সর্বস্তরের মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসায় বিদায় নিলেন খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষীছড়ি উপজেলার মানবিক, জনবান্ধব ও সৃজনশীল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুলতানা রাজিয়া। তিনি চাদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে বদলী হয়েছেন।
বুধবার (১৬অক্টোবর) সকালে উপজেলা পরিষদ ত্যাগকালে ইউএনও সুলতানা রাজিয়াকে বিদায় জানাতে এসে বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য, কর্মচারী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এর আগে সন্ধ্যায় উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর পক্ষ থেকে বিদায় দেয়া হয়। শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষীছড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি মোবারক হোসেন এর সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিদায়ী অতিথি সুলতানা রাজিয়া, ড.মনওয়ার সাগর, মো. মোবারক হোসেন। বিদায়ী অতিথির উদ্দেশ্য সংগীত পরিবেশন করেন হোসনে আরা জনি,অর্ণিতা মহাজন, মেহেদী হাসান, ফারুক প্রমুখ।
এরপর লক্ষীছড়ি উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের আয়োজনে ইউএনও সুলতানা রাজিয়াকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেয়া হয়। উপজেলা শিক্ষা অফিসার শুভাশীষ বড়ুয়ার সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসার ড.মনওয়ার সাগর, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার সোহরাব হোসেন,পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ার ইব্রাহীম খলিল, সমবায় অফিসার ফেরদৌস বিলাসসহ বন কর্মকর্তা, পি আই ও,পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ম্যানেজার, সহকারি যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা, তথ্য কর্মকর্তা প্রমুখ।
বক্তাগণ বলেন, ইউএনও সুলতানা রাজিয়া ছিলেন-একজন উদারচিত্ত, সুদক্ষ, প্রজ্ঞামান কর্মকর্তা,একজন প্রবাদপ্রতিম ও মানবিক মানুষ এবং একজন আইকনিক ব্যক্তিত্ব।
তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে তিনি স্টয়িক (নিস্পৃহবাদী) ছিলেন। এ জন্য চার ধরনের গুণাবলি প্রয়োজন। যেমন প্রজ্ঞা, ন্যায়পরায়ণতা, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় ও বিরূপ অবস্থায় নির্ভার থাকা ও পরিমিতিবোধ। এর সব গুণই ইউ এন ও মহোদয়ের ছিল। পরিমিতিবোধ ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পারেন সবকিছু মোকাবেলা করতে । কঠিন পরিস্থিতিতেও তিনি প্রজ্ঞা দিয়ে যথেষ্ট নমনীয় হয়ে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করতেন। তিনি লক্ষীছড়ির মানুষকে ইতিবাচকভাবে বদলে যেতে সাহায্য করেছেন, সহকর্মীদের কাজ করার প্ল্যাটফরম তৈরি করে দিয়েছেন।
তিনি ছিলেন একজন স্বপ্ন সারথি। কর্মকর্তা কর্মচারীদের কঠিন সময়ে তিনি অকাতরে হাত বাড়িয়ে দিতেন,ব্যক্তিজীবনের কোনো এক দূদুল্যমান সময়ে পরম মমতায় ধৈর্য্যশীল হবার হিতোপদেশ দিয়ে সাহস যোগাতেন। প্রাণচঞ্চল কোনো উৎসবে সারাক্ষণ বন্ধুর মত পাশে থেকে অকৃত্রিম আনন্দ যোগাতেন। মোট কথা তাঁর কর্মদক্ষতা, লিডারশীপ কোয়ালিটি কিংবা নেতৃত্ব,জ্ঞানের পরিধি,ব্যবহার, আদর্শ,সৌন্দর্যবোধ, মায়া মমতা,আদর শাসন, বন্ধুত্ব এবং মানবতার গুনাবলীতে এলাকবাসী ও কর্মকর্তা কর্মচারী সকলেই মুগ্ধ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে প্রশাসনের দৈনিন্দন কার্য পরিচালনায়, কঠোর নিয়মানুবর্তীতায় ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় তিনি মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। তিনি একজন ঋদ্ধিমান কর্মবীর। লক্ষীছড়ির মানোন্নয়নে কাজ করে গেছেন নিঃস্বার্থভাবে। তিনি তাঁর সতত আদর্শিক অবস্থানটা ধরে রেখেছিলেন শেষ পর্যন্ত। এটাই ছিল তাঁর কর্ম জীবনের অলংকার। লক্ষীছড়ির সমৃদ্ধিতে তিনি অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন।
সরকারি রুটিন ওয়ার্কে থেকেও সাধারণের মন জয় করার চেষ্টা করেছেন।তাঁর সৃজনশীল কর্মদক্ষতা ও ইতিবাচক চিন্তায় পরিবর্তন এসেছে উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও সার্বিক চিত্র। তরুণ এই কর্মকর্তা দক্ষ প্রশাসক ও মানবিকতায় উপজেলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন ইউএনও সুলতানা রাজিয়া।তাঁর মানবিকতা ও আন্তরিকতায় লক্ষীছড়ি উপজেলার মানুষ মুগ্ধ ও আবেগাপ্লুত। জনবান্ধব এই ইউএনওর সার্বিক কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ ও প্রশংসা করেছেন কর্মকর্তাগণ, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যমকর্মী ও বিশিষ্টজনেরা।
বিদায় বেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হিসেবে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি আমার ওপর সরকারের অর্পিত দায়িত্ব স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক ও সমাজের বিশিষ্টজন সবার সঙ্গে সমন্বয় করে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। সকল কাজে উপজেলাবাসীর সহযোগিতা ও সমর্থন ছিল আমার মূল প্রেরণা। তিনি বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ও আন্তরিকতার জন্যও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘যে কোনো কাজের প্রতি ভালোবাসা,আন্তরিকতা সততা, স্বচ্ছতা থাকতে হয়। আমি সেটা করার চেষ্টা করেছি’।
তিনি আরও বলেন – রাষ্ট্র ও জনগণের কাজ পরিচালনা করতে গিয়ে আমার অগোচরে কেউ যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। তিনি আবেগ-আপ্লুত কণ্ঠে আরও বলেন, ‘লক্ষীছড়ি উপজেলার কথা আজীবন মনে থাকবে, এখানাকার মানুষের ব্যবহারে সত্যিই মুগ্ধ । এখানে চাকরি করার সুবাধে সাজেকসহ তিন পার্বত্য জেলার সৌন্দর্য ও এখানকার মানুষের আচার আচরণ ও জীববৈচিত্রের সাথে আমার পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয়েছে।এই পাহাড়,সবুজ বনানী আমাকে মুগ্ধ করেছে।
বিদায়সংবর্ধনা শেষে অফিসার্স ক্লাবের উদ্যোগে ডিনারের আয়োজন করা হয়।