পুলিশ বাহিনী সংস্কার করে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অধিকাংশ মানুষ। সংস্কারের মাধ্যমে কেমন পুলিশ দেখতে চান- এমন প্রশ্নের উত্তরে ৮৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষই জানিয়েছেন এই প্রত্যাশার কথা। পুলিশ সংস্কার কমিশনের পরিচালনায় ‘কেমন পুলিশ চাই’ শীর্ষক জনমত জরিপের ফলাফলে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য সচিব আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। পুলিশ সংস্কার কমিশনের ওয়েবসাইটে www.prc.mhapsd.gov.bd) গেলে এই জনমত জরিপের ফলাফল পাওয়া যাবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রতিহত করতে কিছুসংখ্যক পুলিশ সদস্যের সহিংস ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্ব জুড়ে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সংস্কার এখন সময়ের দাবি। সেই লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ বাহিনীর সংস্কারের লক্ষ্যে ‘পুলিশ সংস্কার কমিশন’ গঠন করেছে, যার কার্যক্রম চলমান।
পুলিশ সংস্কার কমিশন সর্বসাধারণের মতামত জানতে ‘কেমন পুলিশ চাই’ শিরোনামে জনমত জরিপ পরিচালনা করে। ২৪ হাজার ৪৪২ জন এই জরিপে অংশ নিয়েছেন। যার মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী চাকরিজীবী। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অংশ নিয়েছেন ছাত্ররা, তাদের অংশগ্রহণ ২৭ দশমিক ২ শতাংশ।
জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সংস্কারের মাধ্যমে কেমন পুলিশ দেখতে চান এমন প্রশ্নের উত্তরে সবচেয়ে বেশি মতামত এসেছে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশ চাওয়ার ক্ষেত্রে। ৮৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষই চেয়েছেন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশ। নিরপেক্ষ ও আইনের শাসনে অনুগত পুলিশ চেয়েছেন ৮৬ দশমিক ২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী এবং দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ দাবি করেছেন ৮৪ ভাগ মানুষ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংস্কার জরুরি মনে করেন এমন প্রশ্নে পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অবসান চান ৮৯ দশমিক ৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশের দুর্নীতি বন্ধ চান ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ। এ ছাড়া গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বিবেচনায় অপরাধী পুলিশকে শাস্তির আওতায় আনার পক্ষে মত দিয়েছেন ৭৪ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা।
বিগত সরকারের আমলে পুলিশের করা ‘ভুয়া বা গায়েবি মামলা’ দিয়ে বিরোধী দল-মত দমন করে আইনের অপব্যবহারের অপসংস্কৃতি চালু হয়েছে উল্লেখ করে প্রশ্ন করা হয়, এই অপব্যবহার বন্ধে মামলা রুজুর ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ১৮৯৮ ধারা সংস্কার চান কি না এমন প্রশ্নে ৯৫ ভাগ উত্তরদাতাই সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন।
এ ছাড়া মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও অনুগত পুলিশ সদস্যদের উৎসাহিত করতে বার্ষিক কর্মমূল্যায়নের পুরস্কার এবং তিরস্কারের ব্যবস্থা রাখার পক্ষে মত দেন ৪৮ শতাংশ উত্তরদাতা। রাজধানীতে সভা-সমাবেশ আয়োজনের আগে পুলিশ কমিশনারের অনুমতি গ্রহণকে মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী বলে মনে করেন প্রায় ৫২ শতাংশ উত্তরদাতা।
৮২ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারাকে অপব্যবহারযোগ্য বলে মনে করেন। ৪৬ শতাংশ উত্তরদাতা এই ধারাটির যুগোপযোগী সংস্কার চান। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারায় পুলিশ হেফাজতে বা রিমান্ডে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের ধারাটি সংশোধন ও সংস্কার চান প্রায় ৯২ শতাংশ উত্তরদাতা। এ ছাড়া তল্লাশির সময় পুলিশ পরিচয় দিতে অস্বীকার করলে বা বিনা ওয়ারেন্টে তল্লাশি করতে চাইলে তার প্রতিকারের একটি কার্যকর কল সার্ভিস চালুর পক্ষে মত দেন ৮৭ শতাংশ উত্তরদাতা।