চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন দেশবাসীর প্রতি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ। সকল ধর্মের মানুষ এখানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে। আমাদের এই ঐতিহ্য অটুট রাখতে হবে।”
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) , প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির জিইসি মোড়স্থ ক্যাম্পাসে বাণী অর্চনা পরিষদের উদ্যোগে বিদ্যা ও সুরের দেবী সরস্বতীর আরাধনা অনুষ্ঠানে এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গনে বাণী অর্চনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহবান জানান তিনি।
সভায় মেয়র বলেন, “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য একটি মহল সক্রিয় রয়েছে। আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে, গুজবে কান না দিয়ে সমাজে শান্তি বজায় রাখতে হবে।” তিনি ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডা থেকে শান্তির বার্তা প্রচার করতে হবে, যেন কেউ উসকানিতে বিভ্রান্ত না হয়।”
মেয়র শাহাদাত আরও বলেন, “চট্টগ্রাম ঐতিহ্যগতভাবে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতীক। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ যুগ যুগ ধরে এখানে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বসবাস করছে। আমাদের এই ঐক্যের বন্ধন যেন কোনোভাবে দুর্বল না হয়।”
সভায় উপস্থিত অতিথিরা সম্প্রীতি বজায় রাখতে একযোগে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি ধরে রাখার জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে মেয়র বলেন, যারা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। আমরা চাই চট্টগ্রামসহ সারা দেশ শান্তিপূর্ণ থাকুক।”
“আমাদেরকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। এই সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য বাণী অর্চনাসহ বিভিন্ন যে-অনুষ্ঠানগুলো আছে সেই অনুষ্ঠানগুলো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রতিটি জায়গায় করার পরিবেশ যাতে আমরা বজায় রাখতে পারি, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমি আমার ক্লিন সিটির একটা সংজ্ঞার কথা বারবার বলছি। এটা হচ্ছে, এই শহরকে ক্লিন-গ্রীন ও হেলদি করে তোলা। ক্লিন সিটির সংজ্ঞা বোঝাতে আমি বলছি না যে, শুধু নালা-খাল-বিল পরিষ্কার করা। এটাও বলছি যে, চট্টগ্রাম শহরে জাতি-দল-ধর্ম-মত নির্বিশেষে সবাই যাতে নিরাপদ ও সুন্দর থাকে, এভাবে একে পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
মেয়র নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, “সঠিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের চর্চা ছাড়া সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।” তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, “কলম হচ্ছে তরবারির চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। জ্ঞান, শিক্ষা ও নৈতিকতা দিয়েই যে কোনো সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব। যারা অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়, তারা মূলত শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। তাই আমাদের শিশুদের ছোটবেলা থেকেই সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও মানবিক মূল্যবোধ শেখাতে হবে।”
প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে বাণী অর্চণা অনুষ্ঠান
প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম এবং রেজিস্ট্রার মো. ইফতেখার মনির।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম বলেন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও শুদ্ধতার প্রতীক দেবী সরস্বতীকে পূজা করা হয় বিদ্যা অর্জনের উদ্দেশ্যে। আগে বিশ্বাস করা হতো, যেখানে সরস্বতী থাকবে, সেখানে লক্ষ্মী থাকবে না। যেখানে লক্ষ্মী থাকবে, সেখানে সরস্বতী থাকবে না। আজকে সেই বিশ্বাস বদলে গেছে। এখন বিশ্বাস করা হয়, সরস্বতী ছাড়া লক্ষ্মী এবং লক্ষ্মী ছাড়া সরস্বতী লাভ করা যায় না। অর্থাৎ বিদ্যা ছাড়া অর্থ এবং অর্থ ছাড়া বিদ্যা লাভ করা সম্ভব নয়।
রেজিস্ট্রার জনাব মো. ইফতেখার মনির বলেন, এই সরস্বতী বন্দনার দিনে আমার প্রত্যাশা, যুগে যুগে এই প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি থেকে শিক্ষার্থীরা অশেষ জ্ঞান অর্জন করে পৃথিবীর কল্যাণে নিয়োজিত হবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইন বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক তানজিনা আলম চৌধুরী, ফ্যাশন ডিজাইন এন্ড টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার দাশসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাণী অর্চনা পরিষদের আহ্বায়ক সহযোগী অধ্যাপক অনুপ কুমার বিশ্বাস, সদস্য সহযোগী অধ্যাপক হারাধন কুমার মহাজন, সহযোগী অধ্যাপক সুজন কান্তি বিশ্বাস, সহযোগী অধ্যাপক রাজিব দত্ত, সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জয় বিশ্বাস, সহযোগী অধ্যাপক বিদ্যুৎ কান্তি নাথ, সহযোগী অধ্যাপক হিল্লোল সাহা প্রমুখ।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের বাণী অর্চণা অনুষ্ঠান
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের বাণী অর্চণা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণ বিপুল উৎসাহে অংশগ্রহন করেন। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মাননীয় অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, উপাধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ আবদুর রব, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোঃ তসলিম উদ্দিন,ডা. এস এম সারোয়ার আলম, উপ-পরিচালক ডা. মোঃ ইলিয়াস চৌধুরী, ডা. বেলায়েত হোসেন ঢালী।
বাণী অর্চনার সার্বিক তত্ত্ববধায়ন করেন অধ্যাপক ডা. অজয় দেব, অধ্যাপক ডা. সরোজ কান্তি চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. সুভাষ মজুমদার। সকালে পূজা, পুষ্পাঞ্জলী, বাচ্চাদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরষ্কার বিতরনী ও গরীব শিক্ষার্থীদের বিদ্যা সামগ্রী বিতরন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫ম ব্যাচের শিক্ষার্থী সৌরভ দে, তৃষা দে প্রিয়া, প্রাচুর্য্য বিশ্বাস, বাপ্পা দে, আবীর বিশ্বাস, নীলয় ঘোষ, অমিয় সৌরভ কুন্ড প্রমুখ শিক্ষার্থীদের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।