[bangla_date] || [english_date]

মোহাম্মদ ইউসুফ *

বক্তব্য রাখছেন সীতাকুণ্ডের সংসদ-সদস্য এস এম আল মামুন

গত ৩০ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে “সীতাকুণ্ডে কৃষিজমিতে বর্জ্য শোধানাগার কারখানা স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে, মেয়রের- না”- শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় চাটগাঁরবাণী অনলাইন নিউজপোর্টালে। ভূমিমন্ত্রী, শিল্পসচিব,চট্টগ্রামের ডিসি,সীতাকুণ্ডের ইউএনও,সীতাকুণ্ড পৌরসভার মেয়র, সীতাকুণ্ড বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কের পরিচালক, জাইকা প্রতিনিধি, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা বর্জ্য শোধানাগার নিয়ে তাঁদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এ প্রতিবেদনে। প্রস্তাবিত বর্জ্য শোধনাগার প্রকল্প স্থাপন প্রক্রিয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে চাটগাঁর বাণীকে সেদিন বলেছিলেন , “এ ব্যাপারে আমরা অংশীজনদের নিয়ে সভা করে সিদ্ধান্ত নেবো।” তারই আলোকে আজ (২৩মে) সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম শিল্পমন্ত্রণালয়ের অধীন The Establishment of Treatment Storage and Disposal Facility (TSDF) for Ship Recycling Industry and others in Chattogram প্রকল্পের আওতায় জাহাজভাঙ্গা শিল্পসহ অন্যান্য শিল্পের বর্জ্য ট্রিটমেন্ট স্টোরেজ ও ডিসপোজাল ফ্যাসিলিটি প্রকল্প স্থাপনের ব্যাপারে অংশীজনদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন।
সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ইউএনও’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানঅতিথি ছিলেন সীতাকুণ্ডের সংসদ-সদস্য এস এম আল মামুন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সীতাকুণ্ড পৌরসভার মেয়র বদিউল আলম ও ইকোপার্কের বন্যপ্রাণি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা ইসমত আরা নূর । এতে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাবিব উল্লা, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তাহমিনা আরজু, সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. সোলায়মানসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দ, জাইকা ও নিউভিশন সলিউশনস লিমিটডের প্রতিনিধিবৃন্দ, সীতাকুণ্ড বোটানিক্যাল গার্ডেন ও, ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা (পর্যটন রেঞ্জ) মো.আলাউদ্দিন ও রেঞ্জ কর্মকর্তা (পুনর্বাসন রেঞ্জ) মো.মাসুম কবীরসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।

জাহাজভাঙ্গা শিল্পসহ অন্যান্য শিল্পের বর্জ্য ট্রিটমেন্ট স্টোরেজ ও ডিসপোজাল ফ্যাসিলিটি প্রকল্প স্থাপনের ব্যাপারে অংশীজনদের নিয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ইউএনও’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধানঅতিথি হিসেবে আছেন সীতাকুণ্ডের সংসদ-সদস্য এস এম আল মামুন

মতবিনিময়সভায় প্রধানঅতিথি এস এম আল মামুন এমপিসহ প্রায় সকল বক্তার বক্তব্যের সুর ছিল একই। তাহলো, সীতাকুণ্ড বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে আবাদী জমিতে বর্জ্য শোধনাগার প্রকল্প স্থাপন করা হলে বন,বন্যপ্রাণি,জীববৈচিত্র্য,এলাকার পরিবেশ- প্রতিবেশ ও ইকো-ট্যুরিজম এবং জনজীবনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাই,এলাকার সার্বিক পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে- এ ধরনের একটি পরিবেশবিধ্বংসী প্রকল্প সীতাকুণ্ড পৌরসভায় না করে অন্যকোনো জায়গায় করার ব্যাপারে সভায় সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের অংশীজন জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার( জাইকার) একজন প্রতিনিধি অনলাইনে সভায় সংযুক্ত ছিলেন। সভার সভাপতি ইউএনও কে এম রফিকুল ইসলাম সীতাকুণ্ড পৌরসভায় বর্জ্য শোধানাগার না করার ব্যাপারে সভায় যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়,তা মুঠোফোনে জাইকা প্রতিনিধিকে জানিয়ে দেন। তবে এ সিদ্ধান্ত কতোটা কার্যকর হয়- তা সময়ই বলে দেবে।
উল্লেখ্য,জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ও নিউভিশন সলিউশনস লিমিটেড যৌথভাবে বর্জ্য শোধানাগার কারখানাটি নির্মাণের লক্ষে এখানকার মৌলভীপাড়া এলাকার ধানিজমির মাটি ও ভূগর্ভস্থ পানিতে গত দুই/তিন বছর ধরে জাইকা দল জরিপ চালাচ্ছে। ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। এ উপলক্ষে গত ২০ এপ্রিল ২০২৪ স্থানীয় জমিমালিকদের নিয়ে জাইকা প্রতিনিধি দল সীতাকুণ্ড পৌরসভার মৌলভীপাড়ার ইসলাম সর্দারের বাড়িতে এক পরামর্শসভার আয়োজন করে। এতে স্থানীয় শতাধিক জমিমালিক, জাইকা প্রতিনিধি দল,শিল্পমন্ত্রণালয়ের উপসচিব সঞ্জয় কুমার ঘোষ ও সীতাকুণ্ড পৌরসভার স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউল আলম চৌধুরী মুরাদ উপস্থিত ছিলেন।সভায় কারখানাটি স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা, সম্ভাব্যতা, পরিবেশবান্ধবসহ ইতিবাচক দিকগুলো প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের চাকরির সুবিধা দেয়ারও আশ্বাস দেয়া হয়। এছাড়া জাইকা প্রতিনিধিদল নির্মিতব্য কারখানার জন্যে আগামী বছর থেকে শুরু করে ২০২৬ সালের মধ্যে জমি অধিগ্রহণের কথা জানান। এর পরবর্তী দুবছরের মধ্যে কারখানা নির্মাণের কাজ শেষ করে ২০২৯ সালে উৎপাদনে যাওয়ার কথা বলা হয়। অথচ, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রতিদিন ঢাকা,নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিল্পকারখানা ও জাহাজভাঙ্গাশিল্পের ৭০/৮০টি ৩২চাকার বর্জ্যলরী ঢুকবে সীতাকুণ্ড পৌরসভায়। বিষাক্ত ও দুর্গন্ধময় হয়ে ওঠবে পৌরএলাকার আলো-বাতাস। মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে পৌরবাসী; মহাবিপর্যয়ের মহাসাগরে হাবুডুবু খাবে ইকোপার্ক ও এর পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য।
লেখক- প্রধান-সম্পাদক,সাপ্তাহিক চাটগাঁর বাণী ও চাটগাঁরবাণীডটকম