[bangla_date] || [english_date]
বক্তব্য রাখছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।

একগুচ্ছ নাগরিক সমস্যার সমাধান চাইলেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।

শনিবার (১৩ জুলাই ২০২৪ইং) বিকেলে খোরশেদ আলম সুজনের উত্তর কাট্টলীস্থ বাসভবনে নাগরিক উদ্যোগের এক সভায় নাগরিক সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং সমস্যাগুলোর সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান।

এ সময় সুজন বলেন, চট্টগ্রামে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধন করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে আবেদনকারীদের। জেলা নির্বাচন অফিসে এনআইডি সংশোধনের জন্য আবেদনকারীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগীদের মতে, বর্তমান সময়ে এনআইডি সংশোধনের মতো আর কঠিন কোনো কাজ হতে পারে না। দেখা যাচ্ছে যে, সামান্য সংশোধনের জন্যও মাসের পর মাস নির্বাচন অফিসে হাজিরা দিতে হচ্ছে। এমনও দেখা গিয়েছে যে, বছরের পর বছর সংশোধনের জন্য কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এমতাবস্থায় জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধন প্রক্রিয়াটি সহজতর করার জন্য আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগনের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর ফলে সাধারণ জনগণ উপকৃত হতে শুরু করে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে দেখা যাচ্ছে যে, সরকারের বিভিন্ন জনবান্ধব কর্মসূচী ভন্ডুল করতে তৎপর এক শ্রেণীর অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীগণ। কোনো প্রকার কারণ ছাড়াই একেক দিন একেকটি পণ্যের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বাজারের এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ ভোক্তা একেবারেই অসহায়। দীর্ঘদিন ধরে অনেকটা বেশি দামে ক্রয় করতে হচ্ছে মধ্যবিত্তের রান্নার অতি প্রয়োজনীয় উপকরণ আলু এবং ব্রয়লার মুরগির ডিম। দেশি হাস-মুরগির ডিম ক্রেতাদের হাতের নাগালের বাহিরে। আবার দেখা যাচ্ছে যে, পরিকল্পিতভাবে চালের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। পাইকারি বাজারে সব ধরনের চিকন ও মোটা চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বেশ চড়া। ফলে নতুন করে চালের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে। এ অবস্থায় চালের বাজারে নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক আরো বলেন, চট্টগ্রামে চাহিদার তুলনায় অধিক পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও প্রাপ্তির ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বঞ্চিত হচ্ছে। এর ফলে বিভিন্ন শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ইপিজেডগুলো সময়মতো পোশাক সরবরাহ করতে না পারলে নতুন অর্ডার বাতিলেরও সম্ভাবনা রয়েছে। সামগ্রিকভাবে এর প্রভাব গিয়ে পড়ছে জাতীয় অর্থনীতির উপর। সরকারের নানামূখী পদক্ষেপের ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়লেও সম্প্রতি লোডশেডিংয়ের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে উৎপাদমূখী শিল্প-কারখানা ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে গ্রাহকের বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পণ্যও নষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় লোডশেডিংয়ের ফলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই চট্টগ্রামের প্রাপ্যতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম এর প্রধান প্রকৌশলীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন সুজন।

তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান-যা চট্টগ্রাম নগরীর পানি সরবরাহের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। ওয়াসা চট্টগ্রাম নগরীতে পানি সরবরাহের পাশাপাশি ‘‘চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্প (১ম পর্যায়)’’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। চট্টগ্রাম নগরীর বাসাবাড়ীর রান্নাঘর, গোসলখানা ও সেপটিক ট্যাংক হতে নির্গত তরল বর্জ্য সরাসরি নালা ও খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কর্ণফুলী এবং হালদা নদী প্রতিনিয়ত দূষণের পাশাপাশি পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। তাই উক্ত প্রকল্পের আওতায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পয়ঃপাইপ লাইন স্থাপন করা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যে, এসব পয়ঃপাইপ লাইন স্থাপনের জন্য নগরীর অলিগলির রাস্তা কর্তন করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় মোট রাস্তার অর্ধেক অংশ ঘেরা দিয়ে রাস্তা কর্তন কিংবা অন্যান্য কাজ সম্পাদন করা হচ্ছে। এর ফলে দীর্ঘসময় যানজটে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। আবার এসব যানজট অলিগলি পেরিয়ে মূল সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে। তাই ওয়াসাকে জনভোগান্তি মাথায় রেখে প্রকল্পের কাজ শেষ করার অনুরোধ জানান সুজন।

খোরশেদ আলম সুজন বলেন, বর্তমান সময়ে শব্দ দূষণ মারাত্নক আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে মাইকের যত্রতত্র ব্যবহারে জনজীবন অতিষ্ঠ। সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় কিংবা অন্যান্য অনুষ্ঠানের নামে অহরহ মাইক ব্যবহার করা হচ্ছে। মাইকের উচ্চস্বরের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, এসব মাইক ব্যবহারে প্রশাসনের অনুমতি গ্রহণের বিধান থাকলেও কেউ এসব বিষয় মানছে না। ফলত যে যার ইচ্ছেমতো মাইকের অপব্যবহার করছে। এমনকি গভীর রাত অবধি অবাধে মাইক বাজানো হচ্ছে। মাইকের এসব অপব্যবহার শিশু এবং বৃদ্ধদের মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার সৃষ্টির কারণ হলেও কাউকে এসব কাজ থেকে নিবৃত্ত করা যাচ্ছে না। প্রশাসনও এসব বিষয়ে কঠোর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দিনের পর দিন মাইকের উৎপাত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই শব্দ দূষণ বন্ধে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক উদ্যোগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাজী মো. ইলিয়াছ, হাজী মো. সিরাজ, আব্দুর রহমান মিয়া, সদস্য সচিব হাজী মো. হোসেন, মো. শাহজাহান, ছালেহ আহমদ জঙ্গী, শিশির কান্তি বল, অধ্যক্ষ কামরুল হোসেন, হাফেজ ওকার উদ্দিন, মো. সেলিম, অনির্বাণ দাশ বাবু, সোলেমান সুমন, মো. জাহাঙ্গীর, রকিবুল আলম সাজ্জী, রাজীব হাসান রাজন, ফেরদৌস মাহমুদ আলমগীর, মাহফুজ চৌধুরী, শুভ ঘোষ, কামরুজ্জামান রানা, ফয়সাল বাদশা প্রমুখ।