[bangla_date] || [english_date]

ঢাকা প্রতিনিধি *

সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা ইস্যুতে স্থায়ী সমাধান না আসা পর্যন্ত রাজপথে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। একই সঙ্গে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন তারা।

বুধবার (১০ জুলাই) দিনব্যাপী রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন শেষে সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শাহাবাগ মোড়ে সমাবেশ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সেখানেই সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও ঢাবি শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ বলেন, আগামীকাল বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে সারা দেশে বাংলা ব্লকেড অব্যাহত থাকবে। রাজপথে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব, যতদিন দাবি মানা না হবে। দেশের আনাচে-কানাচে বাংলা ব্লকেড অব্যাহত রাখা হবে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ব্লকেড পালিত হবে।

আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাইছেন আদালত নয়, বরং জাতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান হোক। আন্দোলনের অন্যতম আহ্বায়ক সারজিস আলম বলেন, স্থায়ী সমাধান হওয়া প্রয়োজন। জাতীয় সংসদ থেকে আইন প্রণয় করে বাস্তবায়ন করতে হবে। নির্বাহী বিভাগ চাইলে আজকেই রাজপথে আন্দোলন শেষ হবে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যৌক্তিক সংস্কার করে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ কোটা রাখা যেতে পারে। শুধুমাত্র অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা কোটা পেতে পারেন; নাতি-নাতনিরা নন।

প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের আন্দোলনের পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করে। সেখানে বলা হয়, ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেড (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাতালিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। ওই পদসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো।

সব মিলিয়ে তখন নারীদের জন্য বরাদ্দ ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরীদের জন্য বরাদ্দ ৩০ শতাংশ এবং জেলাভিত্তিক ১০ শতাংশ, উপজাতিদের জন্য বরাদ্দ ৫ শতাংশ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ ১ শতাংশ কোটা বাতিল করা হয় ওই পরিপত্রে।

পরবর্তীতে পরিপত্রের ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন হাইকোর্টে রিট করেন। সে রিটের শুনানি নিয়ে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সে রুল যথাযথ ঘোষণা করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ বলে গত ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট। এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে ৪ জুলাই পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে বিষয়টি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার জজ আদালত। কিন্তু ওইদিন রিটের পক্ষের আইনজীবী না থাকায় তার পক্ষে সময় চাইলে সর্বোচ্চ আদালত শুনানি ‘নট টুডে’র আদেশ দেন।

পরবর্তীতে শনিবার (৬ জুলাই) রাজধানীর শাহবাগ থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সে অনুযায়ী রোববার ও সোমবার টানা দুদিন বিকেলে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে অবস্থান ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। এছাড়া দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও নিজ নিজ এলাকা থেকে এ কর্মসূচি পালন করেন। মাঝে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) গণসংযোগ কর্মসূচি পালনের পর বুধবার (১০ জুলাই) আবারও সকাল-সন্ধ্যা ব্লকেড কর্মসূচি দেন আন্দোলনকারীরা।

একইদিন কোটা বহাল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি হয়। শুনানির পর হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগ। চার সপ্তাহ পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হবে।