[bangla_date] || [english_date]

নিজস্ব প্রতিবেদক *

চুক্তি স্বাক্ষর হচ্ছে চসিকের আলোকায়ন প্রকল্পের

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ২৬০ কোটি ৮৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয়ের ‘স্মার্ট আলোকায়ন’প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়েছে ।

শনিবার (৬ জুলাই) বিকেলে  রেডিসন ব্লু চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে চসিকের পক্ষে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এবং শাপার্জি পালনজি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষে জেনারেল ম্যানেজার (স্মার্ট সিটিজ) নিরাজ কুমার চুক্তি স্বাক্ষর করেন৷

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে ভারত। ভারতের সহায়তায় এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে চট্টগ্রামবাসী আলোকিত চট্টগ্রাম পাবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে সহায়ক হবে এ প্রকল্প।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন,  এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৪৬০ কি. মি. সড়কের আলোকায়ন হতে যাচ্ছে যা পরিবেশ বান্ধব, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী, টেকসই ও কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণযোগ্য। এটি বাস্তবায়নের পর চট্টগ্রামের কোন অলি-গলি আলোকায়নের বাইরে থাকবে না। কারণ আমরা বড় রাস্তায় বর্তমানে বিদ্যমান বাতিগুলো দিয়ে নগরের অলি-গলির আলোকায়ন সহজে করে ফেলতে পারব। ফলে নগরবাসীর নিরাপত্তা ও স্বস্তি বাড়বে এবং নগরের ল্যান্ডস্কেপে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। আমি মেয়র হিসেবে কথা দিচ্ছি, এ প্রকল্প যাতে সঠিকভাবে ও যথাযথ গুণগত মান রক্ষা করে বাস্তবায়িত হয় সে বিষয়ে আমার কঠোর তদারকি নিশ্চিত করব।

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই-কমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে ছিল ভারত। বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারতের ভূমিকার টোকেন অফ ফ্রেন্ডশীপ হিসেবে কাজ করবে এ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধবভাবে চট্টগ্রামকে আলোাকিত করা সম্ভব হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান প্রকল্পের সফলতা কামনা করেন। অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য আবদুচ ছালাম, সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী,  বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, ডিআইজি নূরে আলম মিনা, পুলিশ কমিশনার উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলাম, সিডিএ’র চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম,  ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ, ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার রাজীব রঞ্জন, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ওমর হাজ্জাজসহ বিভিন্ন সংস্থার  ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামসহ প্যানেল মেযরবৃন্দ, কাউন্সিলরবৃন্দ, সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন, প্রকল্প পরিচালক ঝুলন কুমার দাশসহ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

নগরীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে ‘মডার্নাইজেশন অব সিটি স্ট্রিট লাইট সিস্টেম অ্যাট ডিফারেন্ট এরিয়া আন্ডার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন’ শীর্ষক প্রকল্পটির মাধ্যমে সড়কবাতির আলোয় নগরীকে আলোকিত করা হবে। স্বাধীনতার পূর্ব থেকে এ পর্যন্ত শুধুমাত্র সড়ককে আলোকিত করতে চট্টগ্রামে এত বড় প্রকল্প আগে কখনো নেয়া হয়নি।

গৃহীত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্রাফিক এবং পথচারীদের জন্য কার্যকর ও টেকসই সড়ক বাতির আলোক সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে। রাত্রিকালীন শহরের সৌন্দর্য, ব্যবসায়িক সুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে। একইসঙ্গে কমবে কার্বন নির্গমন। এছাড়া শক্তি শোষণ সম্পর্কিত পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ট্রাফিক ও পথচারীর জন্য রাস্তায় আলোর সুবিধা নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে সড়ক বাতির আলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

২০১৯ সালের ৯ জুলাই একনেক সভায় এ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হয়। চট্টগ্রাম মহানগরীর ৪১ ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়কজুড়ে এলইডি লাইট লাগানোর এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারত সরকার ঋণ দিচ্ছে ২১৪ কোটি ৪৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা এবং সরকারি তহবিল (জিওবি) থেকে দেয়া হচ্ছে ৪৬ কোটি ৪৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। প্রকল্পটির বাস্তবায়িত হলে সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ বিল কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে। এছাড়াও বাতি গুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য ৫০০ টি সুইচের বদলে চারটি কেন্দ্রীয় সার্ভার স্টেশনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তাতেও প্রায় ১২ লাখ টাকারও বেশি সাশ্রয় হবে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের মিয়াখান সওদাগর পোল থেকে ইসহাক সওদাগর পোল পর্যন্ত সড়কের একপাশে এলইডি লাইট স্থাপনের জন্য খুঁটি বসানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে চসিক।

জ্বালানি দক্ষতা উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে বাংলাদেশের ‘টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’এবং ভারতের ‘এনার্জি ইফিসিয়েন্সি সার্ভিস লিমিটেড (ইইসিএল)’ এর সঙ্গে ২০১৭ সালে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। এর প্রেক্ষিতেই প্রকল্পটি গ্রহণ করে চসিক। প্রকল্পটিতে লাইন অব ক্রেডিট এর আওতায় ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ অর্থের যোগান দিবে ভারত। ঋণ হিসেবে দেয়া এ অর্থের পরিমাণ ২১৪ কোটি ৪৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা। অবশিষ্ট ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ বা ৪৬ কোটি ৪৩ লাখ ৫ হাজার টাকা দিবে বাংলাদেশ সরকার। চুক্তি অনুযায়ী ভারতের এক্সিম ব্যাংক তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শর্ট লিস্ট পাঠায়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ‘এনার্জি ইফিসিয়েন্সি সার্ভিসেস লিমিটেড’, ‘সিগনিফাই ইনোভেশন্স ইন্ডিয়া লিমিটেড’ এবং ‘শাপর্জি পালনজি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড’। শর্ট লিস্টের প্রতিষ্ঠানগুলোয় দরপত্রে অংশ নেয়। বাছাই শেষে ‘শাপার্জি পালনজি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড’কে চূড়ান্ত করা হয়। ২০২৬ সালের ৩০ জন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের আওতায় প্রতি ওয়ার্ডে আনুমানিক পাঁচ কিলোমিটার করে ২০৫ কিলোমিটার সড়কে আলোকায়নের কাজ সম্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রকল্পের ডিপিপি অনুযায়ী চসিক আওতাধীন নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ৫ ফুটের বেশি প্রশস্ততার ১০ কিলোমিটার সড়ক এলইডি বাতির আওতায় আসবে। বিদ্যুৎসাশয়ী এ বাতি পাঁচ বছর পর্যন্ত জিরো রক্ষাণাবেক্ষণ খরচে চলবে। ওয়ার্ডগুলোতে ৪০, ৬০, ১০০ ও ২৫০ ওয়াটের মোট ২০ হাজার ৬০০টি এলইডি বাতি, ২০ হাজার ২৬৭টি জিআই পোল এবং ৫০৭টি কন্ট্রোল সুইচ বক্স বসানো হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বিদ্যুৎ বিল কমে যাওয়াসহ বাতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয়ভাবে চারটি সার্ভার স্টেশন স্থাপন করা হবে। এছাড়া হাইড্রোলিক বিম লিফটার ও ইলেকট্রিক্যাল ইক্যুপমেন্ট সংগ্রহ করা হবে।