সনাতন ধর্মালম্বীদের ঐতিহ্যবাহী তীর্থস্থান চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধামে আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে শিবচতুর্দশী মেলা, তবে এবার হচ্চেনা বৈদিক সম্মেলন।
মূলত তিন দিনের এ শিবচতুর্দশী মেলা চলবে ১৫ দিন পর্যন্ত। দোল পূর্ণিমার পরে মেলার পরিসমাপ্তি ঘটবে।
মেলাকে ঘিরে প্রতিবছর বৈদিক সম্মেলন করা হলেও এবার তা বাদ দিয়েছে আয়োজক কমিটি। সেই সাথে শব্দ দূষণ এড়াতে সীতাকুণ্ডের সকল মঠ-মন্দির ও দোকানে মাইক বাজানো বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দিয়েছেন মেলা ও স্রাইন কমিটি।
সীতাকুণ্ড স্রাইন (তীর্থ) কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট চন্দন দাস ও মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনোজ কুমার নাথ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
মেলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সীতাকুণ্ড স্রাইন (তীর্থ) কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট চন্দন দাস,যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র চক্রবর্তী, কার্যকারী সদস্য কৃষ্ণ চন্দ্র দাশ।
নেতৃবৃন্দরা জানান, আজ মঙ্গলবার থেকে শিবচতুর্দশী মেলা শুরু হলেও তিথি শুরু হবে বুধবার থেকে। পূর্ণ তিথিতে আগত সনাতনী ভক্তরা উপোস থেকে চন্দ্রনাথ ধামে আরোহন করবেন। সেখানে তারা দেবদেবীর কৃপা লাভে তার মাথায় ডাবের জল অর্পনের পাশাপাশি করবেন পূজার্চনা। এরপর বৃহস্পতিবার আমাবস্যা তিথিতে ভক্তরা পূর্বপুরুষের সদগতি লাভে ব্যাসকুণ্ডে স্নান শেষে তর্পণ করবেন।
এবারের মেলায় দশ লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম ঘটবে বলে আশাবাদী তিনি। তাই শিবচতুর্দশী মেলা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের পাশাপাশি তারাও ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।
মেলা ও স্রাইন কমিটি সুত্রে জানা যায়, ফাল্গুনী চতুর্দশী তিথিকে ঘিরে আয়োজিত এ ধর্মীয় উৎসবে প্রতিবছর দেশ-বিদেশের লাখ লাখ তীর্থ যাত্রীর আগমন হয়ে থাকে। ফলে বৃহৎ এ মেলা সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করা প্রশাসন ও মেলা কমিটির জন্য একটি চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়। সনাতন ধর্মপ্রাণ মানুষের সহযোগিতা, মেলা কমিটি ও প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টায় যুগ যুগ ধরে এ মেলাটি অত্যন্ত সুষ্ঠ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবছরও মেলাতে ১০লাখের অধিক তীর্থ যাত্রীর সমাগম হবে বলে ধারণা মেলা ও স্রাইন কমিটির।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন,আনুমানিক তিন’শ বছরেরও আগে সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথধামে শিব চতুর্দশী মেলা শুরু হয়। এটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। নানান কারণে সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথধাম প্রত্যেক সনাতন ধর্মাবলম্বীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
উল্লেখ আছে- দেবাধিদেব মহাদেব বলেছেন, কলিযুগে তিনি চন্দ্রনাথেই অবস্থান করবেন। এখানে যার মৃত্যু হবে তার আর পুনজন্ম হবে না। অর্থাৎ সে ব্যক্তি স্বর্গবাসী হবেন।
এবার শিবচতুর্দশী মেলা উপলক্ষে মঠ-মন্দির ও মেলাকে ঘিরে বসা সকল দোকানে মাইক বাজানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মাইকের পরিবর্তে তাদের সাউন্ড বক্সের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে নামাজ ও আজানের সময় সাউন্ড বক্স ও বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিবছর মেলায় চারদিকে মাইক বাজার কারণে প্রচণ্ড রকমের শব্দ দূষণ শুরু হয়। যার ফলে মেলায় এত সনাতনী ভক্তদের মাঝে কেউ হারিয়ে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়ার পরও তার পরিবারের কাছে শব্দ দর্শনের কারণে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। মেলা চলাকালে শুধু মেলা কমিটির অফিসে মাইক বাজানো হবে। যাতে করে মেলায় আগত ভক্তদের মাঝে যে কোনো তথ্য নির্বিঘ্নে পৌঁছে দেয়া যায়।
সীতাকুণ্ড স্রাইন কমিটির যুগ্ন-সম্পাদক সুব্রত চক্রবর্তী সুমিত্র বলেন,মেলায় তীর্থযাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে চন্দ্রনাথ মন্দিরের প্রবেশপথ ও আঙিনা পাকা করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বেশকিছু সিঁড়ি ভেঙে সেগুলো আবার নতুন ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। চন্দ্রনাথ মন্দিরে উঠার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে রেলিং লাগানোর পাশাপাশি বেশ কিছু অস্থায়ী শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। সেই সাথে নিরাপত্তা নিশ্চিতে ১০২টি সি সি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এবার বৈদিক সম্মেলন বন্ধ করা হয়েছে। যে স্থানে বৈদিক সম্মেলন হতো সে স্থানে প্যান্ডেল নির্মাণ করে মেলায় আগত সনাতনী পূর্ণার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফখরুল ইসলাম জানান, মেলা সফল করতে সীতাকুণ্ড ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কয়েক দফা মতবিনিময় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নেয়া হয়েছে।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান জানান,এবারের মেলাতে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকবে পুলিশ। মেলাকে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে গতবারের তুলনায় এবার ২০০ পুলিশ সদস্য বাড়িয়ে ৬০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে।