শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

সরকারি নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এজিএম করলো বরখাস্তকৃত চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতি

নিজস্ব প্রতিবেদক *

bsrm

গত ৩০মার্চ চট্টগ্রাম সমাজসেবা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির গত ৩১মার্চ ডাকা ৪৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা স্থগিত করলেও সরকারি নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এজিএম অনুষ্ঠানের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন সংস্থাটির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বরখাস্তকৃত ও অননুমোদিত সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরী।

দায়সারা ও লোকদেখানো এ বার্ষিক সাধারণ সভায় হাসপাতালের ২০ কর্মচারি, ৫জন জীবন সদস্য, জাহাঙ্গীর চৌধুরীর আত্মীয়স্বজন ও ভাড়াটে লোক মিলিয়ে ৪০/৫০জন লোক উপস্থিত ছিলেন। সমিতির সদস্যসংখ্যা যেখানে পাঁচহাজারের বেশি, সেখানে মাত্র ৫জন সদস্যের উপস্থিতিতে বার্ষিক সাধারণ সভা করা, কতোটা হাস্যকর- তা সহজেই অনুমেয়। অথচ অনুষ্ঠানের পর পত্রিকায় প্রকাশিত প্রেসবিজ্ঞপ্তির খবরে বলা হয় বার্ষিক সাধারণ সভায় বিপুলসংখ্যক জীবন-সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

গত৩০মার্চ চট্টগ্রাম সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপরিচালক মো. ফরিদুল আলম এক পরিপত্রের (স্মারক নম্বর- ৪১.০১.১৫০০.০০২১৬.১২৫.১৮.৩২৭, তারিখ-৩০মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ) মাধ্যমে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা স্থগিত করেছেন। পরিপত্রে বলা হয়, “সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীন নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতি’(রেজি. নম্বর সি-৬৯৫/৭৮) এর বর্তমানে কোনো অনুমোদিত কার্যকরী কমিটি নেই। সমাজসেবা অধিদপ্তরের অফিস আদেশ নম্বর – ৪১.০১.০০০০.০৪৬.২৭.০২৫.২২.১০০ তারিখ ২৫.০১.২০২৩ মূলে সংস্থার তৎকালীন কমিটিকে সাময়িক বরখাস্তপূর্বক স্বেচ্ছাসেবী  সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ (রেজিস্ট্রেশন ও নিয়ন্ত্রণ)অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর বিধান মোতাবেক প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। কাজেই সংস্থার অননুমোদিত কার্যকরী কমিটির সাধারণ সভা আহবানের কোনো বৈধতা নেই। তাছাড়া সংস্থার কার্যক্রম বিষয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট এর হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন নম্বর ১৬১০/২০২৩ চলমান আছে। এমতাবস্থায় আদালতের চূড়ান্ত রায় না পাওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা স্থগিত রাখার জন্যে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি (অননুমোদিত) জাহাঙ্গীর চৌধুরীকে অনুরোধ করা হয়েছে। “ads din

নিবন্ধনকারী কর্তৃপক্ষের স্থগিতকৃত এজিএম কীভাবে অনুষ্ঠিত হলো জিজ্ঞেস করা হলে চট্টগ্রাম সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপরিচালক মো. ফরিদুল আলম মুঠোফোনে চাটগাঁর বাণীকে বলেন, “ আমরা আইনীভাবে বেআইনি সভাটি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছি। কিন্তু কেউ যদি তা অমান্য করেন, তা দেখার দায়িত্ব আইন প্রয়োগকারী সংস্থার।”এজিএম স্থগিতের বিষয়টি সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনাকে অবহিত করা হয়েছে। পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়কে এ ব্যাপারে জানতে বারংবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

প্রশ্ন হচ্ছে, অবৈধভাবে আর কতদিন চলবে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতাল। চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ হাসপাতালটি পরিচালনা করলেও ২০১৫ সালে এ পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির অননুমোদিত সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরী এ হাসপাতালের হর্তা-কর্তা-বিধাতা ও স্বঘোষিত মা-বাপ। নির্বাহী কমিটিতে যারা আছেন, তারা তারই নিয়োগকৃত লোক; প্রায় সকলেই তার আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব। কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন সাড়ে তিনবছর  আগে মারা গেলেও এখনো সেই পদ খালি। নির্বাহী কমিটির অপর দুই সদস্য আরিফুর রহমান ও জয়শান্ত বড়ুয়ার মৃত্যুর এক বছর অতিবাহিত হলেও শূন্য পদে আর কাউকে নেয়া হয়নি। সচিব পদে কাউকে নিয়োগ না দিয়ে নিজের লোক দিয়ে এ কাজ করানো হচ্ছে। হাসপাতালের হিসাব বিভাগ থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সকল পদে যারা আছেন সকলেই জাহাঙ্গীর চৌধুরীর আত্মীয় ও একান্ত অনুগত। সম্প্রতি সমাজসেবা অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তদন্তে জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর প্রশাসক নিয়োগের নির্দেশ দিলেও আদালতের মাধ্যমে তা স্থগিত করা হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় আত্মসাৎকৃত সাড়ে ২৭লাখ ফেরতের নির্দেশ দিলেও তা দেয়া হয়নি।চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশনও জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে আসা দুর্নীতির তদন্ত করছে।

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও