নিজস্ব প্রতিবেদক *
চট্টগ্রাম-১০ আসনের ফুলকপি প্র্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম বলেছেন, আমি কারও আজ্ঞাবহ নই। ইনশাআল্লাহ আমরা যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদে যাব কাউকে একা একা কথা বলতে দেব না। আমরাই দেশ ও জনগণের স্বার্থে নির্বাচন করছি। দেশের স্বার্থে যা কিছু প্রয়োজন মহান সংসদে আল্লাহর রহমতে দাঁড়িয়ে বলবো। আপনারা দেখবেন তো।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষণা দেন।
পার্লামেন্টে কী ভূমিকা থাকবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে পার্লামেন্টে যেতে দিন। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী।
প্রতিদ্বন্দ্বী এক প্রার্থীর সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি বিনিময়ে কী চাইলাম? উনার কাছেওতো কিছু চাইনি! আমি ১০৩টি প্রতিষ্ঠান করেছি। আমাকে কে বিনিময় দেবে? আমি বিনিময় নেব আল্লাহর কাছ থেকে। আল্লাহ আমাকে দান করেছেন, আমি আল্লাহর ওয়াস্তে সেবার মানসে নিঃস্বার্থভাবে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
জেতার পর আওয়ামী লীগে যোগ দেবেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি যখন স্বতন্ত্র একদম স্বতন্ত্র থাকতে চেষ্টা করবো। কোথায় যাব সেটির কোনো ঠিকানা নাই। আমার ঠিকানা হবে জাতীয় সংসদ।
তিনি ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা নির্ভয়ে স্বাধীনভাবে ভোটকেন্দ্রে এসে ফুলকপি প্রতীকে ভোট দেবেন৷
স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব মোহাম্মদ মনজুর ২০ দফা কর্মপরিকল্পনা নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন।
ইশতেহার ঘোষণা ও সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ে সাবেক মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তাঁর অতীত কর্মকাণ্ড সহ সমাজসেবার কিছু অংশ তুলে ধরেন। আগামী ৭ জানুয়ারী রবিবার সারাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে আমি চট্টগ্রাম-১০ সংসদীয় আসনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে ফুলকপি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। আমি বিশ্বাস করি এ নির্বাচন দেশের দলমত নির্বিশেষে তথা সকল নাগরিকের অংশগ্রহণমুলক নির্বাচন হবে। মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে, নির্ভয়ে, বিনা বাঁধায় ভোট কেন্দ্রে এসে তাঁদের মনোনীত প্রার্থীদের মহামূল্যবান ভোট প্রদান করে আমাকে নির্বাচিত করবে।
তিনি বলেন, আমার নির্বাচনি ইশতেহার ও মতবিনিময় সভার মাধ্যমে আমি চট্টগ্রাম ১০ আসনের সম্মানিত ভোটারদের জানাতে চাই আগামী ৭ জানুয়ারী আপনারা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ভোট কেন্দ্রে আসবেন এবং চট্টগ্রাম ১০ আসনের উন্নয়নে আমার ফুলকপি প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করে দেশ ও দশের সেবা করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেবেন। সাবেক মেয়র বলেন, বিগত ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে চট্টগ্রাম মহানগরবাসী বিপুল ভোটে আমাকে মেয়র নির্বাচিত করে নগরভবনে পাঠিয়ে নগরবাসীর সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আমিও মেয়র নির্বাচিত হয়ে আমার সাধ্যমত আপ্রাণ চেষ্টা করেছি নগরবাসীকে সেবা দিতে। এবারও ঠিক সেভাবে আমার প্রতীক ফুলকপি মার্কায় আপনাদের মহামূল্যবান ভোট দিয়ে মহান সংসদে পাঠিয়ে আপনাদের দাবীদাওয়া, নাগরিক অধীকার, এলাকার উন্নয়ন নিয়ে কথা বলার সুযোগ করে দিবেন। ইশতেহারে সংক্ষিপ্ত আকারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমি কিছু অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছি। যদি আমাকে আপনারা আপনাদের মহামূল্যবান ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেন ইনশাল্লাহ আমি আমার ইশতেহারের সবগুলো অঙ্গিকার পূরণ করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাব। স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলম বলেন, বিগত ৪০ বছর যাবত আমি মানব সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি আমি ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ৩ মেয়াদে প্রায় ১৭ বৎসর টানা ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে নির্বাচিত কাউন্সিলর পদে থেকে এলাকার সেবা করেছি। এ সময়ে ৯ বার (৩৫ বছর) চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ মেয়াদ পর্যন্ত আমি নির্বাচিত মেয়র হিসেবে নগরবাসীর সেবা করেছি। আপনারা জানেন আমার মরহুম শ্রদ্ধেয় পিতা-মাতার নামে আলহাজ্ব মোস্তফা হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছি। এছাড়াও আমি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন এবং আলহাজ্ব হোছনে আরা মনজুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেছি। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানের অধীনে ১০৩ টি সেবাধর্মী মূলক প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে- যেখানে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাতৃ সদন হাসপাতাল, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, বৃদ্ধাশ্রম, মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, মন্দির, মহাশশ্মান সহ আরো অন্যান্য সেবাধর্মী মুলক প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে আমি সারাজীবন মাটি ও মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই। তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকবৃন্দ সমাজ ও জাতির নির্ভরতার প্রতীক। আপনাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় দেশের সংবাদ মাধ্যম আজ স্বাধীন । আমি আশা করি, আপনাদের আদর্শিক লেখনি ও সংবাদ উপস্থাপনের মাধ্যমে আমার বক্তব্য আপামর জনগণের মাঝে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে আমার প্রতীক ফুলকপি মার্কায় মূল্যবান ভোটদানে উৎসাহিত করবেন ইনশাল্লাহ। সমাজসেবক মনজুর আলম উল্লেখ করেন যে,
আমরা হযরত মনছুর আলী শাহ (র.) এর বংশধর। চট্টগ্রাম পীর আউলিয়াদের পূণ্যভুমি। এ অঞ্চলে বসবাসরত সকল মানুষ যাতে নি:স্বার্থভাবে সেবা পায় এই আমার অঙ্গীকার। স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুর আলম তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারের কর্মপরিকল্পনায় বলেন,
* স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহযোগিতা, বেকার ছেলে-মেয়েদের চাকুরীর সু-ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
* ১০ সংসদীয় আসনের ৮টি ওয়ার্ড এলাকার অলি-গলি, রাস্তাঘাট, নালা-নর্দমা যে গুলো ক্ষতবিক্ষত হয়েছে আমি স্থানীয় সরকারের অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংস্কার করার ব্যবস্থা করবো।
* আমার নির্বাচনি এলাকা নিয়মিত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য এবং ময়লা-আর্বজনা অপসারনের জন্য দায়িত্বে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট সংস্থার মাধ্যমে সমন্বয় করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
* আমার নির্বাচনী এলাকায় যে সকল রাস্তা-ঘাটে সড়ক বাতির স্বল্পতা এবং সড়ক বাতি না থাকার কারণে রাত্রিকালে চলাচলে বিঘ্ন ঘটে সে সমস্ত এলাকায় দায়িত্বে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট সংস্থার মাধ্যমে সড়ক আলোকায়ন ও সৌর বিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। * আমার নির্বাচনী এলাকার শিল্প অঞ্চলে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কাজে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের শিশু সন্তানদের পরিচর্যার জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার খোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
* আমার নির্বাচনী এলাকায় যে সকল ওয়ার্ডে পানীয় জলের অভাব রয়েছে সে সব ওয়ার্ডে আমাদের সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান আলহাজ্ব মোস্তফা হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ও হোছনে আরা মনজুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের অর্থায়নে ৮ ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ১টি করে ডিব-টিউবওয়েল স্থাপনের ব্যবস্থা করা হবে।
* আমাদের ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মুমূর্ষু রোগীদের জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে নেয়ার জন্য বিনামূল্যে এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হবে।
* জাতীয় কর্মসুচীগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমার নির্বাচনী এলাকায় বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
* আমার নির্বাচনি এলাকায় স্থানীয় দানশীল ব্যক্তিরা জমি দান করলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সে জায়গায় ১টি মাতৃসদন হাসপাতাল স্থাপন করা হবে। যাতে অনগ্রসর ঘনবসতীপূর্ণ এলাকার গরীব মা-বোনেরা স্বল্প খরচে ডেলিভারীসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারে তার ব্যবস্থা করা হবে।
* আমার নির্বাচনী ঘনবসতীপূর্ণ ওয়ার্ড এলাকায় স্কুলের অভাবে ছোট-ছোট ছেলে মেয়েরা পড়া-লেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সে সমস্ত এলাকায় জমি পাওয়া সাপেক্ষে আমাদের ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে।
* গরীব মুমূর্ষু রোগীদের জন্য ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে আমার নিজস্ব অক্সিজেন কারখানা থেকে বিনামূল্যে অক্সিজেন বোতল প্রদান করার লক্ষে প্রত্যেক ওয়ার্ডে ১টি করে অক্সিজেন ব্যাংক স্থাপন করা হবে। * গরীব শ্রমজীবী মানুষের সুবিধার্থে প্রতি ওয়ার্ডের বস্তি এলাকায় সপ্তাহে ১দিন অভিজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে চিকিৎসাসহ বিনামূল্যে ঔষধ প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।
* সরকারের সাথে আলাপ-আলোচনা করে তৃতীয় লিঙ্গদের জন্য পুর্নবাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে।
* শহরের ভিক্ষুকদের ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধের লক্ষ্যে ভিক্ষুকদের জন্য সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থার সহায়তায় ভাতা প্রাপ্যতার উদ্যোগ নেয়া হবে।
* মধ্যবিত্ত, গৃহহীন ও শ্রমজীবী মানুষের স্থায়ী ঠিকানার জন্য বহুতল বিশিষ্ট বাসস্থান নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
* গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আমাদের ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় বিনা বেতনে অধ্যয়নের ব্যবস্থা করা হবে।
* আমার নির্বাচনী এলাকা সাগরিকা থেকে নাসিরাবাদ পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট পর্যন্ত মহিলাদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১টি ফ্রি বাস সার্ভিস চালু করা হবে।
* বর্তমান বেকার সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে কারিগরী শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
* গরীব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষা বৃত্তি/এককালীন আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।
* আমার নির্বাচনি এলাকায় তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর সেবা নিশ্চিতকরণে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করবো।
ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ হারিছ, জাফর আহমদ, আবুল কাশেম, শাহ আলম, সুলতান আহমদ, মো. নুর মিয়া, এম.এ. তাহের, শাহীন আলম, আলহাজ্ব মোহাম্মদ সরওয়ার আলম, নিপুর চৌধুরী, শামসুল আলম সহ নানা শ্রেণি – পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন।
গণসংযোগ : স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ¦ মোহাম্মদ মনজুর আলম নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার পর ৪ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রি. বৃহস্পতিবার তাঁর চট্টগ্রাম-১০ নির্বাচনী এলাকার ৮ ওয়ার্ডের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করেন। তাঁর নির্বাচনী প্রধান কার্যালয় থেকে গণসংযোগ শুরু করে সাগরিকা মোড়, সিডিএ মার্কেট, পাহাড়তলী বারকোয়ারটার, ঈদগাঁ কাঁচা রাস্তা, মনছুরাবাদ, দেওয়ানহাট, টাইগারপাস, আমবাগান, পাহাড়তলী কলেজ রোড, ওয়ার্লেস মোড়, জাকির হোসেন মোড়, মহিলা কলেজ মোড়, জাকির হোসেন বাই লেইন, ২নং গেট, জিইসি, ওয়াসার মোড়, ইস্পাহানী মোড়, দেওয়ানহাট, বাদামতলী মোড়, এক্সেস রোড, বড়পোল, নয়বাজার বিশ্বরোড মোড় হয়ে তিনি নির্বাচন প্রধান কাযালয়ে গণসংযোগ সমাপ্ত করেন। গণসংযোগে তাঁর নির্বাচনী এলাকার নানা শ্রেণি – পেশার বিশিষ্টজন সহ বিপুল সংখ্যক সমর্থক ও কর্মী উপস্থিত ছিলেন।