বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ছয়জনকে বহিষ্কারসহ বুয়েট শিক্ষার্থীদের নতুন দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক *

bsrm

ছয় শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার না করলে আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। শনিবার (৩০ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় বিক্ষোভ চলাকালে প্রেস ব্রিফিং করে এ সিদ্ধান্ত জানান তারা। দাবি মেনে না নিলে ৩১ মার্চ সকালে তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলনের ঘোষণাও দেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।

এর আগে বিক্ষোভের জেরে গতকাল অভিযুক্ত ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ইমতিয়াজ রাহিম রাব্বিকে সাময়িক বহিষ্কার করে বুয়েট প্রশাসন। তবে তা মেনে না নিয়ে ফের বিক্ষোভে ইমতিয়াজ রাহিম রাব্বিসহ জড়িত ৬ শিক্ষার্থীকে দুপুর ২টার মধ্যে স্থায়ী বহিষ্কারের আল্টিমেটামসহ নতুন দাবি উপস্থাপন করেন শিক্ষার্থীরা।

এসময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে- ‘এক, দুই, তিন চার, ডিএসডব্লিউ গদি ছাড়’, ‘আমি কে তুমি কে, আবরার, আবরার’, ‘বুয়েট  বাঁচাও’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। ঘটনাপ্রবাহ অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পরিবর্তিত দাবিসমূহ-ads din

১. শনিবার (৩০ মার্চ) দুপুর ২টার মধ্যে লিখিতভাবে ইমতিয়াজ রাব্বির স্থায়ী একাডেমিক বহিষ্কার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।

২. একই ঘটনায় ইমতিয়াজ রাব্বির সঙ্গে জড়িত এ. এস. এম. আনাস ফেরদৌস (স্টুডেন্ট আইডি ১৮১৮০০৪), মোহাম্মদ হাসিন আরমান নিহাল (স্টুডেন্ট আইডি ২১০৬১০১), অনিরুদ্ধ মজুমদার (স্টুডেন্ট আইডি ২১০৬০৭৯), জাহিরুল ইসলাম ইমন (স্টুডেন্ট আইডি ২১১২০৩১) এবং সায়েম মাহমুদ সাজেদিন রিফাতকে (স্টুডেন্ট আইডি ২১০৬১২৬) বুয়েট থেকে একাডেমিকভাবে স্থায়ী এবং হল থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি।

৩. বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ যারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে কী না, তারা কেন-কীভাবে প্রবেশ করার অনুমতি পেল এ ব্যাপারে বুয়েট প্রশাসনের কাছ থেকে লিখিত নোটিশ এবং বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।

  1. নিরাপত্তার জন্য রাত সাড়ে ১০টার পর সব ছাত্রছাত্রীর ক্যাম্পাসে থাকা নিষেধ এবং যেকোনো প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদেরকে রাত সাড়ে দশটার বেশি সময় ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে হলে সেক্ষেত্রে ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের (ডিএসডাব্লিও) অনুমতির প্রয়োজন পড়ে।

(ক) যদি বহিরাগতদের অনুমতি দেয়া নাই হয়ে থাকে, তাহলে ডিএসডাব্লিওর প্রটোকল ভেঙে বহিরাগতরা মধ্যরাতে সেমিনার রুমে মিটিং করতে সক্ষম হয়েছে। এক্ষেত্রে ডিএসডাব্লিও নিজের প্রটোকল অব্যাহত রাখতে ব্যর্থ, এ দায় স্বীকার করতে হবে।

(খ) আর যদি বহিরাগতদের অনুমতি দেয়া হয়ে থাকে, তাহলে বুয়েটের রেজিস্ট্রার অফিসের প্রটোকল : ১১ অক্টোবর, ২০১৯ এ দেয়া ঘোষণা ‘বুয়েটে সকল প্রকার রাজনৈতিক সংগঠন এবং কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ এর লঙ্ঘন করেছেন ডিএসডাব্লিও।

(গ) ক্যাম্পাসের অডিটোরিয়াম, সেমিনার রুম, কাফেটেরিয়া সংলগ্ন জায়গার ব্যবহার ডিএসডাব্লিউ আওতাধীন। তিনি বলেছেন, এ জায়গাগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে তিনি অনুমতি দেননি। এক্ষেত্রে তার অনুমতি ব্যতীত বহিরাগতদের এ জায়গাগুলো ব্যবহার করার মতো ধৃষ্টতামূলক আচরণ ডিএসডাব্লিউ এর দায়িত্বপালনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ডিএসডাব্লিওর দ্রুত সময়ের মধ্যে পদত্যাগ চাই।

৫. শনিবার (৩০ মার্চ) এর টার্ম ফাইনাল আমরা বর্জন করছি এবং আগামীকাল ৩১ মার্চের টার্ম ফাইনালসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করছি।

৬. আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনোরকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাবে না-এই মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

এর আগে গত ২৭ মার্চ দিবাগত রাত ১টার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকেই বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করানোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বি। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পর বুয়েটে এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে নতুন করে রাজনীতি শুরুর পাঁয়তারা হিসেবে দেখছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে পুনরায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়া ও নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তারা আন্দোলন শুরু করেন।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে শেরে-বাংলা হলে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও