[bangla_date] || [english_date]

মোহাম্মদ ইউসুফ *

অবশেষে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির আগামীকালের (৩১মার্চ) ডাকা ৪৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা স্থগিত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপরিচালক মো. ফরিদুল আলম এক পরিপত্রের (স্মারক নম্বর- ৪১.০১.১৫০০.০০২১৬.১২৫.১৮.৩২৭, তারিখ- ৩০মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ) মাধ্যমে নির্ধারিত এ সাধারণ সভাটি স্থগিত করেছেন।

আজ (৩০মার্চ) দুপুরে উপপরিচালক ফরিদুল আলমকে মুঠোফোনে চাটগাঁর বাণী থেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের মেয়াদোত্তীর্ণ পরিচালনা কমিটির বহিস্কৃত সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বার্ষিক সাধারণ সভা আহবানের আইনগত কোনো অধিকার আছে কি-না। অবশ্য উপপরিচালক ফরিদুল আলম বিষয়টি আমলে নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ডায়াবেটিক হাসপাতালের এজিএম স্থগিত ঘোষণা করেন।

পরিপত্রে বলা হয়, “সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীন নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতি’(রেজি. নম্বর সি-৬৯৫/৭৮) এর বর্তমানে কোনো অনুমোদিত কার্যকরী কমিটি নেই। সমাজসেবা অধিদপ্তরের অফিস আদেশ নম্বর – ৪১.০১.০০০০.০৪৬.২৭.০২৫.২২.১০০ তারিখ ২৫.০১.২০২৩ মূলে সংস্থার তৎকালীন কমিটিকে সাময়িক বরখাস্তপূর্বক স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ (রেজিস্ট্রেশন ও নিয়ন্ত্রণ)অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর বিধান মোতাবেক প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। কাজেই সংস্থার অননুমোদিত কার্যকরী কমিটির সাধারণ সভা আহবানের কোনো বৈধতা নেই। তাছাড়া সংস্থার কার্যক্রম বিষয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট এর হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন নম্বর ১৬১০/২০২৩ চলমান আছে। এমতাবস্থায় আদালতের চূড়ান্ত রায় না পাওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা স্থগিত রাখার জন্যে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি (অননুমোদিত) জাহাঙ্গীর চৌধুরীকে অনুরোধ করা হয়েছে। “ গতবছরও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বহিস্কৃত সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরী অবৈধভাবে বার্ষিক সাধারণ সভা ও ডায়াবেটিক মেলার আয়োজন করেছিলেন। এবছরও তিনদিনব্যাপী (২৭, ২৮ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি ) ডায়াবেটিক মেলার নামে আয়োজন করা হয় “বাণিজ্যমেলা”। সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তখন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এদিকে দুর্নীতির মহাসাগরের হাবুডুবু খাচ্ছে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল। এ হাসপাতালের দুর্নীতির ব্যাপারে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, জনপ্রতিনিধি, সংবাদকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ অবগত। হাসপাতালটিকে নিয়ে কে খেলছেন, তা-ও জানেন সকলেই। কালক্রমে সমিতির এ হাসপাতালটি যে ব্যক্তিবিশেষের হাসপাতালে রূপান্তরিত হয়, সেটিও সর্বজনবিদিত। সমাজসেবা অধিদপ্তর দুর্নীতির দায়ে প্রশাসক নিয়োগের আদেশ দিলেও আদালতের মাধ্যমে তা স্থগিত করা হয়। তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় ২৭লাখ ৫০হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার আদেশ দিলেও তা দেয়া হয়নি। এ হাসপাতালের দুর্নীতি নিয়ে চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশনেরও তদন্ত চলছে। সরকারি অর্থায়ন ,সমাজের সামর্থ্যবানদের দান-অনুদান ও খয়রাতের টাকায় পরিচালিত সেবাধর্মী এ হাসপাতালে সুলভমূল্যে ডায়াবেটিক রোগীদের সেবা মিলছে না। প্রাইভেট হাসপাতালের মতো উচ্চমূল্যে এখানে চিকিৎসাসেবা নিতে হয়। পুরোপুরি বাণিজ্যিক হাসপাতালের মতোই চলছে সমিতির নামে পরিচালিত এ চিকিৎসালয়। আইসিইউ, সিসিইউ,এইচডিইউ থাকলেও বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক নেই। হাসপাতালের ফার্মেসী থেকে রোগীরা ন্যায্যমূল্যে ডায়াবেটিসের ওষুধপত্র কিনতে পারছে না। এসব জেনেও এ হাসপাতালের পাতানো অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের রথি-মহারথিরা প্রধানঅতিথি-বিশেষঅতিথি হয়ে আত্মপ্রসাদ লাভ করেন। যাদের এসব দেখভাল করার দায়িত্ব তারা রহস্যজনকভাবে নীরব ও নির্বিকার। যার বিরুদ্ধে এতোসব অভিযোগ তিনি হলেন চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের মেয়াদোত্তীর্ণ পরিচালনা কমিটির (২০১৫ সাল থেকে এ কমিটির মেয়াদ নেই) বহিস্কৃত সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরী। জাহাঙ্গীর চৌধুরীর প্রেসক্রিপশনে দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে চলছে ডায়াবেটিক হাসপাতাল। বিভিন্ন সময়ে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি, মানববন্ধন, সমাজসেবা অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় কর্তৃক দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পরও হাসপাতালটিকে তার ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহারের খেলায় মেতে আছেন। চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির নির্বাহী কমিটিতে যারা আছেন, তারা জাহাঙ্গীর চৌধুরীর নিয়োগকৃত লোক; প্রায় সকলেই তার আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব। কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আড়াইবছর বছর আগে মারা গেলেও এখনো সেই পদে কাউকে নেয়া হয়নি। সচিব পদে কাউকে নিয়োগ না দিয়ে নিজের লোক দিয়ে এ কাজ করানো হচ্ছে। জাহাঙ্গীর চৌধুরীই এ হাসপাতালের স্বঘোষিত মা-বাপ। হাসপাতালের হিসাব বিভাগ থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সকল পদে যারা আছেন সকলেই জাহাঙ্গীর চৌধুরীর আত্মীয় ও একান্ত অনুগত।
এদিকে তদন্তের নামে ডায়াবেটিক হাসপাতালে তুঘলকি কাণ্ড চলছে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের। এ মন্ত্রকের উপসচিব মু,জসীম উদ্দিন তিনমাস আগে তদন্ত করে ২৭লাখ ৫০ হাজার টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে সেই টাকা ১৫দিনের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। টাকা জমা না দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দেয়নি ডায়াবেটিক হাসপাতাল। এ অবস্থায় আবার নতুন করে হাসপাতাল সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর দুর্নীতি তদন্তের নোটিশ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রকের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালে তদন্ত কমিটির এক সদস্য ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. ওয়াজেদ চৌধুরী অভিকেকে না জানিয়ে লুকোচুরির মাধ্যমে এ তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়। তদন্তে দুর্নীতি প্রমাণিত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পরও আবার কেন তদন্ত করা হচ্ছে- প্রশ্ন করা হলে তদন্তকারী কর্মকর্তা যুগ্মসচিব মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন মুঠোফোনে চাটগাঁর বাণীকে বলেন, “ আমি নিজে থেকে তো কোনোকিছু তদন্ত করতে পারি না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশে তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি।”
স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তদন্তে সরকারি অনুদানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের অনুকূলে সরকারি অনুদান প্রদান স্থগিত করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনীত সরকারি তহবিল তছরুপসহ স্বজনপ্রীতি,দুর্নীতি এবং সরকারি অনুদানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ হাসপাতালের অনুকূলে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বরাদ্দ থেকে ১৭,৫০,০০০ টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে ১০,০০০০০ টাকা আগামী ১৫দিনের মধ্যে চালানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে অর্থমন্ত্রক। ব্যর্থ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে ৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব উম্মে হাবিবা স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জনস্বাস্থ্য-২ অধিশাখার উপসচিব মু. জসীম উদ্দিন ডায়াবেটিক হাসপাতালের সভাপতির বিরুদ্ধে আসা দুর্নীতির তদন্ত করে ১১ জুলাই ২০২৩ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ তদন্তে ডায়াবেটিক হাসপাতালের সব দুর্নীতির তদন্ত হয়নি। স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় এ হাসপাতালকে বছরের যে দুই কোটি টাকা অনুদান দেয়, শুধু তা নিয়ে তদন্ত হয় এবং তদন্তে ২৭লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
শুধু স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের অনুদান নয়, হাসপাতালের উপার্জিত আয় থেকে শুরু করে সকল সরকারি-বেসরকারি দান-অনুদান সমানে গিলে খাচ্ছেন জাহাঙ্গীর চৌধুরী। এর আগে হাসপাতালের বিভিন্ন খাতে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালে সমাজসেবা অধিদপ্তর প্রশাসক নিয়োগের আদেশ জারি করলেও আদালত কর্তৃক ৬মাসের স্থগিতাদেশের কারণে প্রশাসক নিয়োগ হয়নি। ৬ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বহিস্কৃত সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর আবেদনের মাধ্যমে প্রশাসক নিয়োগের স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়। হাসপাতাল তহবিলের টাকায় সকলকে ম্যানেজ করে জাহাঙ্গীর চৌধুরী বহাল তবিয়তে আছেন, চলছে দুর্নীতির লাগামহীন মহোৎসব। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন হিসাবের মাধ্যমে হাসপাতালের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আয়-ব্যয়,কেনাকাটা থেকে শুরু হাসপাতালের কোনো কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বলতে কিছুই নেই। জাহাঙ্গীর চৌধুরীকে ঘিরে আবর্তিত হয় সবকিছুই। যেনতেনভাবে বিল-ভাউচার বানিয়ে হাসপাতালের টাকা আত্মসাৎ করাই একমাত্র উদ্দেশ্য এখানে। বিনাটেন্ডারে ও সিডিএ’র অনুমতি না নিয়ে প্রায় ৩কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালের ৬তলা ভবনের নির্মাণকাজ যখন শেষ পর্যায়ে তখন সিডিএ তা বন্ধ করে দেয়, এখনও কাজ বন্ধ রয়েছে। বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যয় করে ভবননির্মাণ করলেও হাসপাতালের কোনো কাজে আসছে না। হাসপাতালের টাকায় ভবননির্মাণের কৃতিত্ব দেখানোর পাশাপাশি মোটাঅঙ্কের টাকা লোপাট করা-ই মূল উদ্দেশ্য বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
হাসপাতালে প্রভিডেন্ট ফান্ড নিয়েও আছে মহা অনিয়ম-দুর্নীতি। ১৯৯৮ সাল থেকে চালু হওয়া পিএফ ফান্ডে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা প্রতিমাসে চার লাখ টাকার ওপরে জমা দিয়ে আসছেন। বর্তমানে এ ফান্ডে ৭/৮ কোটি টাকা থাকার কথা। এ ফান্ডে কতটাকা জমা আছে- তা কখনো প্রকাশ করা হয় না, কারো জানার সুযোগ নেই। প্রভিডেন্ট ফান্ডের কোনো পাশবই দেয়া হয়নি কাউকে। অবসরে গেলে কর্মচারিদের ২/৩লাখ টাকা দিয়ে বিদায় করা হয়। ২০০৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত যে ৪৩জন কর্মকর্তা-কর্মচারিকে জোরপূর্বক পদত্যাগে ও বেআইনীভাবে চাকরি থেকে অবসরে যেতে বাধ্য করেছেন। এসব চাকরিচ্যুতদের গ্র্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে। কর্মকর্তাদের এখানে অবসরে গিয়ে পিএফ/গ্র্যাচুইটির টাকা পাওয়ার রেকর্ড নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি কর্মচারিদের রয়েছে প্রচণ্ড ক্ষোভ। তবে তার আত্মীয় কর্মচারিা সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। হাসপাতালে অনেক সিনিয়র কর্মচারি থাকার পরও গত সপ্তাহে ১৯জনআত্মীয় কর্মচারিকে “সিনিয়র” সংযুক্ত করে পদোন্নতি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষকরে জাহাঙ্গীর চৌধুরীর হয়ে যিনি হাসপাতালের সর্বময় কর্তৃত্বে আছেন- সেই প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমান উল্লাহ আমানের দুর্ব্যবহার ও অশালীন আচার-আচরণে কর্মচারিরা রীতিমতো অতিষ্ঠ। কথায় কথায় কর্মচারিদের চাকরি খাওয়া ও এখানে সেখানে বদলি করে দেয়া তার জন্যে ওয়ান টু’র ব্যাপার। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স রোগীদের ব্যবহারের সুযোগ নেই। আমানউল্লাহসহ অফিসের অন্য কর্মকর্তারা অফিসে আসা-যাওয়া ও ব্যক্তিগত কাজে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করেন।
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে অর্থ আত্মসাৎ,স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের তৎকালীন বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা.মো. সাখাওয়াত উল্লাহ চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা.মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীকে আহবায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন। কিন্তু সিভিল সার্জন দুর্নীতির তদন্ত করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করায় নতুন করে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য)এর দপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. সুমন বড়ুয়াকে সভাপতি, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার (ডি.সি) ডা. মো. নুরুল হায়দারকে সদস্যসচিব, চট্টগ্রাম জেলাপ্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (জেলাপ্রশাসক কর্তৃক মনোনীত) ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি(উপপরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম কর্তৃক মনোনীত) কে সদস্য করে (স্মারক নম্বর- প.স্বা.চ./তদন্ত/ প্রশা-২০২২/২৪/৮ তারিখ- ০১/০১/২০২৩ খ্রিস্টাব্দ মূলে) ৪ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। দশমাস গত হলেও দ্বিতীয়বারের মতো গঠিত তদন্ত কমিটি নানা অজুহাতে তদন্তকাজ শুরু করেনি। পরবর্তীতে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তদন্তে দুর্নীতি প্রমাণিত হয়।
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের বিতর্কিত সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে যারা চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশন, চট্টগ্রাম সমাজসেবা অধিদপ্তর ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বরাবরে আবেদন করেছেন, তারা হাসপাতালটিকে মহাদুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে বাঁচাতে ৫টি প্রস্তাব রেখেছেন, তা হলো- এক.যেহেতু ২০১৫সাল থেকে বর্তমান হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির কোনো বৈধতা নেই সেহেতু এ কমিটির সকল কার্যকলাপ অবৈধ ঘোষণা করে কমিটি বাতিল করা হোক। দুই. এডহক কমিটি নিয়োগ দিয়ে সকলের অংশগ্রহণে পরিচ্ছন্ন একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক। তিন. সৎ ও যোগ্য লোক দিয়ে আজীবন সদস্যদের তালিকা যাচাই-বাছাই করে হালনাগাদ করা হোক। চার. অডিট কমিটি নিয়োগ করে হাসপাতালের যাবতীয় হিসাব অডিট করা হোক। পাঁচ. যারা অন্যায় কাজের সাথে জড়িত তাদের সকলকে আইনের আওতায় আনা হোক।
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চট্টগ্রাম সমাজসেবা অধিদপ্তর ১৯৬১ সালের ৪৬ নম্বর অধ্যাদেশ অনুযায়ী স্বেচাছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ (রেজিস্ট্রেশন ও নিয়ন্ত্রণ) এর ধারা ৯ এর উপধারা (১) মোতাবেক বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদ সাময়িক বরখাস্তপূর্বক স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ (রেজিস্ট্রেশন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর ৯(২) উপধারা মোতাবেক জনাব মোস্তফা মোস্তাকুর রহিম খান, অতিরিক্ত পরিচালক, বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়, চট্টগ্রামকে প্রশাসক নিয়োগ করেছিল।
পরিপত্রে প্রশাসকের কার্যপরিধি সম্পর্কে বলা হয়-ক. সর্বশেষ অনুমোদিত কমিটির কাছ থেকে অথবা সরাসরি দায়িত্বভার গ্রহণ; খ. ১৯৬১ সালের অধ্যাদেশের আলোকে সমিতির অনুমোদিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কার্যনির্বাহী কমিটির সকল কর্তৃত্ব ও যাবতীয় দায়িত্ব পালন; গ. অনুমোদিত গঠনতন্ত্রের আলোকে বিধিমোতাবেক সংস্থার কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্নকরণ; ঘ. নির্বাচন ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নকরণসহ বিধি মোতাবেক সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির নিকট দায়িত্বভার হস্তান্তরকরণ।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়োগকৃত প্রশাসক মোস্তফা মোস্তাকুর রহিম খান যদি চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব নিতেন তাহলে এ হাসপাতালটিতে সুস্থ ধারা ফিরে আসতো। কিন্তু এ ফাঁকে বরখাস্তকৃত চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরী আবেদন করলে আদালত প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি ছয় মাসের জন্যে স্থগিত করে।গত ১ জুলাই ২০২৩ স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হলেও পুনরায় আবেদন করে মেয়াদ বাড়িয়ে নেয় জাহাঙ্গীর চৌধুরী।এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে জাহাঙ্গীর চৌধুরীকে মুঠোফোনে কয়েকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
লেখক- প্রধান-সম্পাদক, সাপ্তাহিক চাটগাঁর বাণী ও চাটগাঁরবাণীডটকম