বিশেষ প্রতিবেদক *

লেবাননজুড়ে নজিরবিহীন বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এখন পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ অন্তত ৪৯২ জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ১২শ ছাড়িয়েছে। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই হতাহতের তথ্য নিশ্চিত করেছে।
লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলি বাহিনীর মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে হামলা পালটা হামলা অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে লেবাননের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে বেশ কয়েক দফায় বিমান হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী।
ইসরাইল বলেছে, তারা লেবাননে প্রায় ৩০০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরুর পর প্রতিবেশী দেশে এটাই ইসরাইলি বাহিনীর সবচেয়ে বড় হামলা।
হামলায় বিনতে জবেইল, আইতারুন, মাজদাল সেলেম, হুলা, তোরা, কলাইলেহ, হারিস, নাবি চিত, তারায়া, শ্মেস্টার, হারবাতা, লিবায়া ও সোহমোরসহ কয়েক ডজন শহরকে টার্গেট করা হয়েছে।
বেশিরভাগ হামলাই চালানো হয়েছে দক্ষিণ ও পূর্ব লেবাননের আবাসিক এলাকা লক্ষ্য করে। হামলায় নাবাতিয়েহ ও বেকা উপত্যকা অঞ্চলে বহু বাড়ি, গুদাম ও কারখানায় আগুন ধরে গেছে। লেবানিজ সিভিল ডিফেন্স সদস্যরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন।
লেবানিজ সিভিল ডিফেন্স বলেছে, তাদের জরুরি উদ্ধার দলগুলো ইসরাইলি হামলার ফলে দক্ষিণাঞ্চলে নাবাতিয়েহ ও বেকা এলাকায় বহু বাড়ি, কারখানা ও গুদামের আগুন নেভাতে কাজ করছে।
এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, তাদের কর্মীরা আহতদের চিকিৎসা দেয়ার কাজও চালিয়ে যাচ্ছে। যারা নিহত হয়েছেন তাদের লাশ উদ্ধার করছেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরাইলি হামলায় বহু মানুষ নিহত হয়েছেন। হতাহতদের মধ্যে নারী, শিশু ও চিকিৎসক রয়েছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দারা বলছেন, সোমবার সকাল থেকেই একের পর এক ফোন কলে তাদেরকে দ্রুত বাড়ি ছাড়তে বলা হয়।
লেবাননের টেলিকম অপারেটর কোম্পানিগুলো বলছে, ইসরাইল থেকে ৮০ হাজার অজ্ঞাত নম্বর থেকে কল করা হয়। ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
ইসরাইলের হামলার জবাবে পাল্টা রকেট ছুড়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি, উত্তর ইসরাইলে নেতানিয়াহু বাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করে শতাধিক রকেট হামলার দাবি করেছে। রকেটের আঘাতে অঞ্চলটিতে ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে।
এর আগে শনি ও রোববার, হিজবুল্লাহর অন্তত ৪০০টি ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইসরাইল। ওই হামলায় সশস্ত্র গোষ্ঠীটির এক হাজারের বেশি রকেট উৎক্ষেপণ যন্ত্র ধ্বংসের দাবি করে তেল আবিব। অঞ্চলটিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সব কিছুই করা হবে বলে জানান ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
যদিও, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর হুমকিকে পাত্তা দিচ্ছে না হিজবুল্লাহ। সশস্ত্র গোষ্ঠীটির এক শীর্ষ নেতা পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত আছে তাদের যোদ্ধারা। চলমান সংঘাত প্রতিরোধ আন্দোলনকে নতুন পর্যায়ে নিয়ে গেছে বলে জানান ওই নেতা।
দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি আক্রমণের ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। যেকোনো সময় আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে বলে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে। তবে, সংঘাত যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য চেষ্টা চালানোর কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।