ রাজিশ ইমরান, দেবাশীষ আচার্য্য, মিথুন মল্লিক, সূচিত্রা গুহ টুম্পা, মো. রুবেল আহমেদ বাবু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবু সুফিয়ান, অর্থ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুবেল পাল, সহ-অর্থ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রক্তিম বিশ্বাস, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শিক্ষিকা সৈয়দা তাহমীনা সুলতানা, সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক কানিজ ফাতেমা লিমা, প্রচার ও গণমাধ্যম সম্পাদক আহমেদ কুতুব, সহ-প্রচার ও গণমাধ্যম সম্পাদক রুবেল চৌধুরী, প্রকাশনা সম্পাদক রাজীব চৌধুরী রাজু, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অনিন্দ্য মজুমদার অথৈ, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুমন শাহেদ সিদ্দিকী, কার্যনির্বাহী সদস্য মো. শওকত উল ইসলাম খান, জয়নুদ্দীন আহম্মদ জয়, লুৎফর রহমান জুয়েল, অনিন্দ্য দেব, মো. রায়হান, ডবলমুরিং থানার ইকবাল হোসেন খোকন, আলোকচিত্রী মো. আসিফ ইকবাল, টুটুল দাশ, সুদ্বীপ শর্মা প্রমুখ।
আলোচনা সভার পূর্বে বাদ জুমা সংগঠন নেতৃবৃন্দ চৈতন্যগলি কবরস্থানে শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পন করে জেয়ারতে অংশ নেন।