[bangla_date] || [english_date]

নিজস্ব প্রতিবেদক *

বিপুল সম্পদ অর্জন ও দুর্নীতির অভিযোগে এবার পঞ্চমবারের মতো দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তের ‍মুখে সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান। তবে, এর আগে চারবার ছাগলকাণ্ডে আলোচিত এই কর্মকর্তা কীভাবে দুদক থেকে ‘দায়মুক্তি’ পেয়েছিলেন, সে অনুসন্ধানে নেমেছে সংস্থাটি নিজেই।

মঙ্গলবার (২জুলাই) দুদক সচিব খোরশেদা ইসয়াসমিন সাংবাদিকদের জানিয়েছে, এর আগে কীভাবে দুদক থেকে মতিউর দায়মুক্তি পেয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।

মতিউর রহমানসহ তার দুই স্ত্রী ও দুই সন্তানের সম্পদের বিবরণ জমা দিতে মঙ্গলবার নোটিশ দিয়েছে দুদক।

দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো পৃথক চিঠিতে তাদের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ, প্রথম পক্ষের ছেলে আহাম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব, মেয়ে ফারজানা রহমান (ইপসিতা), দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতারকে নোটিশ দেয়া হয়েছে।

মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে প্রথম দুদকে অভিযোগ আসে ২০০৪ সালে। সে সময় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচারের। অভিযোগ আছে, হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা টাকা প্রবাসী কোনো এক আত্মীয়র মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে তা রেমিট্যান্স বাবদ দেখিয়ে দিয়েছিলেন ট্যাক্স ফাইলে।

২০০৮ সালে আবারও দুদকে অভিযোগ জমা পড়ে তার বিরুদ্ধে। সেবার অভিযোগ ওঠে, বিলাসবহুল পণ্যের শুল্ক মাফ করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন। কিন্তু তদন্ত শুরু হতে না হতেই ‘প্রভাবশালীদের চাপে’ তা চাপা পড়ে যায়, ক্লিন চিট পান মতিউর। এরপর ২০১৩ ও ২০২১ সালে আরও দুবার দুদকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয় হয়। অভিযোগ ছিলো অবৈধ সম্পদ ও সম্পত্তির। কিন্তু ধুরন্ধর মতিউর অবৈধ সম্পদকে পারিবারিক ব্যবসা ও ঋণ দেখিয়ে প্রস্তুত করেন ট্যাক্স ফাইল। সেবারও মেলে তার দায় মুক্তি।

তবে পঞ্চমবারের মতো তদন্তে নেমে দুদক আগের চারবারের প্রতিটি বিষয়ে পর্যালোচনার আশ্বাস দিলো। একইসঙ্গে যে বা যাদের মাধ্যমে বারবার দায়মুক্তি পেয়েছে মতিউর, তা-ও খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে।

গেল কোরবানি ঈদের আগে ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনা নিয়ে দেশজুড়ে তুমুল আলোচনায় আসেন সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যরা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার অঢেল সম্পদের তথ্য প্রকাশিত হয়।

এরপর তার ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের খোঁজে নামে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করতে গত ২৩ জুন তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গত ৪ জুন তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ জমা হওয়ার পর কমিশনের পক্ষ থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

২৪ জুন মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও ছেলে আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।

অভিযোগ ওঠার পর মতিউর রহমানকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে এনবিআরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে। প্রভাবশালী ও আলোচিত এই সরকারি কর্মকর্তাকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকেও সরানো হয়েছে ।