রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিপদ এড়াতে সাবধানতার সঙ্গে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের বিকল্প নেই

বিশেষ প্রতিবেদক

দেশের বিভিন্ন স্থানে বাসা-বাড়ি, হোটেল-রেস্টুরেন্ট এমনকি সিএনজি স্টেশনগুলোসহ সিএনজিচালিত গাড়িগুলোতে অহরহ সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বহু মানুষ দগ্ধ হয়ে মারা যাচ্ছে। আবার অনেকে দগ্ধ হয়ে সারা জীবনের জন্য অচল হয়ে পড়ছে। তাদের দেখার কেউ থাকে না। রাজধানীতে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে এ ধরনের বহু রোগীর আর্তচিৎকার  শোনা যায়। প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়। রাজধানীর বাইরে অবস্থানরত একটি পাঁচতলা বাড়ির দোতলায় থাকে একটি পরিবার। তিতাস গ্যাস লাইনে গ্যাস না থাকার কারণে সদ্যই গ্যাস সিলিন্ডারের কানেকশন নিয়েছে পরিবারটি। কিন্তু ব্যবহার করতে গিয়ে প্রবল সমস্যায় পড়তে হয় বলে তারা গ্যাস মিস্ত্রিকে খবর দেন। মিস্ত্রি সন্ধ্যায় গ্যাস লাইন চালু করতে এসে আচমকা দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। বিকট শব্দে গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ ঘটে। আগুন ধরে বাড়ির অনেকেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে পরবর্তীতে মিস্ত্রিসহ বাড়ির ৪ জন মারা যান। এ ধরনের বহু ঘটনা ঘটতে শোনা যায় প্রায়ই।

দেশের বিভিন্ন এলাকা বা হোটেল-রেস্টুরেন্টে গ্যাস না থাকার কারণে এলপিজি সিলিন্ডারের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে দুর্ঘটনার পরিমাণও বেড়েই চলছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। তবে সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে সাবধানতার সঙ্গে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের বিকল্প নেই। রাস্তার ধারে হোটেল-রেস্টুরেন্টে যত্রতত্রভাবে সিলিন্ডারগুলো ব্যবহার করা হয়। তাতে অনেক ক্ষেত্রে অহরহ দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া নিম্নমানের সিলিন্ডার ও গ্যাসের কারণে অনেক ক্ষেত্রে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে থাকে। তবে অধিকাংশ ব্যবহারকারীর এসব বিষয় সম্পর্কে তেমন কোনো অভিজ্ঞতা বা ধারণা  না থাকার কারণে একের পর এক এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে কি ধরনের বিপদ হতে পারে সে সম্পর্কে এবং সাধারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন করার বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসকে কাজে লাগানো যেতে পারে।bsrm

গ্যাসের জন্য বাড়ি-ঘরের পরিবারদের কষ্টের হাহাকার কে দেখবে? এমনিতে চাহিদা মতো গ্যাস দিতে পারে না, তারপরও তিতাস গ্যাস কোম্পানি গ্যাস বিলের জন্য চাপ দিচ্ছে নয়তো গ্যাস লাইন কেটে দেওয়ার হুমকি দেয় এই দুর্দিনে। অথচ তিতাস গ্যাস কোম্পানি বৈধ গ্যাসধারীদের পরিবর্তে অবৈধ গ্যাসধারীদের পক্ষে কাজ করে। রান্না থেকে জাতীয় অর্থনীতির সব ক্ষেত্রে গ্যাসের প্রয়োজন অপরিহার্য। মাসে মাসে গ্যাসের বিল দেওয়ার পরও কর্তৃপক্ষ তিতাস গ্যাস সরবরাহ করছে না। সিন্ডিকেটের দাপটে সিলিন্ডার গ্যাসের দামও দিন দিন হু হু করে বাড়ছে।

মনে রাখা উচিত সিলিন্ডার সাধারণত অনুপযুক্ত জায়গায় রাখা ঠিক নয়। সূর্যের প্রচণ্ড তাপে বা দাহ্য পদার্থের কাছাকাছি বা নিকটে গ্যাস সিলিন্ডার রাখলে বিপদ বা দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সংযোগে কোনো প্রকার ত্রুটি বা লিকেজ থাকলে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হতে পারে। মূলত গ্যাস সিলিন্ডার এক ধরনের বোমা। কাজের লোক বা বুয়াদের অজ্ঞতার কারণেও রান্নাঘরে যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। সে জন্য বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাস সিলিন্ডার প্রয়োজনীয় হলেও বিপজ্জনক, যা সাবধানে ব্যবহার করা উচিত। বাংলাদেশে প্রচলিত গ্যাস সিলিন্ডারগুলো মানসম্মত হলেও এর এক বড় অংশ নিম্নমানের যন্ত্রাংশ অথবা মেয়াদোত্তীর্ণ, যা বাজারে বেচা-কেনা হচ্ছে। দেখা বা নজরদারির অভাবের কারণেও এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে।

উল্লেখ্য, গ্যাস সিলিন্ডার কোনোভাবেই চুলা বা আগুনের কাছাকাছি রাখা ঠিক নয়। এটা সর্বত্র খোলামেলা জায়গায় এমনকি সমতল জায়গায় রাখা শ্রেয়। কোনোক্রমেই সিলিন্ডারের ওপরে ভারি কিছু বা কাত করে রাখা যাবে না এবং কোনো কিছুর সঙ্গে সিলিন্ডারের ধাক্কা না লাগে সেটা নিশ্চিত করতে হবে! গাড়ির সিলিন্ডার এবং সিএনজি স্টেশনগুলো আরও বেশি বিপজ্জনক। সিএনজি স্টেশনগুলোর অসাবধানতার কারণে বিস্ফোরণ হলে সেখানে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। বাসাবাড়ি ও হোটেল-রেস্টুরেন্টে গ্যাসের চুলা জ্বালানোর আগে চুলা খোলা রয়েছে কি-না, তা দেখে নিলে অনেক ক্ষেত্রে  দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলা সম্ভব। বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বসতবাড়ি, যানবাহনে, নদীতে নৌকা বা ট্রলারে অহরহ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হতে দেখা যায়। তাই যে কোনো অবস্থায় গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। হাসপাতালে গেলে দেখা যায় জীবন মৃত্যুর সঙ্গে অনেকে কিভাবে লড়াই করছেন। সতর্ক ও সচেতনতার মধ্য দিয়ে সকলকে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করার অনুরোধ জানাই।ads din

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও