শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
জেলাপ্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার পরও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন

খড়কুটো ধরে জাহাঙ্গীর চৌধুরী কতদিন থাকবেন  ডায়াবেটিক হাসপাতালে

জাহাঙ্গীর চৌধুরীর কাছে কৈফিয়ত তলব করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন
মোহাম্মদ ইউসুফ

আইনগত কোনো ভিত্তি নেই, বৈধতা নেই ,২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে কমিটির সমাজসেবা অধিদপ্তরের অনুমোদন নেই। তদন্তে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় চট্টগ্রাম সমাজসেবা অধিদপ্তর যে কমিটিকে বহিস্কার করে প্রশাসক নিয়োগ দেয়, সেই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাবেক সভাপতি নিজেকে সভাপতি হিসেবে কীভাবে উচ্চআদালতে রিট পিটিশনের মাধ্যমে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি স্থগিত করে- তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ,হাসপাতালের আজীবন সদস্যরাসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই হতবাক। সরকারি নথিপত্রে তিনি চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির সাবেক সভাপতি। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে তার নামে যেসব চিঠি ইস্যু করা হচ্ছে সেখানে তাকে সাবেক সভাপতি হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। তারপরও তিনি নিজেকে সভাপতি দাবি করে আসছেন। প্রিন্ট-ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় হাসপাতালের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে অনবরত মিথ্যা বয়ান দিয়ে যাচ্ছেন। নিজের অনুকূলে পত্রিকায় ফরমায়েসী সংবাদ ছাপিয়ে তা ফেসবুকে আপলোড করে সবাইকে জানানোর চেষ্টা করছেন যে, তিনিই চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি। আবার তিনি গণমাধ্যমে এমনও বলেছেন, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির কমিটির কোনো অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। আইন-কানুন মানতে তিনি নারাজ। অথচ ১৯৭৮ সাল থেকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন নিয়ে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতি এ হাসপাতাল পরিচালনা করছে। এতক্ষণ ধরে যার অনিয়ম-দুর্নীতি,প্রতারণা ও মিথ্যাচারের গল্প বলা হচ্ছে তিনি হচ্ছেন চট্টগ্রাম সমাজসেবা অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তদন্তে প্রমাণিত দুর্নীতিবাজ,চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের স্বঘোষিত মা-বাপ, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির অননুমোদিত ও বহিস্কৃত সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরী। চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশনও তার বিরুদ্ধে আনীত কোটি কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের অনুদানের আত্মসাৎকৃত সাড়ে ২৭ লাখ টাকা গত ২০ এপ্রিল সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত তিনি জমা দেননি। তার দুর্নীতির কারণে স্বাস্থ্যমন্ত্রক প্রতিবছর ডায়াবেটিক হাসপাতালকে যে দুই কোটি টাকা অনুদান দিতো তা বন্ধ করে দেয়। তার বিরুদ্ধে অতীতেও বহুবার বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় অর্থ কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশ, মানববন্ধন থেকে শুরু করে একাধিকবার তদন্ত হয়। কিন্তু বরাবরের মতো তিনি নানা ফন্দিফিকির অবলম্বন করে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসেন।

চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতাল সমিতির আজীবন সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কথা। কিন্তু জাহাঙ্গীর চৌধুরী সমিতির সংবিধান নিজের মতো সংশোধনের মাধ্যমে সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত করে দীর্ঘ ২১ বছর ধরে পকেট কমিটি দিয়ে হাসপাতাল চালাচ্ছেন। মূলত তিনিই হাসপাতালের হর্তা-কর্তা-বিধাতা। হাসপাতালের টাকায় কয়েক হাজার আজীবন সদস্য করে তৈরি করেছেন নিজস্ব ভোটব্যাংক।  যাতে আমৃত্যু হাসপাতালকে নিজের করায়ত্বে রাখা যায়। তাই অন্যকারো এখানে নির্বাচন করার মতো পরিবেশ নেই। ফলে এখানে ইলেকশন নয় সিলেকশনের মাধ্যমে সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠিত হয়। বৈধতার জন্যে পত্রিকায় লোকদেখানো নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়। প্রতিবারই জাহাঙ্গীর চৌধুরীর পরিষদ বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। বন্ধুবান্ধব ও অনুগত ঘনিষ্ঠজনদের দিয়ে তিনি হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেন। হাসপাতালটি যে জাহাঙ্গীর চৌধুরীর প্রেসক্রিপশনে চলছে এবং এটিকে নিজের আখের গোছানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন- তা চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারি, আজীবন সদস্যদের প্রায় সকলেই জানেন। ফলে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আহবান করা হলে ৫হাজারের অধিক আজীবন সদস্যের মধ্যে ৪০/৫০ জনের বেশি সদস্য উপস্থিত থাকেন না। হাসপাতালের কর্মচারি ও ভাড়াটে লোক দিয়ে অনুষ্ঠিত এজিএম এর খবর পত্রপত্রিকায় ছাপানো হয়।bsrm

প্রতিবারের মতো এবারও জাহাঙ্গীর চৌধুরী পত্রিকায় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেন । যেহেতু তিনি সমিতির বৈধ সভাপতি নন, তার নির্বাচন পরিচালনা করার কোনো আইনগত অধিকার নেই, তাই  চট্টগ্রাম সমাজসেবা অধিদপ্তর নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে। গত ৫ অক্টোবর ২০২৪ জাহাঙ্গীর চৌধুরী নির্বাচনের আয়োজন করতে না পেরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের আদেশ অমান্য করে অবৈধভাবে পকেট কমিটি গঠন করে সেটির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। দীর্ঘসময় ধরে হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারিরা তার অনিয়ম, দুর্নীতি,অত্যাচার সহ্য করে আসলেও তা সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় শেষমেশ তারাও প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। ১৪ দফা দাবী নিয়ে তারা আন্দোলন শুরু করেন। সেদিন “দুর্নীতিবাজ, অত্যাচারী ফ্যাসিস্ট জাহাঙ্গীর চৌধুরীর ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল থেকে পদত্যাগ চাই” লেখা ব্যানার নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা জাহাঙ্গীর চৌধুরীর ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। তাদের প্রতিরোধের মুখে ৫ অক্টোবরের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বানচাল হয়ে যায়। উত্তেজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের চাপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তার দুর্নীতির সহযোগী হাসপাতাল পরিচালক নওশাদ আজগর চৌধুরী, প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমান উল্লাহ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল ও নিরীক্ষা কর্মকর্তা ইয়াছিন চৌধুরী; শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত হন তারা। সেনাবাহিনী ও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে সেনা ও পুলিশ পাহারায় অবরুদ্ধ কর্মকর্তারা হাসপাতাল ত্যাগ করেন। আত্মরক্ষার্থে তার অন্য অনুসারীরাও পালিয়ে যান।  বিক্ষুব্দ কর্মচারিরা এসয়ময় জাহাঙ্গীর চৌধুরীর প্রতিকৃতিতে থুথু ও জুতো নিক্ষেপ করেন এবং তাকে হাসপাতালে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়।  গত ৫ অক্টোবর থেকে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা স্বঘোষিত কার্যকরী কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরী গং এর পদত্যাগের দাবিতে হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল,মানববন্ধন র‌্যালি ও রাস্তায় ব্যারিকেড পর্যন্ত দেয়া হয়। ১৪ অক্টোবর ২০২৪ এর মধ্যে হাসপাতালে প্রশাসক নিয়োগ না দেয়া হলে ১৫ অক্টোবর থেকে চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারিরা লাগাতার কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বহিস্কৃত সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর পদত্যাগ ও হাসপাতালে প্রশাসক নিয়োগের দাবীতে গত ১২ অক্টোবর হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারিরা সকাল ৯টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন। এসময় তারা একটি র‌্যালি বের করেন। হাসপাতাল থেকে র‌্যালিটি ফয়’সলেক গেট এবং সেখান থেকে ওয়ারলেস পর্যন্ত এসে আবার হাসপাতালে গিয়ে শেষ হয়। হাসপাতালের এ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে পেরে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ডায়াবেটিক হাসপাতালে ছুটে যান এবং আন্দোলনরত চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সাথে বৈঠকে মিলিত হন। সিভিল সার্জন তাদের উদ্দেশে বলেন, “আপনাদের দাবীসমূহ যৌক্তিক। আপনাদের চলমান আন্দোলনের খবর মন্ত্রণালয়সহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই, আমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আপনাদের সাথে সরাসরি দেখা করতে এসেছি। আমি আপনাদের সাথে আছি। আপনারা আমার সাথে একমত আছেন তো? সবাই একযোগে হাত তুলে সিভিল সার্জনকে সমর্থন জানান। শিগগির তিনি সকলকে একটি সুখবর দেয়ার আশ্বাস দেন।

এদিকে হাসপাতালের আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারিরা ২৪ঘন্টা সতর্ক পাহারায় ছিলেন যাতে জাহাঙ্গীর চৌধুরী হাসপাতালে ঢুকতে না পারেন। জাহাঙ্গীর চৌধুরীও চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আন্দোলন থামানোর জন্যে নানা অপকৌশল অবলম্বন করেন। বিভিন্ন বাহিনী দিয়ে সভাসমাবেশ পণ্ড করার অপপ্রয়াস চালান। এ পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চট্টগ্রাম জেলাপ্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিট্রেটকে আহবায়ক ও চট্টগ্রাম সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফরিদুল আলমকে সদস্যসচিব করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। চট্টগ্রাম জেলাপ্রশাসক ফরিদা খানম স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে বলা হয়,মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নম্বর-১৬১০/২০২৩ চলমান থাকায় এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হাসপাতালের আজীবন সদস্যবৃন্দ, ডাক্তার,কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থাকায় চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্যে এ আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলো চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনারের প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ও চট্টগ্রাম হালিশহর সেনানিবাসের ৩৩ এডি ব্যাটারি আর্টিলারির  অধিনায়ক এর প্রতিনিধি।ads din

এদিকে যেসব কর্মচারিনেতা গত ৫ অক্টোবর জাহাঙ্গীর চৌধুরীর ছবিতে থুথু ও জুতো নিক্ষেপ এবং হাসপাতালে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে এবং তার অনুগত কর্মকর্তাদের হাসপাতাল থেকে বিতাড়িত করে সেসব নেতাকে ‘ম্যানেজ’ করে গত ২৮ অক্টোবর  তিনি (জাহাঙ্গীর চৌধুরী) বহিরাগত লোকজন নিয়ে হাসপাতালে ঢুকে বিরোচিতভাবে ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিষিক্ত হন। তার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী ডাক্তার,কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। একদিকে সাধারণ ক্ষমা অন্যদিকে তার লেলিয়ে দেয়া কর্মচারিরা তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার অপারাধে জিন্নাত আরা পপি নামে এক নার্সকে ব্যাপক মারপিট করে গুরুতরভাবে আহত করে। ৫ অক্টোবর থেকে হাসপাতাল ছিল জাহাঙ্গীরমুক্ত । কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল হাসপাতাল। আর্থিক কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি। আয়-উপার্জন অতীতের তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে। কিন্তু ২৮ অক্টোবর থেকে হাসপাতাল ফের জাহাঙ্গীর চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তার অনুগত কর্মচারিরা টাকা-পয়সা গুণছেন। আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি আগের অবস্থায় ফিরে যায়। জেলাপ্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার পরও তিনি গত ৬নভেম্বর হাসপাতালে গিয়ে অনুগত কর্মকমর্তা-কর্মচারিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। চট্টগ্রাম সমাজসেবা অধিদপ্তর, ডিসি অফিস, সিভিল সার্জন অফিসসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধ পন্থায় হাসপাতালকে নিজের কব্জায় রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেছেন।

অন্যদিকে হাসপাতালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর জন্যে জাহাঙ্গীর চৌধুরীর কাছে কৈফিয়ত তলব করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের আইনশৃঙ্খলা কমিটির আহবায়ক সৈয়দ মাহবুবুল হক  ৬ নভেম্বর ২০২৪ স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে বলা হয়, সমাজসেবা অধিদপ্তরাধীন নিবন্ধিত সংস্থা চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চট্টগ্রাম সমাজসেবা অধিদপ্তর ১৯৬১ সালের ৪৬ নম্বর অধ্যাদেশ অনুযায়ী স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ(রেজিস্ট্রেশন ও নিয়ন্ত্রণ)এর ধারা ৯ এর উপধারা(১) মোতাবেক বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদ সাময়িক বরখাস্তপূর্বক স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ (রেজিস্ট্রেশন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর ৯(২) উপধারা মোতাবেক মোস্তফা মোস্তাকুর রহিম খান, অতিরিক্ত পরিচালক, বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়, চট্টগ্রামকে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। এ আদেশের বিরুদ্ধে রিট পিটিশন করা হলে মহামান্য হাইকোর্ট থেকে ২০২৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ৬ মাসের একটি স্টে অর্ডার করা হয়। পরবর্তীতে স্টে অর্ডারটি ৬ মাস থেকে ১বছর বাড়ানো হয়। তবে এ সংক্রান্ত কোনো আদেশের কপি বিজ্ঞ আদালত থেকে এ কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। এ কার্যালয়ে সংরক্ষিত নথি অনুযায়ী চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির সর্বশেষ অনুমোদিত কমিটি গত ৩১.১২. ২০১৫ তারিখে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়। এরপর অদ্যবধি কোনো কমিটির অনুমোদন নেই।

চিঠিতে আরও বলা হয়, “চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের আজীবন সদস্যবৃন্দ, ডাক্তার ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশংকা থাকায় হাসপাতালের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও রোগীদের সেবাকার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে জেলাপ্রশাসক ও জেলা মেজিস্ট্রেট কর্তৃক একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে আপনি ২৮.১০.২৪ তারিখে হাসপাতাল অভ্যন্তরে ঢুকে আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটানোর বিষয়ে আপনাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছিল। তারপরও আপনি আবার আপনার দলবল নিয়ে অদ্য ৬.১১. ২০২৪ তারিখে হাসপাতালের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন-যা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। এতে করে জেলা প্রশাসনের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এমতাবস্থায় জেলা প্রশাসন কর্তৃক গঠিত আহবায়ক কমিটি বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও আপনি কেন বহিরাগত লোকজন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছেন তার সন্তোষজন ব্যাখ্যা আগামী ৫ (পাঁচ) কর্মদিবসের মধ্যে দেয়ার জন্যে বলা হলো।  তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জাহাঙ্গীর চৌধুরী চিটির জবাব দেননি বলে এডিএম সৈয়দ মাহবুবুল হক মুঠোফোনে চাটগাঁর বাণীকে বলেন। অবশ্য জবাব দেয়ার সময় এখনও আছে। আগামীকাল (১২ নভেম্বর) ৫ কর্মদিবস শেষ হবে।

চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের বেশকজন আজীবন সদস্যদের সাথে চাটগাঁর বাণীর কথা হয়। তারা বলেন, “জাহাঙ্গীর চৌধুরী উচ্চআদালতে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে রিট পিটিশন দিয়ে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি স্থগিত করে এখনো টিকে আছেন। অন্যথায় অনেক আগেই তিনি হাসপাতাল থেকে সরে যেতে বাধ্য হতেন। তার দুর্নীতি নিয়ে পত্রপত্রিকায় কম লেখালেখি তো হয়নি। এতো সমালোচনা ও গালাগাল শুনেও তিনি এখান থেকে সরতে চান না। কারণ, তার আয়ের একমাত্র উৎস এ হাসপাতাল। এটি দিয়ে তার সংসার চলে।” হাইকোর্টের রিট প্রসঙ্গে তারা বলেন, “২০১৫ সাল থেকে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির কমিটির সমাজসেবা অধিদপ্তরের অনুমোদন নেই। অর্থাৎ তিনি সাবেক সভাপতি। এই সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরী ২০২৩ সালে এসে কীভাবে সভাপতি হিসেবে হাইকোর্টে রিট করেন? এটি একটি বড় প্রতারণা ও জালিয়াতি। এ অপরাধের জন্যে তো তার জেলে থাকা উচিত।”

সমাজের সামর্থ্যবানদের দান-অনুদান ও দান-খয়রাতের টাকায় পরিচালিত সেবাধর্মী এ হাসপাতালে সুলভমূল্যে ডায়াবেটিক রোগীদের সেবাদানের কথা থাকলেও বাস্তবে হচ্ছে তার বিপরীত। ডায়াবেটিক রোগীদের এখানে প্রাইভেট হাসপাতালের মতো উচ্চমূল্যে চিকিৎসাসেবা নিতে হয়। বাণিজ্যিক হাসপাতালের মতোই চলছে সমিতির এ হাসপাতাল। আইসিইউ, সিসিইউ,এইচডিইউ ও গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাসেবা চালু থাকলেও সরকারি কোনো দপ্তরের অনুমোদন নেই। নেই কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। হাসপাতালের দৈনিক আয় ১০লাখ টাকার ওপরে। উপার্জিত টাকার ৫০% খরচ করা হলেও হাসপাতালের চেহারা পাল্টে যেতো। প্রয়োজনীয়সংখ্যক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রাখা যেতো, রোগনির্ণয়ের জন্যে উন্নতমানের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি থাকতো। রোগীরা পেতো উচ্চমানের চিকিৎসাসেবা। হাসপাতালের ফার্মেসী থেকে রোগীরা ন্যায্যমূল্যে ডায়াবেটিসের ওষুধপত্র কিনতে পারছে না।

লেখক- প্রধান-সম্পাদক, সাপ্তাহিক চাটগাঁর বাণী ও চাটগাঁরবাণীডটকম

 

 

 

সর্বশেষ

ফুল ফুটুক আর না ফুটুক, আজ বসন্ত

এই বিভাগের আরও