[bangla_date] || [english_date]

নিজস্ব প্রতিবেদক *
আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি ও দায়িত্বের অংশ হিসেবে পাচার হওয়া অর্থ-সম্পদ বাংলাদেশে ফেরাতে সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট ধনী দেশগুলোর দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বেশির ভাগ অর্থের প্রধান গন্তব্য ও সুবিধাভোগী হলো ধনী ও তথাকথিত উন্নত দেশগুলো। দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে বিতাড়িত রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকের বিরুদ্ধে এসব দেশে সম্পদ অর্জনের খবর উঠে এসেছে।

আজ বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডের পাশাপাশি সাম্প্রতিক কয়েক দশকে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, বিশেষ করে দুবাই এবং অফশোর দ্বীপ অঞ্চলে বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।

অর্থপাচারের এসব গন্তব্যে অত্যন্ত দক্ষ আইন সংস্থা, ট্রাস্ট কম্পানি, অফশোর বিশেষজ্ঞ, রিয়েল এস্টেট এজেন্ট, হিসাবরক্ষক, নিয়ন্ত্রক বিশেষজ্ঞ, ব্যাংকিং এবং আর্থিক পরিষেবা সংস্থার শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে, যারা অর্থপাচারের জন্য গোপন চুক্তিগুলো সম্পন্ন করে থাকে। এই সিন্ডিকেটগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাচারকারীদের জন্য অর্থপাচারকে সহজ করে তুলেছে। তারা অর্থপাচারকারীদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিতের সঙ্গে সঙ্গে রিয়েল এস্টেট, ব্যাংকিং এবং বিলাসবহুল পণ্যে লাভজনক বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সরকারের নীতিমালায় ঘাটতির সুযোগ নিয়ে অর্থপাচার করা হয়।

এমন অনেক দেশ রয়েছে যারা পাচারকৃত অর্থ ট্রাস্ট, রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ, এমনকি বিনিয়োগের বিনিময়ে নাগরিকত্ব পর্যন্ত দিয়ে থাকে। যদি নীতি ঘাটতি না-ও থাকে, তাহলে আইনের কঠোর প্রয়োগের অভাবে অর্থপাচারে সহায়তাকারীদের জন্য ‘স্বর্গ’ তৈরিতে সাহায্য করে এবং এই সুযোগ সৃষ্টির ফলে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারকারীরা উৎসাহিত হচ্ছে।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, টিআইবি মনে করে, অর্থপাচার প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার দায়িত্ব মূলত বাংলাদেশের কাঁধে। তবে বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ যেসব দেশে বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং পাচার হওয়া অর্থ যাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে এমন দেশ বা অঞ্চলসমূহের দায়িত্বও কম নয়।

এতে আরো বলা হয়, এই অবস্থায় সংশ্লিষ্ট ধনী দেশসমূহের সরকারের প্রতি টিআইবির আহ্বান, বাংলাদেশি নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন অবৈধ সম্পদ তাদের নিজস্ব আইনি প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে চিহ্নিত ও ফ্রিজ করতে হবে। অবৈধ স্থানান্তরের মাধ্যমে অর্থ ও সম্পদ আহরণকারী সিন্ডিকেট বিলুপ্তির জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। চুরি যাওয়া সম্পদ ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ শুরু ও তা ত্বরান্বিত করা এবং পারস্পরিক আইনি ও প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে অর্থ পাচারকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় সংস্থা, বিশেষ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), সিআইডি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের প্রয়োজনীয় পেশাদারি এবং আন্তর্জাতিক সক্ষমতা তৈরিতে অবদান রাখতে হবে। এ ধরনের অনুরূপ পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের উপরোক্ত গন্তব্য দেশসমূহের সঙ্গে সহযোগিতা এবং সমন্বয় করতে হবে।