আগামী মাসেই (মার্চে) বে টার্মিনালের বিষয়ে একটা সুখবর পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘বে টার্মিনাল বাংলাদেশের গেম চেঞ্জার প্রকল্প। এটি নিয়ে আমাদের কাজ চলমান আছে। আশা করছি, আগামী মাসের মাঝামাঝি এ প্রকল্প নিয়ে সুখবর আছে।’
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘বন্দরের নিরাপত্তা ও অপারেশনের বিষয়ে খুবই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। গতকালও (বুধবার) আমরা কিছু ছিঁচকে চোর ধরেছি। আপনারা জানেন বন্দরে চুরি করা এতো সহজ কোনো বিষয় না। এরপরও কিছু চোর গাড়ির নিচে ঝুলে বন্দরে প্রবেশের অপচেষ্টা করে। এমনিতেই বন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠার সুযোগ নেই। তবু আমরা আইএসপিএসের মাধ্যমে কমপ্লাইন্স আরও স্ট্রং (জোরদার) করেছি।’
৫০০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করেছি। যত দ্রুত বে টার্মিনাল করতে পারবো ততই দেশের লাভ।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, বন্দরের নিরাপত্তা ছিল আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। বন্দর আমাদের জন্য আশীর্বাদ। বন্দরকে কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। ইউএসএর আইএসপিএস টিম অডিট করে সন্তোষ জানিয়েছে। এবার কোনো অবজারভেশন ছিল না। উন্নত দেশের গ্রিন বন্দর পুরোপুরি অটোমেটেড। আমাদের কার্গো গ্রোথ ৭-১০ শতাংশ। ২০৩০ সালে ৫ মিলিয়ন টিইইউস হ্যান্ডেল করতে হবে। সিস্টেমের ভেতরে পরিবর্তন আনছি। ওভার ফ্লো ইয়ার্ড গড়ে তুলতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি ১৯টি অফডককে আরও কার্যকর করতে। কাস্টমসের সঙ্গে আমদানি ক্ষেত্রে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডের বিপজ্জনক কার্গো অপসারণ করেছি। ১২০টি রেফার (শীততাপ নিয়ন্ত্রিত) কনটেইনার নয় মাস প্লাগ ছিল, সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। বিদেশি মেইন লাইন অপারেটর ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এ ধরনের কাজ গত ১০-১৫ বছরে হয়নি। সেটা ৩-৪ মাসে করতে পেরেছি। ১০ হাজার নিলামযোগ্য কনটেইনার পড়ে আছে। ইনভেন্ট্রি হচ্ছে। এ জায়গা খালি হলে ৪-৫ বছর চলবে।
অপারেশনের গতি বাড়ানো প্রসঙ্গে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘বন্দরের আউটারে জাহাজ ফেলে রাখার একটা প্রবণতা আছে। এটা কেন তা আমি বুঝি না! সকল পণ্যের সাপ্লাই চেইনে বিঘ্ন না ঘটা, বাজারে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা এবং বন্দরের কার্যক্রম নিরবিচ্ছিন্ন রাখা ও নিরাপদ নৌ চলাচলের স্বার্থে মালামাল লোড করার পর লাইটার জাহাজকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পোর্ট লিমিট ত্যাগ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যথায় চট্টগ্রাম বন্দর আইন ও আইএসপিএস কোড অনুযায়ী প্রযোজ্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

বন্দর নানা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত সরকারের আমলে বন্দর নানা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি ছিল। সিন্ডিকেট ভাঙার উদ্যোগ নিয়েও আমরা সফল হয়েছি। যার ফলে বন্দরের খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। পাশাপাশি এই বন্দর কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে রেকর্ড করেছে। ২০২৩ সালের তুলনায় কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ে ৩ দশমিক ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এই পোর্টকে জনবান্ধব করার জন্য স্বচ্ছতা, ন্যায় ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে।’
রমজানে পণ্য নিয়ে কৃত্রিম সংকট রোধে সাংবাদিকদের আহ্বান জানিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা থাকে তা পর্যাপ্ত আমদানির তথ্য আমাদের কাছে আছে। আমরাও শিডিউলিংয়ের মাধ্যমে বন্দরের পরিবহন আরো গতিশীল করছি। রমজানে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের কৃত্রিম সংকট যেন সৃষ্টি করতে না পারে, আপনারা সেদিকে নজর রাখবেন। আমরা বন্দরের অভ্যন্তরে ও আউটারে কোনো জট যেন না হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করছি।’