[bangla_date] || [english_date]

বিশেষ প্রতিনিধি *

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড  উপজেলার বিভিন্নস্থানে গত এক সপ্তাহের মধ্যে বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।  দরজা ভেঙ্গে ঘরের লোকদের বেঁধে ও গলায় ছুরি ধরে নিয়ে গেছে স্বর্ণালঙ্কার , নগদটাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র।

এলাকার বিভিন্ন স্থানে  ঘটছে গরু চুরির ঘটনাও। প্রায় রাতেই দুর্ধর্ষ ডাকাতি ও চুরির ঘটনায়  বহু পরিবার এখন আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন। মাঝে মধ্যে মহাসড়কে ঘটে  ডাকাতির ঘটনাও। অবস্থা এমন যে, দেখার  যেন কেউ নেই।  পুলিশকে জানালে ওল্টো হয়রানির শিকার ও চুরি- ডাকাতির মালামাল উদ্ধারে কোনো নজির না থাকায়  ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও থানা পুলিশকে জানাতে পুরোপুরি অনীহা প্রকাশ করছেন ভুক্তভোগিরা।

উপজেলার বিভিন্নস্থানে দিন দিন ডাকাতরা এতো বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে যে সীতাকুণ্ডে এবার গণডাকাতির মতো ঘটনা সংগঠিত হয়েছে গত রাতেই। গণডাকাতিতে জনমনে বেড়ে গেছে আতঙ্ক ।অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কয়েকলাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতদল।

গতকাল মঙ্গলবার দিবাগতরাতেই উপজেলার বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের বড়দারেগাহাট এলাকার উত্তর ফেদাইনগর গ্রামে একুশে টেলিভিশনের ডেপুটি নিউজ এডিটর ও সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌসের বাড়িসহ একরাতে তিন বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

পূর্বসৈয়দপুর গ্রামের আশু টেন্ডলের বাড়ির আবদুল মান্নানের ঘরে ডাকাতদলের লুটপাটের দৃশ্য

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোমিন মেম্বার চাটগাঁর বাণীকে জানান, রাত ৩টার দিকে ৭-৮ জনের সশস্ত্র দল সাংবাদিক হাসান ফেরদৌসের বাড়িতে প্রবেশ করে। সেখানে তাদের বাড়ির কেয়ারটেকার মো. রফিক মিয়াকে মারধর, অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ঘরের দরজার তালা ভেঙ্গে আলমারী খুলে তাণ্ডব চালায়। অবশ্য এ সময় বাড়িতে সাংবাদিকের পরিবারের কেউ ছিলেননা।এখানে ডাকাতরা আশানুরূপ কিছু না  পাওয়ায় পরে ডাকাত দল পার্শ্ববর্তী আমান উল্লাহ মেম্বার ও নাদেরুজ্জামানের বাড়িতে হানা দেয়। সেখানেও ঘরের দরজা ভেঙ্গে মুখোশপরা ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে নগদ  টাকা, স্বর্ণালংকার, মোবাইলসেটসহ কয়েক লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

এর আগে শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) আরেক দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে সীতাকুণ্ড মডেল থানা থেকে আধ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশেই শেখ পাড়াস্থ ইট ব্যবসায়ী আবুল হাশেমের বাড়িতে। ১৫/২০ জনের সশস্ত্র ডাকাতদল  আচমকা হাশেমের বসতঘরের  মুল দরজা ভেঙ্গে ৫-৬জন ভেতরে প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে  পরিবারের সবাইকে জিম্মি করে ফেলে।ঘরে ঢুকেই ব্যবসায়ী হাসেম ও ছেলে এবং ছেলের বউসহ অন্যদের বেঁধে ফেলে। আলমারির চাবি দিতে অস্বীকার করলে বাবা-ছেলে দুইজনকে বেধড়ক পিটুনি দেয় তারা।একপর‌্যায়ে চাবি নিয়ে স্টীলের আলমিরার তালা খুলে দেড়ভরি স্বর্ণ, ইটব্যবসার নগদ ৬০-৭০ হাজার টাকা ও ৩টি দামি মোবাইল সেট নিয়ে ডাকাতদল নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়।

এর আগের রাত শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতে ডাকাতি সংঘটিত হয় সৈয়দপুর ইউনিয়নের পূর্বসৈয়দপুর গ্রামের আশু টেন্ডলের বাড়ির আবদুল মান্নানের ঘরে। রাত ২টার দিকে ৮/১০জনের ডাকাতদল তার বসতঘরের দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে অ্স্ত্রের মুখে পবিবারের নারী-পুরুষ সবাইকে জিম্মি করে চালায় ব্যাপক লুটপাট।নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও তিনটি মোবাইলসেটসহ প্রায় ৫/৬লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

প্রতি বছরই সীতাকুণ্ডে শীত ও শুষ্ক মৌসুমে চুরি ডাকাতি আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। ডাকাত প্রতিরোধে আইনশৃংখলাবাহিনীর বিশেষ কোনো তৎপরতা না থাকায় চরম আতঙ্ক ভর করেছে এলাকাবাসীর মধ্যে।

উপজেলার বিভিন্নস্থানের জনপ্রতিনিধি ও ভুক্তভোগিরা জানান, প্রায় রাতে কোথাওনা কোথাও চুরি ডাকাতির ঘটনা ঘটছে।

উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের শীতলপুর মদন হাট সাইনবোর্ড এলাকায় গতমাসের ১১ জানুয়ারি একরাতে ৪টি গরু চুরি হয়েছে।

অনেক কষ্টেসৃষ্টে লালন-পালন করে বিক্রিযোগ্য করা গরু ৪টি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন কৃষক সাইফুল, মনোয়ারা ও নুরুল ইসলাম। এগুলোকে মোটাতাজা করতে তার প্রায় লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়েছে তাদের। চুরি হওয়া চারটি গরু মূল্য দাম ৫ লাখ টাকা হবে বলে জানান তারা। গরু চুরি বৃদ্ধি হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অন্য কৃষকরা। সম্প্রতি মুরাদপুর এলাকায় ৫/৬টি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে।

এলাকায় একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.. কামাল উদ্দিনের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি চাটগাঁর বাণীকে বলেন, সৈয়দপুর ইউনিয়নের নজরুল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে কোর্টে পাঠিয়ে দিয়েছি। তার নামে একাধিক মামলা ও ওয়ারেন্ট রয়েছে।চুরি ডাকাতিসহ যে কোনো অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।