চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল পরিচলনার দায়িত্ব চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির। সমিতির আজীবন সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাহী পরিষদ হাসপাতাল পরিচালনা করবে- এটিই নিয়ম। আদালতের রায়ের আলোকে বর্তমানে জাহাঙ্গীর চৌধুরী চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতি কিংবা হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদের কেউ না। হাসপাতালে এখন নির্বাচিত পরিচালনা পরিষদ নেই। তারপরও তিনি সভাপতি হিসেবে কোন্ আইনে হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদ গঠন করেছেন- এমন প্রশ্ন তুলেছেন চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল রক্ষা পরিষদ। এভাবে আজীবন সদস্যদের পাশ কাটিয়ে চট্টগ্রাম সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক বহিস্কৃত সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদ গঠনের আইনগত কোনো অধিকার নেই। তিনি এখন শুধু আজীবন সদস্য। বিগত ২১ বছরে তিনি যেভাবে হাসপাতালে নজিরবিহীন লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছেন, সরকারি দুটি সংস্থার তদন্তে দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন, তাতে তো তিনি আজীবন সদস্য হিসেবেও থাকার নৈতিক অধিকার নেই। অথচ এখনও তিনি পেশিশক্তির জোরে বেহায়ার মতো হাসপাতালকে নিজের করায়ত্বে রেখে অনিয়ম-দুর্নীতি অব্যাহত রেখেছেন।
আদালতের রায়ের আলোকে বর্তমানে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল প্রশাসক কর্তৃক পরিচালিত হওয়ার কথা। জাহাঙ্গীর চৌধুরী হাইকোর্টে রীট করলে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি ২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি স্থগিত করা হয়। প্রায় দুবছর পর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ দীর্ঘ শুনানী শেষে তার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। সমাজসেবা অধিদপ্তর এখন আদালতের রায়ের আদেশ অফিসিয়ালি না পাওয়ায় পুনরায় প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছে না। আইনগতভাবে বর্তমানে জাহাঙ্গীর চৌধুরী চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতি কিংবা হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদের কেউ না। এমতাবস্থায় আইন-আদালত, সরকারি প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্র্তপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বহিস্কৃত সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর অবৈধভাবে হাসপাতাল পরিচালনা করার ঘটনায় আজীবন সদস্যরা বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের বহিস্কৃত সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর সভাপতি হিসেবে স্বাক্ষরিত অফিস বিজ্ঞপ্তিতে যে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছে তা নিম্নরূপঃ
সচিব- ডা. সলিমুল্লাহ, – সহকারী পরিচালক, ডা. রতন কান্তি সাহা,সিনিয়র কনস্যালট্যান্ট ও ইনচার্জ, কিডনী ও ডায়ালাইসিজ বিভাগ, ডা. কাজী ফারজানা হক, কনস্যালট্যান্ট ও বিভাগীয়প্রধান, ডা. এম এ মুকিত, কনস্যালট্যান্ট ও বিভাগীয়প্রধান, ডা. আলম মো. শরীফ, সিনিয়র কনস্যালট্যান্ট ও ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগ, ডা. জাভেদ মেহেদী হোসেন, কনস্যালট্যান্ট, মেডিসিন ও আইসিও বিভাগ, ডা.আহমদ হোসেন, কনস্যালট্যান্ট, প্যাথলজি বিভাগ, ডা. সুমন রহমান চৌধুরী, রেজিস্ট্রার ও ব্রাঞ্চ কো-অর্ডিনেটর, ডা. মো. নেজাম উদ্দিন, ইনচার্জ (ইনডোর ও ইমার্জেন্সি বিভাগ, ডা. ইলিয়াস তালুকদার, ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার ও ইনচার্জ( ফার্মেসী) ও মো. বেলাল উদ্দিন, চিফ অ্যাকাউন্টস অফিসার ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা। এসব চিকিৎসক-কর্মকর্তারা সকলেই জাহাঙ্গীরের একান্ত অনুগত ও এর মধ্যে ৬জনই তার আত্মীয়।
অবৈধভাবে হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদ গঠনের ব্যাপারে চট্টগ্রাম সমাজসেবা অফিসের উপপরিচালক ফরিদুল আলমের সাথে মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি চাটগাঁর বাণীকে বলেন, “আদালতের রায়ের সার্টিফাইড কপি আমাদের হাতে না আসলে আমাদের কিছু করার নেই। কেউ যদি গায়ের জোরে হাসপাতাল পরিচালনা কমিটি গঠন করে তাতে আমাদের কী করার আছে। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে আমরা তো মারামারি করতে পারি না।”