[bangla_date] || [english_date]

নিজস্ব প্রতিবেদক *

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় র‍্যাব পরিচয়ে সুমন হালদার নামে এক ব্যবসায়ীর ছিনতাই হওয়া ৯৫ ভরি স্বর্ণের মধ্যে ৪৮ ভরি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত আরও দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মূলত র‍্যাব কর্মকর্তা শামীমুজ্জামান শামীমের নেতৃত্বে এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিল।বুধবার ছিনতাই চক্রের সদস্য শাহ আলম মিয়ার গোয়ালঘরের মাটি খুঁড়ে এসব স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। তবে বাকি ৪৭ ভরির এখনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান।

গ্রেফতারকৃতরা হলো—ফরিদপুর সদরের রঘুনন্দনপুর এলাকার সিদ্দিক শেখ (৫০) ও রাজবাড়ীর শ্রীপুরের শাহ আলম মিয়া (৪৮)। বুধবার সকালে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মুন্সীগঞ্জের কুচিয়ামোড়া টোলপ্লাজা থেকে সিদ্দিককে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে রাজবাড়ীর শ্রীপুর থেকে শাহ আলমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শাহ আলমের গোয়ালঘরের মাটি খুঁড়ে ৪৮ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়।

স্বর্ণ ছিনতাই ও ব্যবসায়ীকে অপহরণ মামলার তদন্তকালে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় ডাকাত দলের সদস্য সিদ্দিককে বুধবার কুচিয়ামোড়া টোলপ্লাজা থেকে গ্রেফতার করা হয় জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘সিদ্দিকের দেওয়া তথ্যে অপর সদস্য শাহ আলমকে গ্রেফতার করা হয়। শাহ আলমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তার নিজ বাড়ির গোয়ালঘরের মাটি খুঁড়ে ৪৮ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

পুলিশ, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১ জুন সকাল ৭টার দিকে ঢাকার দোহারের জয়পাড়া বাজারের ‘নির্ঝর অলঙ্কার নিকেতন’-এর মালিক সুমন হালদার ৯৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে অটোরিকশাযোগে সিংগাইরের চারিগ্রাম বাজারে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠজন ও অটোরিকশাচালক ছিলেন। নবাবগঞ্জের নয়নশ্রী এলাকা থেকে র‍্যাবের স্টিকারযুক্ত একটি মাইক্রোবাস তাদের পিছু নেয়। অটোরিকশাটি সিংগাইর উপজেলার জামশা ইউনিয়নের আমতলা গ্রামে পৌঁছালে মাইক্রোবাস থেকে পাঁচ জন নেমে র‍্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে তাদের তিন জনকে গাড়িতে তুলে নেয়। এরপর তাদের চোখ-মুখ বেঁধে সুমনের স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়। গাড়িটি আমতলা বাজার অতিক্রমের সময় যানজটে আটকা পড়ে। এ সময় গাড়ি থেকে চিৎকার দেন তারা। স্থানীয়রা ভেতরে তিন জনকে চোখ বাঁধা অবস্থায় দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে গাড়িটি ঘিরে ধরেন। পরিস্থিতি বুঝে একজন স্বর্ণ নিয়ে পালিয়ে যায়। বাকি পাঁচ জনকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে জনতা।

তারা হলো—ফরিদপুরের রাধানগর এলাকার সিকান্দারের ছেলে র‌্যাব কর্মকর্তা শামীমুজ্জামান শামীম, একই এলাকার মালেক শেখের ছেলে মিরাজুল শেখ (২৮), মেঘমাচি এলাকার সোলেমান মৃধার ছেলে সম্রাট (২৮), পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার পাটেশ্বর গ্রামের মৃত ফরমান প্রামাণিকের ছেলে আমিজ উদ্দিন (৫০) ও মাইক্রোবাসচালক সাভারের আশুলিয়ার খেজুরটেক গ্রামের মৃত আব্দুর রহিম বক্সের ছেলে জানিব (৬২)। এ সময় তাদের সঙ্গে মোটরসাইকেলে থাকা সিদ্দিক শেখ ছিনতাইকৃত স্বর্ণ নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সুমন হালদার।

এ নিয়ে স্বর্ণ ছিনতাইয়ের ঘটনায় সাত জনকে গ্রেফতার করা হলো উল্লেখ করে সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়ারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌‘সর্বশেষ বুধবার গ্রেফতারকৃত দুজনকে বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ৪৮ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাকি ৪৭ ভরি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।’

র‌্যাব কর্মকর্তা শামীমুজ্জামান শামীমের নেতৃত্বে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটেছিল উল্লেখ করে ওসি জিয়ারুল আরও বলেন, ‘শামীমুজ্জামান সেনাসদস্য হলেও র‌্যাব-১-এ গাজীপুর ট্রেনিং সেন্টারে উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) হিসেবে কর্মরত। আইডি নম্বর ২০৪৫২৫। তার নেতৃত্বে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী মাইক্রোবাসটি ভাড়া করেছিল আসামিরা। ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত ওই গাড়ি, র‌্যাবের আইডি কার্ড ও স্টিকার জব্দ করা হয়েছে। সেনাসদস্য হওয়ায় তাকে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সেনাবাহিনী।’