১৭ অক্টোবরের ঘটনার পর একটি বিষয় স্পষ্ট—এদেশে শিক্ষকদের সম্মান ও অধিকার আজ ভূলুণ্ঠিত। বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের উপর ন্যাক্কারজনক পুলিশি হামলা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি প্রমাণ করে যে, যাঁরা জাতির ভবিষ্যৎ গড়ছেন, তাঁদের প্রতি রাষ্ট্রের অবহেলা কতটা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
বেসরকারি কলেজের এই অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত নন। তারা কোনো সরকারি সুবিধা পান না। বছরের পর বছর তাঁরা অবৈতনিক, অবহেলিত অবস্থায় কাজ করে যাচ্ছেন— শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য। তাঁদের দাবি একটাই—ন্যায্য অধিকার, ন্যায্য মর্যাদা। কিন্তু এই ন্যায্য দাবি আদায় করতে গিয়ে তাঁদের রাস্তায় রক্তাক্ত হতে হলো!
এ কোন রাষ্ট্র যেখানে শিক্ষকদের কণ্ঠরোধ করা হয় পুলিশি শক্তি দিয়ে? যাঁরা জাতিকে গড়ে তুলছেন, তাঁদের ওপর লাঠিপেটা আর কাঁদানে গ্যাস-এটাই কি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি সম্মান?
শিক্ষকসমাজের প্রতি এ ধরনের আচরণ শুধু অমানবিক নয়, এটি আমাদের গোটা জাতির মূল্যবোধকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এরা এমপিওভুক্ত নন, অথচ তাঁরা দিনের পর দিন, বছরের পর বছর শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন বিনা সুবিধায়। কোনো স্বাস্থ্যসুবিধা নেই, কোনো পেনশন নেই—তবুও তাঁরা তাঁদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এই ভালোবাসার প্রতিদান হিসেবে তাঁরা পেলেন লাঠির আঘাত?

এই হামলা কেবল শিক্ষকদের নয়, এটি আমাদের দেশের শিক্ষার মানের প্রতি সরাসরি কঠোরাঘাত। বেসরকারি কলেজের শিক্ষকরা কেনো এতোদিন ধরে অবহেলিত? কেনো তাঁদের কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয় হয় না? এই অবিচারের প্রতিবাদ করতেই তো তাঁরা রাস্তায় নেমেছিলেন। আর এর প্রতিউত্তরে তাঁরা পেলেন রক্তাক্ত হওয়ার নির্মমতা!
আমরা এই বর্বর হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। শিক্ষকদের রক্তের দাগ মুছে ফেলার সময় এসেছে সরকারের। বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকরা অবিলম্বে ন্যায্য অধিকার এবং স্বীকৃতি চাইছেন। তাঁদের ন্যায্য দাবি পূরণ না করা মানে আমাদের প্রজন্মের ভবিষ্যৎকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া।
সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষকদের রক্ত আর কাঁদানে গ্যাস দিয়ে তাঁদের কণ্ঠরোধ করা সম্ভব নয়। শিক্ষকদের সম্মান না করলে, শিক্ষাকে মর্যাদা না দিলে, সমাজ কোনোদিনই এগিয়ে যেতে পারবে না।
১৭ অক্টোবরের অমানবিক পুলিশি হামলার সাথে যারা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত—তাদের প্রতি আমাদের ঘৃণা সীমাহীন। যে রাষ্ট্র শিক্ষকদের রাস্তায় ফেলে পেটায়, সেই রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কী হতে পারে?
শিক্ষকরা জাতির মেরুদণ্ড, তাঁদের উপর লাঠিচার্জ করার অধিকার কারো নেই। যারা এই অন্যায়ের সাথে যুক্ত, তারা শুধু শিক্ষকদেরই অপমান করেনি, পুরো জাতির মূল্যবোধকে পদদলিত করেছে। তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেই; তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণার দাবানল জ্বলবেই—আমাদের শিক্ষার আলোকে তারা কোনোদিনই নেভাতে পারবে না।
যারাই এই ঘৃণ্য পুলিশি হামলার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত—তাদের আমরা ধিক্কার জানাই। তারা শিক্ষার শত্রু, জাতির শত্রু, মানবতার শত্রু। এমন জঘন্য কর্মকাণ্ডের দায় কেউ এড়াতে পারে না। যারা শিক্ষকদের উপর আঘাত করেছে, তারা আমাদের জাতির মূল্যবোধের বিপর্যয় ঘটিয়েছে এবং তাদেরকে ইতিহাস কোনোদিন ক্ষমা করবে না।
সে যেই হোক, ক্ষমতাধর হোক বা ক্ষমতার পেছনে থাকা অদৃশ্য হাত—তাদের প্রতি শুধু ঘৃণা, ঘৃণা এবং ঘৃণা।
লেখকঃ মো. তানজিম হোসাইন, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ।