[bangla_date] || [english_date]

নিজস্ব প্রতিবেদক *

বর্ষার শেষ দিকে শ্রাবণের মাঝামাঝি সময়ে গত দুইদিন  থেকে শুরু হলো লাগাতার  বৃষ্টি। গরমের তীব্রতা  কমে পরিবেশ ঠান্ডা হলেও দেখা দেয় আরেক বিপত্তি। টানা বৃষ্টির কারণেই তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম শহরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও রাস্তাঘাট এবং অলিগলি। বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়েছে পানি। নগরবাসী এতে পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে ।

একটু ভারী বর্ষণ হলেই ডুবে যায় চট্টগ্রাম শহরের নিচু এলাকা- এটা অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়েছে ।  সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবারও অতি ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে। অবশ্য চলতি মৌসুমে গতকালসহ এ পর্যন্ত পাঁচদিন জলজট ও জলাবদ্ধতায় অসহনীয় হয়ে ওঠে জনজীবন।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার দিবাগত মধ্য রাত থেকে শুরু হয় বৃষ্টি। যা গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত একটানা প্রায় ১০টা পর্যন্ত পড়ে। এরপরও দিনভর থেমে থেমেও বৃষ্টি হয়েছে। তবে রাতের বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় শহরের নিচু এলাকা। বেশিরভাগ এলাকার প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে ডুবে যায়। বাসা–বাড়ি, দোকানপাটেও পানি ঢুকে পড়ে। পানিবন্দী হয়ে পড়েন লোকজন। সীমাহীন দুর্ভোগ হয় তাদের। সকালে অফিস–আদালতসহ অন্যান্য কর্মস্থলমুখী লোকজনের দুর্ভোগ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। জলাবদ্ধতায় শহরের প্রধান বা মূল সড়কগুলোতে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এতে সৃষ্টি হয় যানজট। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে হেঁটেই কর্মস্থলে পৌঁছান। আবার মোটরযান বন্ধ থাকার সুযোগে মর্জিমাফিক ভাড়া দাবি করার অভিযোগ আছে রিকশাওয়ালাদের বিরুদ্ধে।

জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরে তিনটি সংস্থার ১৪ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকার চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা প্রতিবছর আশ্বাস দেন, জলাবদ্ধতা ‘সহনীয়’ থাকবে। কিন্তু একটু ভারী বর্ষণ হলেই ডুবে যায় শহরের নিচু এলাকা। দুর্ভোগ বাড়ে নগরবাসীর।

জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ’র দুইটি, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) একটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটিসহ চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে সিডিএ’র দুটি প্রকল্প হচ্ছ– ৮ হাজার ৬২৬ কোটি ৬২ লাখ টাকার ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনর্খনন, সমপ্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মেগাপ্রকল্প এবং ২ হাজার ৭৭৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকার ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প।

এছাড়া চসিকের রয়েছে এক হাজার ৩৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা ‘নগরের বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন’ শীর্ষ প্রকল্প এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক হাজার ৬২০ কোটি টাকার ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা বা জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প।

এদিকে প্রকল্পের কাজ চলার মধ্যেই গত বছর ৭ বার ডুবে এ শহর। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত পাঁচবার। চলতি মৌসুমে গত ১ জুলাই, ৩০ জুন, ২৭ ও ৬ মে চার দিন বৃষ্টি হয়েছে নগরে। ওই চার দিনই নগরের অনেক নিম্বাঞ্চলে জলযট সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে বেশি ভোগান্তি হয়েছে ২৭ মে। ওইদিন বিকেল ৩টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ২৪১ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় নগরে। এতে জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে দুর্ভোগ পোহান নগরবাসী। সর্বশেষ গতকালও জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ হওয়ায় নগরবাসী জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান প্রকল্পগুলোর সুফল নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।

লাগাতার বর্ষণে নগরীর প্রবর্তক মোড়, জিইসি, ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, মোহাম্মদপুর, শুলকবহর, বহাদ্দারহাট, কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকা, কাতালগঞ্জ বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে, পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, কাপাসগোলা, ষোলশহর, বাকলিয়া, হালিশহর সবুজবাগ, ইপিজেড, সিমেন্ট ক্রসিং, পূর্ব কাঠগড়, মুসলিমাবাদ, কেবি আমান আলী সড়ক, ষোলশহর, আতুরার ডিপোসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু থেকে কোমরে সমান পানি উঠেছে।

এদিকে হাঁটুর বেশি পানি জমে যায় মোহাম্মদপুর মাজার রোডে। মুরাদপুর সড়কটির পাশের বিভিন্ন দোকানেও পানি ঢুকে যায়। মুরাদপুরে

এ দিকে জলাবদ্ধতা হলেই রাস্তায়  যানবাহনের সংকট দেখা দেয় । গাড়ির অপেক্ষা করতে থাকে সড়কে শত শত পথচারী । চালকরা এসময় ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করে যাত্রীসাধারণের কাছ থেকে। করছিল । বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে অনেক গণপরিবহণেও । অনেক বড় সড়কে স্বাভাবিক গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিছু গাড়ি আটকে পড়ে পানিতে। দুর্ভোগে পড়েন যাত্রী ও পথচারীরা।

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৪৯.৬ মিলিমিটার। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস এ বৃষ্টি রেকর্ড করেছে। সকাল ৯টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় যা ছিল ১১২ মিলিমিটার।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো.আলী আকবর ওভার ফোনে জানান, মৌসুমী বায়ু শক্রিয় থাকায় এ বৃষ্টিপাত আগামি ২৪ ঘণ্টা থাকতে পারে। পরদিন থেকে কিছুটা কমার সম্ভাবনা আছে। বৃহস্পতিবার ভোর ৫টায় জোয়ার শুরু হয়েছে। ভাটা শুরু হয় ১০টা ৫১ মিনিটে।