সোমবার, ১২ মে ২০২৫

চট্টগ্রামের পাহাড় ও পরিবেশ রক্ষায় একযোগে কাজ করতে হবে: মেয়র রেজাউল করিম

 চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৬ষ্ঠ নির্বিাচিত পরিষদের ৪০তম সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্য রাখছেন মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক *
পাহাড় কাটা বন্ধ এবং নদী-নালা-খালের ভূমি রক্ষাসহ চট্টগ্রামের পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আরো তৎপর হওয়ার আহবান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র (প্রতিমন্ত্রী) বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।

মঙ্গলবার ( ২৮ মে ) সকালে লালদিঘী পাড়স্থ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের সম্মেলন কক্ষে চসিকের ৬ষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের ৪০তম সাধারণ সভায় মেয়র প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগের ঘোষণা দেন।bsrm

মেয়র বলেন, শহরের সব পাহাড় কেটে ফেলা হচ্ছে। খাল-নালা দখল করে স্থাপনা উঠছে। পুকুর-জলাশয় ভরাট করছে একটি দুষ্টচক্র। পাহাড় কাটার ফলে পাহাড়ের মাটি গিয়ে নালা ভরাট হয়ে যাচ্ছে, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, মশার প্রজননক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে দেখেছি নালাগুলোতে পলিথিন এবং কর্কশিটের কারণে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে জনগণ ভোগান্তিতে পড়েছে। আমরা এ মৌসুমে ৫ লক্ষ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। তবে, চট্টগ্রামের পরিবেশ রক্ষা করতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিব।

বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে সিডিএ’র অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হওয়ার আহবান জানিয়ে মেয়র বলেন, নগরীর বায়েজিদে চন্দ্রনগরে একসময় বিশাল নাগিন পাহাড় ছিল। কাটতে কাটতে এটাকে অস্তিত্বহীন করে ফেলেছে। গতকাল ওখানে নির্মাণাধীন একটি ভবনের দেয়াল চাপা পড়ে একজন মারা গেছেন। এই ভবনের অনুমোদন আছে কী না তা দেখতে হবে। পাহাড় কেটে বা নদী-নালা-খাল ভরাট করে কেউ বাড়ি বানাতে চাইলে সে বাড়ির অনুমোদন দেয়া যাবেনা। এক্ষেত্রে সিডিএ’কে আরো তৎপর হতে হবে।

আসন্ন ঈদুল আযহার সময় পুলিশ বিভাগকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে মন্তব্য করে মেয়র বলেন, উচ্ছেদ অভিযানে পুলিশ বিভাগ আমাদেরকে অনেক সহায়তা করেছে। তবে, উচেছদের পর প্রতিটি থানা মনিটরিং করলে উদ্ধারকৃত ভূমি রক্ষা করা সহজ হতো কারণ চসিকের কোন ফোর্স নেই। যে কারণে উচ্ছেদ করার কিছুদিনের মধ্যেই আবারো উদ্ধারকৃত স্থান দখল হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। ঈদে যেহেতু শত-শত কোটি টাকার লেন-দেন হবে, মানুষ যাতায়াত করবে তাই নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশকে সজাগ থাকতে হবে।ads din

হকার উচ্ছেদের বিষয়ে মেয়র বলেন, ব্যাটারি রিকশার ব্যাপারে তড়িৎ পদক্ষেপ নিতে না পারায় শহরে দুর্ঘটনার বড় কারণ হয়ে উঠেছে ব্যাটারি রিকশা। অবৈধ হকারের বিষয়ে যদি আমরা ছাড় দিতে থাকি তাহলে ভবিষ্যতে অবৈধ হকাররাও নগরীর নিরাপত্তার বিষয়ে একই ধরনের জটিলতা তৈরি করবেন। দেখা যাচ্ছে, অবৈধ দোকানের কারণে রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে, মানুষ ফুটপাতে হাটতে পারছেনা। জনগণের স্বার্থেই আমি নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছি।

কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে মেয়র বলেন, আমরা কোরবানির দিন দ্রুততম সময়ে কোরবনির বর্জ্য অপসারণে পদক্ষেপ নিয়েছি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কোন সুপারভাইজারের গাফিলতি থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থ নিব। আবার যারা ভাল পারফরম্যান্স করবে তাদের পুরস্কৃত করব। কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে কাউন্সিলররা এ বিষয়ে কোন সুপারিশ করবেননা। নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে কাউন্সিলরদের কঠোর হতে হবে।

সভায় কাউন্সিলর গাজী মো. শফিউল আজিম অভিযোগ করেন, একটি সংঘবদ্ধ চক্র ১নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে প্রতিনিয়ত পাহাড় কেটে আবাসিক এলাকা গড়ে তুলছে এবং বনের গাছ কেটে নিয়ে যাচেছ। তিনি বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কামনা করেন। কাউন্সিলর ছালেহ আহম্মদ চৌধুরী উপকূলীয় ওয়ার্ডগুলোতে ওয়াসার পানি সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করার আহবান জানান। চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা লতিফুল হক কাজমি নালার উপর যাতে কেউ স্থাপনা নির্মাণ না করতে পারেন সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানান। কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল সিডিএ’র প্রতিনিধিকে লালখানবাজারে ফুটওভারব্রীজ নির্মাণে পদক্ষেপ গ্রহণর করতে বলেন। সভায় মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম হলিডে মার্কেটের ভূমি বরাদ্দের বিষয়ে গণপূর্ত এবং রেলওয়ের সাথে চসিক কাজ করছে বলে জানান।

সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্যানেল মেয়রবৃন্দ, কাউন্সিলরবৃন্দসহ চসিকের বিভাগীয় ও শাখা প্রধানগণ এবং নগরীর বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন উদ্যাপন উপলক্ষ্যে ওরিয়েন্টশন ও পরিকল্পনা সভা 

জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন উদযাপন উপলক্ষ্যে  মঙ্গলবার ( ২৮মে)সকালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতাল মিলনায়তনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ইমাম হোসেন রানা’র সভাপতিত্বে এক “ওরিয়েন্টশন ও পরিকল্পনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন, প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর মোঃ গিয়াস উদ্দিন, কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুম। ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করেন জোনাল মেডিকেল অফিসার ডাঃ সুমন তালুকদার।
উপস্থিত ছিলেন জোনাল মেডিকেল অফিসার ডাঃ আকিল মাহমুদ নাফে, ডা. জুয়েল মহাজন, মেডিকেল অফিসার ইনচার্জ ডাঃ সৈয়দ দিদারুল মুনির রুবেল, ডাঃ ইফফাত জাহান রাখি, ডাঃ হোসনে আরা বেগম, ইপিআই টেকনিশিয়ান, স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং বেসরকারী এনজিও সংস্থা’র প্রতিনিধিবৃন্দ।
প্রধান অতিথির বক্তেব্য চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন শতভাগ সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে অপুষ্টি দূরীকরণ সম্ভব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইড লাইন অনুযায়ী শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে। যাতে কোন শিশু ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ানো থেকে বাদ না পড়ে সেদিকটি অবশ্যই আপনাদের সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিতব্য সকল জাতীয় কর্মসূচীসমূহ শতভাগ সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আসন্ন জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী সকল কার্যক্রম গ্রহন করা হয়েছে। এই কর্মসূচী বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেন এবং কর্মসূচীর সফলতা কামনা করেন।
সভাপতির বক্তব্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ ইমাম হোসেন রানা বলেন, চসিক স্বাস্থ্য বিভাগ যেকোন কর্মসূচী শতভাগ অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আসন্ন জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি এ কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সকল জোনাল মেডিকেল অফিসারগণকে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করার আহবান জানান ।
উল্লেখ্য যে, আগামী ১লা জুন ২০২৪ইং সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রাম নগরীতে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন পালিত হবে। উক্ত ক্যাম্পেইন চলাকালীন সময়ে ৬-১১ মাস বয়সী শিশুকে ১টি নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল ও ১২-৫৯ মাস বয়সী শিশুকে ১টি লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। এছাড়া শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিমাণ মত ঘরে তৈরি সুষম খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ প্রদান করা হবে।

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও