জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের ১৭তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।বৃহস্পতিবার ( ২৮ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন কোম্পানির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমগীর কবির।
এতে উপস্থিত ছিলেন গ্রুপ চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল, পরিচালকবৃন্দ- মো. আশরাফুজ্জামান, মো. আবদুল আহাদ, মো. আজিজুল হক, স্বতন্ত্র পরিচালকদ্বয় সফিউল আলম খান চৌধুরী, মুখতার আহমেদ। নির্বাহী পরিচালক (ফাইন্যান্স এন্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট) কামরুল ইসলাম এফসিএ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা ও শেয়ার হোল্ডারদের প্রশ্নের উত্তর দেন। চিফ ফিনানসিয়াল অফিসার আবু বক্কর সিদ্দিক এফসিএমএ, গ্রুপ চিফ ফিনানসিয়াল অফিসার এইচ.এম. আশরাফ-উজ-জামান এফসিএ, ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি সচিব মো. মোশারফ হোসেন, কোম্পানির ঊর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও বিপুল সংখ্যক শেয়ারহোল্ডার, ব্যাংকার, স্টেকহোল্ডার বার্ষিক সাধারণ সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দেন।
উক্ত সভায় জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের ৩০ জুন ২০২৩ইং তারিখে সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন, সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং পরিচালনা পর্ষদের প্রতিবেদন সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত ও অনুমোদিত হয়। সভায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেয়ার হোল্ডারদের জন্য ঘোষিত ৫% নগদ লভ্যাংশ (স্পন্সর এবং পরিচালক ব্যতিত সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের জন্য) ৫ % স্টক লভ্যাংশ সহ মোট ১০% লভ্যাংশ অনুমোদিত হয়।
স্বাগত বক্তব্যে সভার সভাপতি মো. আলমগীর কবির বলেন, জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড স্থিতিস্থাপকতা এবং দুরদর্শিতার সাথে সংশ্লিষ্ট খাতের চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবেলা করেছে। অত্যাধুনিক কোয়ান্টাম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস প্রযুক্তি ব্যবহার করে যুগান্তকারী পণ্য GPH QUANTUM B600C-R এবং GPH QUANTUM B600D-R উৎপাদনের মাধ্যমে আমাদের উৎকর্ষতা চিহ্নিত হয়েছে-যা ভূমিকম্পসহনশীল, ৩০ % ব্যয় সাশ্রয়ী, শ্রমিক ও পরিবহন খরচ হ্রাস করবে। এই কৌশলগত পদক্ষেপের ফলে ইস্পাত শিল্পে আমাদের নতুন উচ্চতার দ্বার উম্মোচিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, গত অর্থবছরে সর্বোচ্চ গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করেছি, যা অনিয়ন্ত্রিত চ্যালেঞ্জের মধ্যেও আমাদের অব্যাহত প্রবৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ। উচ্চ আয়ের দেশে বাংলাদেশকে রূপান্তরিত করার প্রয়াসে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্য রেখে উদ্ভাবন, ক্রমাগত উন্নতি এবং অপারেশনাল উৎকর্ষের প্রতি অবিচল প্রতিশ্রুতি “সারভাইভাল ফর দি ফিটেস্ট” আমাদের পদক্ষেপে অন্তর্নিহিত রয়েছে। উচ্চ মেধার মানবসম্পদ সমৃদ্ধ একটি পারফরম্যান্স চালিত সংস্কৃতি গড়ে তোলার প্রতি আমাদের দৃষ্টি থাকায় আমাদেরকে পছন্দের নিয়োগকর্তায় পরিণত করেছে এবং এই প্রতিশ্রুতির কারনে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম কর্তৃক প্রদত্ত Industry, Innovation and Infrastructure ক্যাটাগরিতে SDG Brands Champion Award 2023 অর্জন করেছি।
গ্রুপ চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন কোভিড ১৯, ইউক্রেন যুদ্ধ, বাণিজ্য অবরোধ ইত্যাদির কারণে কঠিন সংকটের মধ্যেও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি এবং এখন পর্যন্ত অত্যন্ত সাফল্যের সাথে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের প্রযুক্তি, পণ্য ও পরিসেবার মান সর্বোপরি সঠিক ব্যবস্থাপনা এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। আমরা ইস্পাত মার্কেটে জিপিএইচ ইস্পাতের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে এবং মার্কেট অংশীদারিত্ব বাড়াতে প্রচেষ্টা চালিয়েছি।
তিনি বিশেষভাবে তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ডলারের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ইউটিলিটির মূল্য বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে। এর কারনে বাজারে এমএস রডের দাম বাড়ায় চাহিদাও কিছুটা কমেছে। তবে স্থানীয় চাহিদা কমার চেয়ে কারখানা পর্যায়ে ইস্পাতের উৎপাদন বেশি কমেছে। তাছাড়া বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ সংকটের কারনে অনেক সময় উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়েছে। এতদসত্ত্বেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিপিএইচ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), প্রাতিষ্ঠানিক কর, উৎস কর, সাপ্লিমেন্টারি শুল্ক, কাষ্টম শুল্ক, এবং বিবিধ রেজিষ্ট্রেশন ফি হিসেবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ৫,২০১.২০ মিলিয়ন টাকা জমা করেছে। অধিকন্তু ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড ইউটিলিটি বিল বাবদ ৪,৯৩১.১০ মিলিয়ন টাকা পরিশোধ করেছে। এক্ষেত্রে গত অর্থবছরের তুলনায় ৯.৭৪ % উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১৭.৬১ % রাজস্ব বেশি দেয়া হয়েছে।
সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্বতন্ত্র পরিচালকদ্বয় যথাক্রমে শফিউল আলম খান চৌধুরী ও মুখতার আহমেদ “শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষে জিপিএইচ পরিচালনা পর্ষদে সঠিক দায়িত্ব পালন করার দৃঢ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন”।
সমাপনী বক্তব্যে জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল বলেন, এশিয়ায় সর্বপ্রথম ও সর্বোচ্চ গুণ- মানের স্টিল আমরা উৎপাদন করেছি এবং চীনের মতো দেশে রপ্তানি করে বাণিজ্যে নয়া দিগন্ত উম্মোচন করেছি। জিপিএইচ একটি রেফারেল প্ল্যান্ট যা দেখতে বিশ্বখ্যাত কোম্পানী আমাদের প্ল্যান্ট পরিদর্শন করছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও রেগুলেটরি বডি সমূহ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।