নিজস্ব প্রতিবেদক *
শিক্ষক ও সহপাঠীকে দায়ী করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করার আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।
শনিবার (১৬ মার্চ) মধ্যরাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এ আশ্বাস দেন।
শুক্রবার রাত ১০ টায় কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা। এর কিছুক্ষণ আগে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। সেখানে যৌন হয়রানি ও মানসিক চাপের অভিযোগ তুলে সহপাঠী আম্মান সিদ্দিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দীন ইসলামকে দায়ী করে যান তিনি।
অবন্তিকার এই মৃত্যুর খবরে ক্ষোভে ফেটে পড়ে পুরো ক্যাম্পাস। শুক্রবার রাত থেকেই ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দীকির বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগ তুলে তাদের শাস্তির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।
ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক ও সহপাঠীর বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী এবং এক সহকারী প্রক্টরকে দায়ী করে আত্মহত্যা করেন জবি ছাত্রী ফাইরুজ।
আজ শনিবার (১৬ মার্চ) বিকেল তিনটায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করবেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ব বিদ্যালয়ের শান্ত চত্বরে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে।
অবন্তিকার আত্মহত্যার তথ্য ছড়িয়ে পড়লে শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত থেকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীরা সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দীকির বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগ তোলেন। পরে দোষী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর শাস্তির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শান্ত করার চেষ্টা করলেও সম্ভব হয়নি। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যান।
এ সময় অভিযুক্ত আম্মানকে সাময়িক বহিষ্কার ও সহকারী প্রক্টর পদ থেকে সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলামকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর।
এছাড়াও অধিকতর তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাসুম বিল্লাহকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
পরে অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচণা দানকারী শিক্ষক দ্বীন ইসলাম ও শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকীসহ এ ঘটনায় জড়িত প্রক্টরিয়াল কমিটি এবং ছাত্র উপদেষ্টাকে তদন্তের আওতায় আনা হবে বলে জানান উপাচার্য সাদেকা হালিম। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যাবে বলেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন তিনি।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, শুধু অবন্তিকা নয়, এরআগেও বিভিন্ন যৌন হয়রানির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিচার মেলেনি। এর জন্য অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। সে সব ঘটনারও বিচার করতে হবে।
জবাবে উপাচার্য বলেন, আমি নভেম্বরে দায়িত্ব নিয়েছি। এরপর থেকে যতগুলো অভিযোগ পেয়েছি সেগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানানো হবে। চলতি মাসেই সিন্ডিকেট সভায় সে সব অভিযোগের সুরাহা হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
পরে শিক্ষার্থীরা শনিবার বিকেলে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়েন।