[bangla_date] || [english_date]

ঢাকা প্রতিনিধি *

বাংলাদেশি নাগরিকদের জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর ও নাম ব্যবহার করে পাসপোর্ট বানাচ্ছে রোহিঙ্গারা। ভুয়া পাসপোর্ট নিয়ে এরইমধ্যে দেশ ছেড়েছে হাজারও রোহিঙ্গা। এ কাজে সক্রিয় বেশ কয়েকটি দালাল চক্র। এমনকি পাসপোর্ট অফিসের আনসার সদস্যরাও জড়িত এই কাজে। অভিযান চালিয়ে এই চক্রের ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

সৌদি আরব পাড়ি জমাতে দালাল চক্রকে দেড় লাখ টাকা দেয় ১৪ বছরের এক রোহিঙ্গা কিশোরী। নকল পাসপোর্ট তৈরির জন্য দালালরা প্রথমে এই রোহিঙ্গা কিশোরীর জাল জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করে। ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন জেলার নাম দিয়ে জন্ম নিবন্ধন করে সেটি দিয়ে এনআইডি ও পাসপোর্ট তৈরি করে দালাল চক্র।

চক্রটির সন্ধানে প্রায় দুই মাস ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগ। পাসপার্ট অফিসের দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরাও এই চক্রের সদস্য। রোহিঙ্গা, আনসার ও দালালসহ ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। ২০১৯ সাল থেকে এভাবেই হাজারও রোহিঙ্গাকে পাসপোর্ট দিয়েছে চক্রটি।

গ্রেপ্তাররা হলেন-  তিন রোহিঙ্গা নাগরিক উম্মে ছলিমা ওরফে ছমিরা, মরিজান, রশিদুল। রোহিঙ্গা দালাল আইয়ুব আলী, মোস্তাকিম, মো. রায়হান। বাঙালি দালাল রাজু শেখ, শাওন হোসেন নিলয়, ফিরোজ হোসেন, মো. তুষার মিয়া, মো. শাহজাহান শেখ, মো. শরিফুল আলম, জোবায়ের মোল্লা, শিমুল শেখ, আহমেদ হোসেন, মো. মাসুদ আলম, মো. আব্দুল আলিম, মো. মাসুদ রানা, ফজলে রাব্বি শাওন, রজব কুমার দাস দীপ্ত, আল-আমিন ও মো. সোহাগ এবং আনসার সদস্য জামসেদুল ইসলাম।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ১৭টি পাসপোর্ট, ১৩টি এনআইডি, ৫টি কম্পিউটার, ৩টি প্রিন্টার, ২৪টি মোবাইল ফোন এবং পাসপোর্ট তৈরির দলিলপত্র জব্দ করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার আসামিদের একজন বলেন, উত্তরার আশরাফ নামের একজন জন্ম নিবন্ধন করে দিতো। বেশিরভাগ জন্ম নিবন্ধন হতো রংপুরের দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে। কিছু কিছু সময় রাজশাহী ও মাদারীপুর থেকে হতো।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, তিন মাসে ১৪টি পাসপোর্টের সন্ধান আমরা পেয়েছি। কত হাজার পাসপোর্ট করেছে সেটা জিজ্ঞাসাবাদ না করে বলতে পারবো না।

পাসপোর্ট অফিসের মতো স্পর্শকাতর সরকারি প্রতিষ্ঠানে নজরদারী আরও বাড়ানোর পাশাপাশি শক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির পরামর্শ দিলেন এই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, যখন এসে আঙুলের ছাপ দেয়, টাকা জমা দেয়, ছবি তোলে তখনতো ধরা পড়ার কথা। ওভারলুক হচ্ছে কি না, ঊর্ধ্বতনকেউ আছে কি না সেটা আমরা তদন্ত করে কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করবো।

এই চক্রটির কাজের পদ্ধতি বিস্তারিত তুলে ধরে ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, ছয় ঘণ্টার মধ্যে জন্ম সনদ তৈরি করে দিতে তারা পাঁচ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা নিত। তিন দিনের মধ্যে এনআইডি করে নেয়ার জন্য ২৫ হাজার টাকা এবং পাসপোর্ট তৈরি করার জন্য এক লাখ ২০ হাজার টাকা নিতো বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।

ওই চক্রটি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রংপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল জেলার ঠিকানা ব্যবহার করে জন্ম সনদ ও এনআইডি বানিয়ে তার ভিত্তিতে পাসপোর্ট বানিয়ে দিতো বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

অসাধু চক্রটির সাথে আর কে কে জড়িত সে বিষয়ে আরও অনুসন্ধান চালাবার কথা জানায় ডিবি পুলিশ।