শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

পঞ্চমবারের মতো সরকারপ্রধান হচ্ছেন শেখ হাসিনা

ঢাকা প্রতিনিধি *

bsrm

পঞ্চমবারের মতো শেখ হাসিনা হচ্ছেন সরকারপ্রধান । দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখাগরিষ্ঠতায় টানা চতুর্থবারের মত সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।  বাংলার সিংহাসন ফের বরণ করে নিতে প্রস্তুত এখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে। এবারে দ্বাদশ

আর সব মিলিয়ে তিনি পঞ্চমবারের মতো হবেন সংসদ নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারপ্রধান। সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে অন্তত ২২৫টি আসনের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাই উপভোগ করবেন দ্বাদশ সংসদে।

এর আগে কেবল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াই পূর্ণ দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের সেই বিতর্কিত নির্বাচন ও নির্বাচন-পরবর্তী সরকারকে বিবেচনায় নিলেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া দায়িত্ব পালন করেছেন তিনবার। সেখানে শেখ হাসিনা এবার টানা চতুর্থ জয় তুলে নিলেন জাতীয় নির্বাচনে। তাতে তার পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগও উন্মুক্ত হলো।ads din

রবিবার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট নেয়া হয়। এরপর আসতে থাকে ফলাফল। ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে, আরেকটি বিশাল জয়ের পথে রয়েছে আওয়ামী লীগ। শেষ পর্যন্ত সব আসনের ফল যখন মিলেছে, তখন ঘড়ির কাঁটা রবিবার দিবাগত রাত ৩টা পেরিয়ে ৪টার দিকে ছুটছে। তখনই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হলো, তিন-চতুর্থাংশ মেজরিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ দ্বাদশ সংসদে সরকার গঠন করবে।

আওয়ামী লীগের এই বিজয় এবং শেখ হাসিনার পঞ্চমবার সরকারপ্রধান হওয়ার বিষয়টি অবশ্য অনুমিতই ছিল। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্বাচন বর্জন করলে আওয়ামী লীগ কার্যত প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন হয়ে পড়ে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ভোটে থাকলেও তারা আগের মতোই আওয়ামী লীগের সঙ্গেই আসন সমঝোতা করে। এ অবস্থায় ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো প্রশ্নবিদ্ধ একটি নির্বাচন হবে কি না, সেটিই আওয়ামী লীগের ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তবে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার এক সিদ্ধান্তে কিছুটা হলেও নির্বাচনের উত্তেজনা ফিরে আসে।

বিএনপি না থাকলেও যেন নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনা নিজের দলের নেতাদের ওপরই আস্থা রাখেন। এবারের নির্বাচনে বরাবরের মতোই প্রতিটি আসন থেকেই মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন অনেকে। অন্যান্য নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিতদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে থাকতে সাংগঠনিকভাবে বাধ্য করা হয়। এবারে সে পথে হাঁটেননি শেখ হাসিনা। বরং বিপরীত পথে গিয়ে তিনি ভোটকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেন।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী সবাইকে গণভবনে ডেকে এক সমাবেশে শেখ হাসিনা বলেন, মনোনয়নবঞ্চিতরা চাইলেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন এই নির্বাচনে। দলের নেতাকর্মীরাও চাইলে এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে পারবেন। শেষ পর্যন্ত এই ডাকে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। তাদের অনেকেই নৌকা বা আসন সমঝোতার লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীর বিপক্ষে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হন।

শতাধিক আসনে দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস ছিল। ভোটের দিনও সেই আভাস খুব মিথ্যা প্রমাণিত হয়নি। শেষ পর্যন্ত ৬২টি আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন দলীয় প্রার্থীদের কাছ থেকে। তাদের মধ্যে হেভিওয়েট বা টানা একাধিক মেয়াদে সংসদ সদস্য থাকা প্রার্থীরাও হেরে গেছেন। শুধু তাই নয়, এর আগে কখনোই জাতীয় নির্বাচনে এত বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেননি।

নির্বাচন কমিশনের হিসাব বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে। তবে নির্বাচনে সহিংসতা বা অনিয়মের অভিযোগ খুব একটা পাওয়া যায়নি। বিদেশি পর্যবেক্ষক যারা বিভিন্ন এলাকায় কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন, তারাও ভোট নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাননি। সব মিলিয়ে দলীয় নেতাদেরই পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়তে দিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফিরিয়ে এনেছেন শেখ হাসিনা। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর ভোট বর্জন সত্ত্বেও তাই এই নির্বাচন আগের নির্বাচনের তুলনায় গ্রহণযোগ্য হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালও নির্বাচন নিয়ে সন্তুষ্টি জানিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাতে বাধ্য করা বা ভোটার নিয়ে আসা নির্বাচন কমিশনের কাজ নয়। তাদের কাজ সুষ্ঠুভাবে ভোট আয়োজন করা, যেন কোনো অনিয়ম না হয়। এই নির্বাচনে তিনি সন্তুষ্ট। দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে এই নির্বাচন তারই উদাহরণ— এমনটিই বলেছেন সিইসি।

সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সাফল্যের সঙ্গেই একাদশের সিঁড়ি পেরিয়ে দ্বাদশের সিঁড়িতে পা রাখার দিকে এগিয়ে গেছেন। এবারে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে পুরনো অনেক মুখ বাদ দিয়েছিলেন তিনি। নতুন কিছু মুখ আর চমক রেখেছিলেন। সরকার গঠনের ক্ষেত্রেও তিনি হয়তো এমন কোনো চমক রাখতে পারেন বলেও মনে করছেন রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা।

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও