[bangla_date] || [english_date]

নিজস্ব প্রতিবেদক *

আনোয়ারুল আজিম এমপি

বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশের পার্লামেন্টারিয়ান আনোয়ারুল আজিম ভারতে চিকিৎসা করাতে এসে যেরকম দুর্ভাগ্যজনকভাবে মারা গেছেন, তাতে দিল্লিতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বেশ অস্বস্তিতে পড়েছেন। তবে এ ব্যাপারে তদন্ত শেষ না হলে এবং পুলিশ সব বিস্তারিত না জানালে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনই কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিতে চাইছে না।

দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র অবশ্য নিশ্চিত করেছেন, এমপি আজিম যে কলকাতায় আসার পর হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে গেছেন– বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সেটা তাদের জানানোর পর থেকেই তাকে খুঁজে বের করার সব ধরনের চেষ্টা চালানো হচ্ছিল। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দারাও এ ব্যাপারে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলেন।বস্তুত, আনোয়ারুল আজিম কলকাতায় এসে যে ভারতীয় সিমকার্ডটি ব্যবহার করছিলেন, সেটি যে গত ১৭ মে (শুক্রবার) খুব অল্প সময়ের জন্য বিহারের মুজাফফরপুরের কাছে চালু করা হয়েছিল– সেই তথ্যও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা ট্র্যাক করে বের করেছিলেন। পরে কলকাতায় বাংলাদেশের উপদূতাবাসের মারফত সেই খবর ঢাকায় তদন্তকারীদের কাছেও পৌঁছে দেওয়া হয়।

আনোয়ারুল আজিমকে ঠিক কী পরিস্থিতিতে, কীভাবে আর কেন হত্যা করা হয়েছে (যদি এটা হত্যাই হয়ে থাকে) তা নিয়ে যেহেতু এখনও অনেক অস্পষ্টতা আছে, তাই সরকারিভাবে ভারত এটা নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করতে চাইছে না। দিল্লির নর্থ ব্লকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে এটা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি শুধু জানিয়েছেন, ‘এই বিষয়ে যা বলার পশ্চিমবঙ্গের (বিধাননগর) পুলিশই বলবে।’

এর আগে বুধবার (২২ মে) সকালে কলকাতার উপকণ্ঠে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মানব শ্রিংলা সাংবাদিকদের জানান, আনোয়ারুল আজিম শেষ যে ভাড়া গাড়িটি কলকাতায় ব্যবহার করেছিলেন, সেই ক্যাবটির চালক জেরার মুখে স্বীকার করেছে যে, ওই যাত্রীকে খুন করে তার দেহ টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।’

কিন্তু সত্যিই যদি তা হয়ে থাকে, তাহলে সেই খুনের মোটিভ কী ছিল, খুনিরা ক’জন ছিল বা তারা কারা, স্থানীয় ক্যাবচালককে এই কাজের জন্য তারা ভাড়া করেছিল কিনা, লাশের টুকরো কোথায় কোথায় ফেলা হয়েছিল– পুলিশ কর্তৃপক্ষ এসব প্রশ্নের কোনও জবাব দেয়নি।

তবে তদন্তকারী দলের পক্ষ থেকে বাংলা ট্রিবিউনকে এটুকু আভাস দেওয়া হয়েছে, এমপি আনোয়ারুল আজিমকে যারাই হত্যা করে থাকুক, এই হত্যার মূল ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলাদেশেরই লোক বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।

‘একজন বিদেশি এমপি কলকাতায় এসেছেন, আর তার সঙ্গে পয়সাকড়ি আছে এটা আঁচ করে স্থানীয় কোনও অপরাধী চক্র বা দৃষ্কৃতিকারী গ্যাং তাকে মেরে ফেলে টাকাপয়সা লুট করতে চেয়েছিল– ব্যাপারটা অত সহজ নয় বলেই আমরা ধারণা করছি’, জানিয়েছে একটি সূত্র। সোজা কথায় তারা অনুমান করছেন, এই হত্যারহস্য আসলেই খুব জটিল এবং এর পুরো কিনারা করতে বেশ সময় লাগতে পারে।

বিদেশের কোনও এমপি যখন ভারতে সফর করেন, তারা সাধারণত নিজেদের ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্টই ব্যবহার করে থাকেন। আনোয়ারুল আজিমও ঠিক তাই করেছিলেন। এখন এমন একজন ভিআইপি বিদেশি অতিথিকে যখন ভারতের মাটিতেই প্রাণ হারাতে হয়, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর চেহারা নিয়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তাই তদন্তে সব দিক আগে পরিষ্কার না হলে এবং বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথা না বলে ভারত আগ বাড়িয়ে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইছে না।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের   এমপি  আনোয়ারুল আজিমের (আনার) মৃত্যুর খবর শুনে তাঁর বাড়ির সামনে ভিড় করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। আজ বুধবার বেলা ১১টার পর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের নিশ্চিন্তপুর এলাকায় আসেন তাঁরা।

চিকিৎসার জন্য গত ১২ মে দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম । ১৪ মে পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। তবে ১৬ মে সংসদ সদস্যের মুঠোফোন থেকে আনোয়ারুল আজিমের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রউফের কাছে ফোন আসে। তিনি ফোন ধরতে পারেননি। পরে আবার তিনি ফোন করলে মুঠোফোনটি বন্ধ পান। এর পর থেকে সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন। আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস গত রোববার বিকেলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর বাবার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানান। আনোয়ারুল আজিম পশ্চিমবঙ্গে  খুন হয়েছেন বলে আজ তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশের পুলিশ।