বিশেষ প্রতিবেদক *
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচনের জন্য আহ্বান জানালেও, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন ছাত্র আন্দোলনকারীরা। এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত চারজন নেতার সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সংস্কারের জন্য তারা এখন নিজেদের দল গঠনের কথা বিবেচনা করছেন।
রয়টার্স বলছে, শেখ হাসিনার আমলের অর্থাৎ গত ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেটিই আন্দোলনকারী নেতাদের আশা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া বিক্ষোভ একপর্যায়ে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। আর আন্দোলনকারীদের ওপর দমন-পীড়নের বর্বরতা থেকে জনগণের মধ্যে সৃষ্ট ক্ষোভে ভেসে যায় হাসিনার সরকার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর একক বৃহত্তম এই সহিংসতায় নিহত হন কমপক্ষে ৩০০ মানুষ।
যদিও ছাত্র আন্দোলনে ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত ৩২ শিশুসহ ৬৫০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) জেনেভা থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। যেখানে উপদেষ্টা হিসেবে আছেন দুই ছাত্র নেতাও।
গত তিন দশকের বেশিরভাগ সময় ধরেই বাংলাদেশ শাসন করেছে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ অথবা তার প্রতিদ্বন্দ্বী বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি। আর এই দুই নেতারই বয়স এখন ৭০-এর বেশি।
সরকার এবং শিক্ষক ও কর্মীদের মতো সামাজিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে যোগাযোগের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি কমিটির সদস্য মাহফুজ আলম রয়টার্সকে বলেছেন,
ছাত্র নেতারা দ্বৈত প্রথার অবসান ঘটাতে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে আলোচনা করছেন।
২৬ বছর বয়সী আইনের এই ছাত্র আরও বলেন,আন্দোলনকারী নেতারা একটি প্ল্যাটফর্মে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে ব্যাপকভাবে পরামর্শ করতে চাইছেন। এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। দুই রাজনৈতিক দলকে (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) নিয়ে মানুষ সত্যিই ক্লান্ত। আমাদের ওপর মানুষের আস্থা আছে।
তাহমিদ চৌধুরী নামে আরেক ছাত্র সমন্বয়কারী রয়টার্সকে জানিয়েছেন, তাদের একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার ‘উচ্চ সম্ভাবনা’ আছে। তবে তারা এখনও তাদের কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছেন এবং ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাকস্বাধীনতাই এর মূলে থাকবে বলেও জানান তিনি।
তাহমিদ বলেন,একটি দল গঠন ছাড়া আমাদের অন্য কোনো পরিকল্পনা নেই, যা দ্বৈত প্রথা ভাঙতে পারে।
আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন,
আন্দোলনের চেতনা ছিল একটি নতুন বাংলাদেশ তৈরি করা, যেখানে কোনো ফ্যাসিবাদী বা স্বৈরাচারী ফিরে আসতে পারবে না। আর এটি নিশ্চিত করার জন্য আমাদের কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন, যার জন্য অবশ্যই কিছু সময় লাগবে।
হাসিনার সরকারের পতনের পরপরই নতুন নির্বাচন আয়োজনের জন্য আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির আহ্বান বিবেচনা করা হচ্ছে না বলেও জানান নাহিদ।
ড. ইউনূসের একজন মুখপাত্রের সঙ্গে রয়টার্স যোগাযোগ করলেও, এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি। তবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন রয়টার্সকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা টেকনোক্র্যাটদের সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেনি।’
বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে রয়ে যাওয়া বিভাজন এবং নতুন সরকারের সম্ভাবনার মূল্যায়ন করতে প্রধান ছাত্রনেতা, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং সেনা কর্মকর্তাসহ ৩০ জনেরও বেশি লোকের সাক্ষাৎকার নিয়েছে রয়টার্স।
তবে ছাত্রনেতাদের নতুন দল গঠনের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি রয়টার্স।
যদিও এর আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জয় রয়টার্সকে বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো কোথাও যাচ্ছে না। আপনারা আমাদের নিশ্চিহ্ন করতে পারবেন না। আগে কিংবা পরে, আওয়ামী লীগ বা বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসবে। আমাদের সাহায্য ছাড়া, আমাদের সমর্থক ছাড়া আপনারা বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আনতে পারবেন না।’