বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
চারযুগ ধরে অনুষ্ঠিত বর্ষবরণ থমকে গেল

ডিসি হিলের নজরুল স্কয়ারে কেবলই শূন্যতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম ডিসি হিলের নজরুল স্কয়ার বাংলা নববর্ষের ভোরে প্রায় চারযুগ ধরে যেখানে লাখো মানুষের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠত, সেই চেনা প্রাঙ্গণ আজ (সোমবার) সকালে জনশূন্য। নেই কোনো মঞ্চ, বর্ষবরণের চিরাচরিত আয়োজন নেই । কেবল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) কর্মীরা পরিষ্কার করছেন আগের রাতে ঘটে যাওয়া তাণ্ডবের চিহ্ন।

গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তদের মঞ্চ ভাঙচুরের পর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী এই বর্ষবরণ আয়োজন বাতিল করেছে সম্মিলিত পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন পরিষদ। ফলে, প্রায় চার যুগের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ডিসি হিলে পয়লা বৈশাখের দিনে বিরাজ করছে এক অপ্রত্যাশিত শূন্যতা।bsrm

যেখানে সোমবার সকালে থাকার কথা ছিল মানুষের ঢল, গান-বাজনা আর উৎসবের আমেজ, সেখানে সকাল সাড়ে ৮টায় দেখা গেল এক ভিন্ন চিত্র। নজরুল স্কয়ার ফাঁকা, রাতের আঁধারে সরিয়ে নেয়া হয়েছে ভাঙচুর হওয়া মঞ্চটি। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভাঙা চেয়ার আর আবর্জনা সরাচ্ছেন চসিক কর্মীরা। ৪৭ বছরের নিরবচ্ছিন্ন ঐতিহ্য থেমে যাওয়ায় স্থানীয় সংস্কৃতি কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নেমে এসেছে হতাশার ছায়া।

ঘটনার সূত্রপাত রবিবার সন্ধ্যায়। সোয়া সাতটার দিকে ৪০-৫০ জনের একটি দল সরকারবিরোধী স্লোগান (“হাসিনার দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান”, “হাসিনার ফাঁসি চাই”) দিতে দিতে অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়ে। তারা মঞ্চ, চেয়ার-টেবিল, ব্যানার ও শিল্পীদের জন্য তৈরি করা কক্ষ ভাঙচুর করে। প্রায় ১৫ মিনিটের এই তাণ্ডবের পর তারা চলে যায়।

সম্মিলিত পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন পরিষদের অভিযোগ, প্রশাসনের অসহযোগিতা এবং একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর আপত্তির কারণেই এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে এবং ঐতিহ্যবাহী আয়োজনটি বন্ধ করতে হলো।ads din

পরিষদের সদস্যসচিব মোহাম্মদ আলী জানান, ভাঙচুরের আগে প্রশাসন থেকে ২০টি সংগঠনকে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’আখ্যা দিয়ে অনুষ্ঠানে নিষিদ্ধ করার তালিকা দেয়া হয়েছিল। তার অভিযোগ, যারা এই নিষেধাজ্ঞা চেয়েছিল, তারাই হামলা চালিয়েছে।

এর আগে রবিবার সকালেই জাসাস ও বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলো ‘সম্মিলিত বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপন মঞ্চ’ ব্যানারে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে এবং কিছু সংগঠনকে নিষিদ্ধের দাবিতে স্মারকলিপি দেয়।

আয়োজক কমিটির সমন্বয়ক সুচরিত দাশ প্রশাসনের অসহযোগিতাকে দায়ী করে বলেন, “এভাবে আর অনুষ্ঠান করা যায় না। যারা বিভিন্ন সংগঠনের নামে অভিযোগ দিয়েছে, তারাই এই ভাঙচুর করেছে।” তিনি অনুষ্ঠান বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানান।

অন্যদিকে, জাসাস নেতা মামুনুর রশিদ (শিপন) স্মারকলিপি দেয়ার কথা স্বীকার করলেও ভাঙচুরের বিষয়ে অবগত নন বলে দাবি করেছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে এবং এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৬ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

কিন্তু সবকিছুর পর যা সত্যি, তা হলো – ভাঙচুরের কারণে চট্টগ্রামের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক আয়োজন, ৪৭ বছরের ঐতিহ্যমণ্ডিত ডিসি হিলের বর্ষবরণ উৎসব এবার আর হচ্ছে না। আজ কেবলই শূন্যতা আর একরাশ হতাশা  ডিসি হিলের নজরুল স্কয়ার জুড়ে ।

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও