মহান বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ সোমবার সকাল ৯টায় মিউনিসিপ্যাল স্কুলস্থ অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বাসদ (মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা শাখা। পুষ্পস্তবক অর্পণের পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি ‘লাল সালাম’ প্রদান করা হয়।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন পরবর্তীতে এক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ(মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলার আহবায়ক শফি উদ্দিন কবির আবিদ, জেলা কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলা আহবায়ক আসমা আক্তার,বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের জেলা সাধারণ সম্পাদক জাহেদুন্নবী কনক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির স্কুল বিষয়ক সম্পাদক দীপা মজুমদার, নগর শাখার সভাপতি রিপা মজুমদার প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, ” ১৯৭১ সালের লাখো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে একটি শোষণমুক্ত,বৈষম্যহীন,গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রের জন আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৪ বছর ধরে শাসক দল সমূহ সেই আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে দেশকে পরিচালিত করেছে। সর্বশেষ গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে বলতেই দেশকে সে আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে পরিচালিত করেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পরিণত করেছিল দলীয় ইতিহাসে। শুধু তাই নয়, মানুষের সকল ধরণের মানবিক মর্যাদা কেড়ে নিয়ে দেশে একটি ভয়ের শাসন চালু করেছিল। ব্যাপক লুটপাট, সম্পদ পাচার,দূর্নীতির মাধ্যমে তৈরি করেছিল ব্যাপক বৈষম্য। এমনকি মত প্রকাশের নূন্যতম দিক ভোটাধিকারও কেড়ে নিয়েছিল। এর বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ লড়াই সৃষ্টি করে ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থান। যার মাধ্যমে পতন ঘটে হাসিনা সরকারের। জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও বড় প্রেরণা যুগিয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের আত্মত্যাগ। সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানেও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা ধ্বনিত হয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানের ৪ মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু এখনও সরকার জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার কাজ শুরু করতে পারেনি। একইভাবে ‘মব’ সৃষ্টি করে হত্যা বা মন্দির-মাজারে হামলার মতো ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। দেশি-বিদেশি সাম্প্রদায়িক শক্তির তৎপরতা মোকাবিলায়ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। বাজার সিন্ডিকেট এখনও আগের মতোই আছে। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রথম শর্ত হলো অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে বৈষম্য,ধনী-গরীবের পর্বতসম বৈষম্য তা দূর করার পদক্ষেপ গ্রহণ।কিন্তু সরকারের পক্ষ হতে সে ধরনের কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি। বাস্তবে,পুঁজিবাদী বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা বহাল রেখে সত্যিকারের বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র কায়েম করা যায়না। এর জন্য প্রয়োজন পুঁজিবাদী ব্যবস্থার পরিবর্তে একটি শোষণমুক্ত,বৈষম্যহীন সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লড়াই। আজ এ লড়াই বেগবান করার মাধ্যমেই একমাত্র মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা যাবে।”
নেতৃবৃন্দ বৈষম্যহীন সাম্যের সমাজ নির্মাণের সংগ্রামে সবাইকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান।