রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
তুলনামূলকভাবে যোগ্য ও ভালো মানুষগুলো নেতৃত্বে আসার সুযোগ তৈরি হবে

জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রয়োজন দলীয় প্রতীক ছাড়া ইউপি নির্বাচন

মোহাম্মদ ইউসুফ

দেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষ রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ও নাগরিক সেবা ভোগ করে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় পট পরিবর্তনে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের গরহাজিরের কারণে জনগণের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি,নাগরিকসেবা থেকে বঞ্চনাসহ সার্বিকভাবে গ্রামাঞ্চলের অবস্থা দুর্বিসহ হয়ে ওঠেছে। এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের একমাত্র পথ দলীয় প্রতীক ছাড়াই আগের মতো  ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করা। এর ফলে এলাকার তুলনামূলকভাবে যোগ্য ও ভালো মানুষগুলো ইউনিয়ন পরিষদের নেতৃত্বে আসার সুযোগ তৈরি হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অনায়াসে এ যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে পারে। এর মাধ্যমে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটি অনুকূল পরিবেশও তৈরি হবে। জাতীয় নির্বাচনের মহড়া হিসেবে দ্রুততম সময়ে ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা- এখন সময়ের দাবী। তাছাড়া সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য অবাধ ও সুষ্ঠু ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠতে পারে-যার প্রভাব পড়বে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।

বাংলাদেশে পল্লী-অঞ্চলের সর্বনিম্ন প্রশাসনিক ইউনিট ইউনিয়ন পরিষদ। গ্রাম চৌকিদারি আইনের ১৮৭০ এর অধীনে ইউনিয়ন পরিষদের সৃষ্টি হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এর ভূমিকা নিরাপত্তামূলক কর্মকাণ্ডে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরবর্তীকালে এটিই স্থানীয় সরকারের প্রাথমিক ইউনিটের ভিত্তিরূপে গড়ে ওঠে। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স, চারিত্রিক সনদপত্র, ভূমিহীন সনদপত্র, ওয়ারিশান সনদপত্র, অবিবাহিত সনদপত্র, প্রত্যয়নপত্র, অস্বচ্ছল প্রত্যয়নপত্র, নাগরিক সনদপত্র,উত্তরাধিকার সনদপত্র ইত্যাদি সেবা প্রদান করা হয়।গত ৫আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্বের পদ ছেড়ে দেশ থেকে পালানোর পর সাড়ে ৪ হাজার ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যে বেশির ভাগই এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান। স্থানীয় সরকার বিভাগের তথ্য বলছে, এই সংখ্যা ৩ সহস্রাধিক। এই পটভূমিতে জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় ইউপি চেয়ারম্যানদেরও অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এছাড়া মামলা-হামলার ভয়ে সিংহভাগ মেম্বার পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তাদের ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হলেও মূলত জনসমস্যার সমাধান তেমনকিছু হচ্ছে না।bsrm

স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদের আইন অনুযায়ী,পদত্যাগ করলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যপদ শূন্য হবে। এ ছাড়া পদত্যাগ, মৃত্যু বা অন্য কারণে চেয়ারম্যান পদ শূন্য হলে নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব না নেয়া পর্যন্ত প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করবেন। তবে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি বা দণ্ডিত হলে কিংবা পরিষদের স্বার্থপরিপন্থি কাজ করলে চেয়ারম্যানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবে সরকার। এ ছাড়া দুর্নীতি, অসদাচরণ বা নৈতিক স্খলনজনিত কোনো অপরাধ কিংবা বিনা অনুমতিতে দেশত্যাগের কারণে ইউনিয়ন পরিষদ আইন অনুযায়ী তাদের অপসারণের সুযোগ রয়েছে।

ব্রিটিশ আমল থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো নির্দলীয় ভিত্তিতে হয়ে আসছে। যদিও ক্ষমতাশীনেরা এসব সংস্থা ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে। শেখ হাসিনা সরকার ২০১৫ সালের নভেম্বরে পাঁচটি আইন সংশোধন করে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুযায়ী সর্বস্তরের স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। নির্দলীয় লোক নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার পথ পুরোপুরি রুদ্ধ হয়ে যায়। সরকারদলীয় প্রার্থীরা দলীয়মনোয়ন পাওয়া মানে নির্বাচিত হওয়া- এমন ধরনের একটি বিশ্বাস জনমনে জায়গা করে নিয়েছিল। বিরোধীদলের ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার মতো কোনো পরিবেশই ছিল না। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেশিরভাগ চেয়ারম্যান-মেম্বার নির্বাচিত হতো। নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ,সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হতেন।

পরিশেষে বলতে চাই, আগামী ডিসেম্বর কিংবা  নতুন বছরের জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারিতে দেশে দলীয় প্রতীক ছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন করা যায় তাহলে  সারা দেশে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিরাই ইউনিয়ন পরিষদে প্রতিনিধিত্ব করবেন। নির্বাচনের প্রতি গণমানুষের আস্থা ফিরে আসবে। গ্রামাঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে। শুধু ইউনিয়ন পরিষদ নয়, জাতীয় থেকে স্থানীয় সরকার সব পর্যায়ে নির্বাচন ব্যবস্থাকে যথাযথভাবে কার্যকর করতে হবে। দলীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে মুক্ত রাখতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ কর্তৃত্ব, জনবল, আর্থিক সামর্থ্য ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণে স্থানীয় জনগণকে প্রয়োজনীয় সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। বিশেষত ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা অত্যন্ত প্রকট।ads din

লেখক- প্রধান-সম্পাদক, সাপ্তাহিক চাটগাঁর বাণী ও চাটগাঁরবাণীডটকম

 

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও