[bangla_date] || [english_date]

বিশেষ প্রতিবেদক *

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারদিনের চীন সফরে বেইজিং পৌঁছালে লালগালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার দেওয়া হয়

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক লক্ষ্য পূরণে বহুল প্রত্যাশার চীন সফরে গেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের আমন্ত্রণে দেশটি সফর করছেন তিনি। এই সফর দুদেশের মধ্যকার সম্পর্ককে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ থেকে ‘কৌশলগত বিস্তৃত সহযোগিতা অংশীদারিত্বে’ উন্নীত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার দেশটি সফরের উদ্দেশে গতকাল বেলা ১১টা ৫ মিনিটে ঢাকা ছেড়ে যায় প্রধানমন্ত্রী ও তার সফর সঙ্গীদের বহনকারী বিশেষ বিমান।

চীনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টায় বেজিং ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান চীনের একজন ভাইস মিনিস্টার, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, বেজিংয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বেজিংয়ে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রীকে লালগালিচা সংবর্ধনা জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীও চীনের অভ্যর্থনা গ্রহণ করেন। এরপর সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল তাঁকে গার্ড অব অনার দেয়। লালগালিচার দুই পাশে চীনের সামরিক বাহিনীর চৌকস দল শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে নানা প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এই সময়ে শেখ হাসিনা লালগালিচা ধরে ধীরপায়ে এগোতে থাকেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার বেজিং পৌঁছলেও চীনের প্রধানমন্ত্রী লিং কিয়াং এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে সফরের তৃতীয় দিন বুধবার। ওই বৈঠকের পরই দুই দেশের মধ্যে ২০-২২ সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের ঘোষণাও আসতে পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যায় বেজিং পৌঁছার পর দ্বিতীয় দিন  আজ মঙ্গলবার সকালে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিন লিকুনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কর্মযজ্ঞ শুরু করবেন।

জিন লিকুনের সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাং-গ্রি-লা সার্কেলে অনুষ্ঠেয় ‘সামিট অন ট্রেড, বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড চায়না, শীর্ষক সম্মেলনে অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে এই বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন এবং বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমানোর উপায় খুঁজে বের করার পরামর্শ দেবে। চীন ও বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক হাজারের বেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলোচনার জন্য বিভিন্ন ব্যবসায়িক অধিবেশনে যোগ দেবেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিসিআই) ও বেজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস যৌথভাবে এই বাণিজ্য সামিটের আয়োজন করবে।

বাণিজ্য সম্মেলনে অংশ গ্রহণ শেষে মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী ‘চাইনিজ পিপলস পলিটিক্যাল কনজারটেটিভ কনফারেন্স’ (সিপিপিসিসি)-এর ১৪তম জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াং হুয়িংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী ঐতিহ্যবাহী তিয়েন আনমেন স্কয়ারে পিপলস হিরোদের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন। সন্ধ্যায় তিনি বেজিংয়ে বাংলাদেশ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে সেদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আয়োজিত এক নৈশভোজে যোগ দেবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবারে সারাদিন ব্যস্ত সময় শেষে সফরের তৃতীয় দিন বুধবার প্রধানমন্ত্রী গ্রেট  হল অব দ্য পিপল-এ চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সাক্ষাতের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। একই স্থানে প্রধানমন্ত্রী এবং চীনের প্রধানমন্ত্রী (প্রিমিয়ার অব দ্য স্টেট কাউন্সিল) দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলসহ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। এরপর দুই দেশের সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে প্রায় ২০-২২টির মতো সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে এবং কিছু প্রকল্প উদ্বোধনের ঘোষণা দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত ব্যাংকুয়েটের (ভোজের) মাধ্যমে গ্রেট হলে উল্লিখিত সাক্ষাতের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে। বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সফর উপলক্ষে বাংলাদেশ ও চীন একটি যৌথ বিবৃতি প্রদান করবে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনার সফরকালে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বিভিন্ন খাতে ২০-২২টির মতো সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা হয়েছে।