[bangla_date] || [english_date]

ঢাকা প্রতিনিধি *

গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলাদেশে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির শঙ্কার কথা আগেই জানিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক হতে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছরের মার্চে দেশে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করার শঙ্কা আছে কিনা– এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ষড়যন্ত্র তো ছিল, ষড়যন্ত্র তো আছে।

শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। জার্মানের মিউনিখে অনুষ্ঠিত ‘মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে’ অংশ নেয়ার বিষয়ে দেশবাসীকে জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চলতি বছরের মার্চে দেশে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির শঙ্কার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ষড়যন্ত্র তো ছিল, ষড়যন্ত্র তো আছে। আমি আসার পর থেকে আমাকে বারবার বাধা দেয়া, ক্ষমতায় যেন না যেতে পারি। পচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার কথাই ধরেন না কেন, শিশু রাসেলকেও তো ছাড়েনি। কেন, যাতে ওই রক্তের কেউ যেন বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসতে না পারে। আমি এবং ছোট বোন বিদেশে থাকায় বেঁচে গেছি। তারপর ফিরে এসে দায়িত্ব নিয়েছি। আমার চেষ্টাই হচ্ছে যে স্বপ্ন নিয়ে জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছেন, সেই স্বপ্ন পূরণ করা। সেক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র প্রত্যেকবারই হচ্ছে। বারবার মানুষের ভোটের অধিকার আমরাই আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করেছি, গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে এনেছি। যার সুফল দেশবাসী পাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রমজানে কিন্তু কোনো জিনিসের অভাব হবে না। ইতোমধ্যে সমস্ত কিছু ব্যবস্থা করা আছে। এটা নিয়ে অনেকে কথা বলবে, কিন্তু কোনো অসুবিধা হবে না। রমজান তো কৃচ্ছতা সাধনের জন্য, রমজানে মানুষ একটু কম খায়। আমাদের দেশে রমজানে খাবার-দাবারের চাহিদা একটু বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, রমজানে ছোলা, খেজুর, চিনি পর্যাপ্ত পরিমাণে আনার ব্যবস্থা আছে, এগুলো নিয়ে সমস্যা হবে না। সেই ব্যবস্থা অনেক আগেই করে রেখেছি।

তিনি আরো বলেন, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে একটা দেশ উন্নত হয়। গত পনেরো বছরে আত্মসমাজিক উন্নয়ন হয়েছে, মানুষের মন-মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে, সব দিক থেকে বাংলাদেশ অনেক উপর উঠে আসতে সক্ষম হয়েছে। আমরা এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা যথাযথভাবে এগিয়ে যেতে পারি সেই কাজটাই আমাদের বড় কথা। এদিকে আমার মনোযোগ দিয়েছি।

তিনি বলেন, নির্বাচন যাতে না হয়, সে জন্য বিরাট চক্রান্ত ছিল— সেটি আপনারা জানেন। ২৮ অক্টোবরের ঘটনাটা একবার চিন্তা করেন। ২০১৩, ১৪, ১৫ সালের সেই অগ্নিসন্ত্রাস। তারপর আবার গত বছরের ২৮ অক্টোবর…। এগুলো হঠাৎ করে করা, তা নয়— পরিকল্পিত। যারা এই ধরনের নির্বাচন বানচালের পক্ষে তারা যখন দেখলো নির্বাচন কিছুতেই আটকাতে পারবে না, কারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা আছে, তখন চক্রান্ত হলো যে জিনিসের দাম বাড়বে। তারপর সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হবে। তখন আন্দোলন করে সরকারকে উৎখাত করবে। এটা তাদের পরিকল্পনার একটা অংশ। কাদের সেটা আপনারা ভালো বোঝেন। আমি আর কারও নাম বলতে চাই না, বলার দরকারও নেই আমার। কিন্তু এই চক্রান্তটা আছে।

সরকারপ্রধান বলেন, তবে আমি বলতে পারি। এই যে দেখেন না কালকে বৃষ্টি হলো না! কথায়ই তো আছে— ‘যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্যি রাজার পূণ্য দেশ’। এই যে মাঘের শেষেও বৃষ্টি হলো, ফাল্গুনের শুরুতেই বৃষ্টি। আমের মুকুল তরতাজা হয়ে উঠছে। ক্ষেতে ধানের চারা রোপণ, সেখানেও সেচের প্রয়োজন হবে না। ভালো বৃষ্টি হলে ফসল ভালো হবে। খাদ্যপণ্য উৎপাদনে কোনও অসুবিধা হবে না।

করোনাকাল, বিশ্বব্যাপী স্যাংশন, পণ্য পরিবহনে বাধাগ্রস্ত হওয়ার সময় থেকেই নিজেদের খাদ্য নিজেদের উৎপাদনের তাগিদ দেয়ার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তখন থেকেই নিজেদের খাদ্য নিজেদের উৎপাদন করতে হবে বলে যাচ্ছি। এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। সেটি বলা না, কার্যকরও করেছি। আমাদের পরিবারের যত জমি ছিল সেগুলোর সঙ্গে আশপাশের সমস্ত জমি পরিষ্কার করা এবং সেগুলোতে চাষ করা আমরা শুরু করে দিয়েছি। নিচু জমিতে মাছ আর উঁচু জমিতে ধান চাষ করতে বলেছি। যার যত জমি আছে, সে হিসেবে ভাগ পাবে। ফলে এবার কম করে হলেও ১০-১৫ হাজার টাকা করে একেকজন পেলো।

শেখ হাসিনা বলেন, ডিম লুকিয়ে রেখে দাম বাড়ানো হয়। যারা সরকার উৎখাতের জন্য আন্দোলনকারী তাদের হাত রয়েছে এগুলোর পেছনে। এর আগে পেঁয়াজের খুব অভাব। পরে দেখা গেলো বস্তা বস্তা পচা পেঁয়াজ পানিতে ফেলে দেয়া হচ্ছে। এদেরকে ধরে গণধোলাই দেয়া উচিত। সরকার কিছু বললে মানুষ বলবে সরকার করেছে। তাই জনগণ যদি এগুলোর প্রতিকার করে তাহলে কেউ কিছু বলতে পারবে না। নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে একটি শ্রেণি চক্রান্ত করে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যেনো ক্ষমতায় আসতে না পারে এমন ষড়যন্ত্র আগেও ছিল, এখনও আছে।

এবারের মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে বড় শক্তিগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং আঞ্চলিক সংঘাত, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, নিউক্লিয়ার নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু নিরাপত্তা, তথ্য নিরাপত্তা, পানি নিরাপত্তা, অভিবাসন, সাপ্লাই চেইন, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মহামারি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে মূলত রাষ্ট্র/সরকার প্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিও নেতৃবৃন্দ, মিডিয়া, সুশীলসমাজ, সরকারি এবং বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ করেন। এটি সমকালীন ও ভবিষ্যত নিরাপত্তার স্বার্থে উচ্চ-পর্যায়ের নিয়মিত আলোচনার একটি শীর্ষস্থানীয় ফোরাম হিসেবে বিবেচিত। এ বছরের ফোরামে ৩৫-জনেরও বেশি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান অংশগ্রহণ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন ২০২৪-এ যোগ দিতে ১৫ ফেব্রুয়ারি জার্মানি যান।  তিনি দেশে ফিরে আসেন ১৯ ফেব্রুয়ারি।  মিউনিখে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে যোগ দেয়া ছাড়াও বিশ্বনেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।

তাদের মধ্যে ছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি এবং ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন।

মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সের সভাপতির আমন্ত্রণে সেখানে যান প্রধানমন্ত্রী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের পর দেশের বাইরে এটিই তার প্রথম সরকারি সফর।  জার্মানিতে অবস্থানকালে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন শেখ হাসিনা।

এ সফরে জার্মানিতে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি নাগরিক সংবর্ধনায়ও অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।