নিজস্ব প্রতিবেদক *
চট্টগ্রাম- ৪ (সীতাকুণ্ড) আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির বিশেষজ্ঞ সদস্য লায়ন আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইমরান বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন। এতে উপস্থিত ছিলেন ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের তৃতীয় ও চতুর্থ সংসদের জাতীয় পার্টির সংসদ-সদস্য মো.আইনুল কামাল। এছাড়া এমপিপ্রার্থীর সহধর্মিনী লায়ন নিশাত ইমরান, বড়ভাই বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিক্ষানুরাগী আলহাজ্ মোহাম্মদ ইকবাল, সেজোভাই সীতাকুণ্ডের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ ইকরাম, সারতাজ মোহাম্মদ ইমরান, তাহিয়া নিশাত ইমরান, সারফারাজ মোহাম্মদ ইমরান, আমির নেওয়াজ, শিরিন আরা, জেরিন আরা, ফরিদুল আলম, মোহাম্মদ আলীসহ অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ-সম্মেলনে সাবেক সংসদ-সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আইনুল কামাল ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন যাতে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়,ভোটারেরা যাতে নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে এসে কোনো রকমের বাধা ছাড়া ভয়-ভীতিহীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে- সেই পরিবেশ বজায় রাখার জন্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। নির্বাচন চলাকালীন সময়ে কোনো রকমের সন্ত্রাস, গুণ্ডামি ও মাস্তানী সহ্য করা হবে না- হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, নির্বাচন যাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হয়, ভোটার উপস্থিতি যাতে সন্তোষজনক হয়- সেই ব্যাপারে তিনি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীসহ সকল রাজনৈতিকদলের সহযোগিতা কামনা করেন। শিল্পকারখানার আরও সম্প্রসারণ ও সীতাকুণ্ডের সার্বিক উন্নয়নে সুযোগ্য ও ভালো প্রার্থী মোহাম্মদ ইমরানকে বিজয়ী করতে তিনি সাংবাদিকসহ সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। স্বতন্ত্রপ্রার্থী ইমরানের বিজয় সুনিশ্চিত প্রত্যাশা করে তিনি আরও বলেন, ইমরানদের পরিবার দীর্ঘসময় ধরে সীতাকুণ্ডবাসীকে দান-অনুদান দিয়ে আসছে। এ পরিবারের কোনোকিছুর অভাব নেই,আছে সেবা দেয়ার অভাব। তাই আসন্ন নির্বাচনে ঈগল মার্কা প্রার্থীকে বিজয়ী করে বৃহত্তর পরিসরে তাঁকে সেবাদানের সুযোগ করে দিতে আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। প্রার্থীতা জটিলতার কারণে আমাদের দেরিতে নির্বাচনী মাঠে আসতে হয়েছে। এখনো নানা ষড়যন্ত্র চলছে। তাই, ঈগল প্রতীকের বার্তা সকল ভোটারের কাছে পৌঁছে দিতে সাংবাদিকদের উদাত্ত আহবান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে এমপি প্রার্থী মোহাম্মদ ইমরানকে সীতাকুণ্ডের পরিবেশ দূষণ, যানজট, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকবেন কি না, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো শক্তি-সামর্থ্য আছে কিনা-এ ধরনের বিভিন্ন প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। সকল প্রশ্নের যথার্থ উত্তর দিয়েছেন এমপিপ্রার্থী মোহাম্মদ ইমরান। লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ ইমরান বলেন, আমি ‘অপরাধমুক্ত সুশিক্ষিত সমাজ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে’ এমপি প্রার্থী হয়েছি। বৃহত্তর পরিসরে তৃণমূলের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের সেবা করা জন্যে জনপ্রনিধি হওয়ার বিকল্প নেই। আমি সীতাকুণ্ডের গৌরবোজ্জ্বল আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবার অনুমতি দিয়েছেন। সেজন্য ঈগল পাখি প্রতীক নিয়ে হাজির হয়েছি। সমাজের তৃণমূলের মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আমি কাজ করতে চাই। তবে প্রার্থীতা জটিলতা নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও আদালতে দৌঁড়াদৌড়ি করতে যেয়ে আমাদের হাতে সময়ও খুবএকটা নেই। যে সময়টুকু আছে তাতে গণসংযোগ করা, নির্বাচনী এলাকার সম্মানিত ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যাওয়া – কোনোটার সুয়োগ এখন তেমনএকটা নেই। তবে আনন্দে মন ভরে যায়, যখন এলাকাবাসীরা বলেন, আপনি সময়ের অভাবে আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে না পারলেও আমরা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারলে এবং আমাদের ভোট অন্যকেউ না দিলে সাদামনের মানুষ হিসেবে আপনাকে দেবো। এ স্বল্প সময়ের মধ্যে আমার প্রার্থীতা ও নির্বাচনী লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের বার্তা সম্মানিত ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিতে সাংবাদিক ভাইদের সহযোগিতা চাই।
স্বতন্ত্রপ্রার্থী ইমরানের বড়ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ ইকরাম নির্বাচনী কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করেন।
লায়ন ইমরানের সহধর্মিনী বিশিষ্ট নারীউদ্যোক্তা লায়ন নিশাত ইমরান বলেন, ভোটারেরা আমাদের কাছে শঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, আমরা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবো কি না। আমরা তাদের বলে আসছি, না এবার আর আগের মতো ভোট হবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। এবার শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। তাই, যার ভোট সেই যাতে সহজেই দিতে পারে- সেই ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
এ সময় লায়ন আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইমরান সাংবাদিকদের সামনে ১৫ দফা সম্বলিত তাঁর নির্বাচনী ইশতেহার উপস্থাপন করেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
নির্বাচনী ইশতেহার:
সমৃদ্ধ জনপদ সীতাকুণ্ডে অপরাধমুক্ত সুশিক্ষিত সংঘবদ্ধ ও একনিষ্ঠ নেতাকর্মীর প্রয়োজন। স্রষ্টার অশেষ কৃপায় আমার জন্মস্থান এবং আশৈশবের চারণভূমি বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার ও সীতাকুণ্ড প্রাচীনকাল থেকে সমৃদ্ধ আত্মনিভরশীল জনপদ। আল্লাহর দয়ায় এখানে ক্ষুধা-মন্দা কিংবা দারিদ্রের হাহাকার নেই।
তাছাড়া, যাবতীয় উন্নয়ন প্রচেষ্টা অশিক্ষার অন্ধকারে, অপরাধের করাল স্রোতে হারিয়ে যায়। তাই, বাংলাদেশের মহান জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে আমাদের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হবে—১. অপরাধমুক্ত সুশিক্ষিত সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করা।
২. আমার প্রথম প্রচেষ্টা হবে সীতাকুণ্ডকে দলীয় কোন্দলের ভয়াবহ বলয় থেকে বের করে আনা। আমি কোন্দল পছন্দ করিনা এবং কোনোপ্রকার কোন্দলের সাথে জড়িত নই। সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ পেলে সীতাকুণ্ডের সকল নেতা, কর্মী, সমর্থক প্রত্যেকের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করে সবাইকে সাথে নিয়ে দল-মত-নির্বিশেষে সবাই একসাথে মিলে ‘অপরাধমুক্ত সুশিক্ষিত সমাজ গড়ার মূলমন্ত্রে সীতাকুণ্ডবাসীর সেবা করবো। ধর্ম-বর্ণ, দল-মত, ধনী-গরীব, শ্রমিক-মালিক ব্যবসায়ী-ভোক্তা, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় নির্বিশেষে স্মার্ট সোনার বাংলায় সীতাকুণ্ডের আপামর সকল মানুষের সেবা-ই হবে আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য।
৩. সীতাকুণ্ডের সাধারণ মানুষ— যাদের নিজস্ব গাড়ি নেই, কিংবা স্বল্প দূরত্বের কারণে বাস-ট্রাক-ট্রেনে যাতায়াতও ঝামেলাপূর্ণ এবং নিতান্তই কষ্টকর তাঁদের কথা মাথায় রেখে সীতাকুণ্ড থেকে চট্টগ্রাম শহর পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সমান্তরালে বিশেষ সিএনজি অটোরিকশা লেইন তৈরি করা।
৪. শিক্ষার আলো প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিতে সীতাকুণ্ডে একটি সরকারি কলেজ (বালক) স্থাপন / সরকারীকরণের কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া।
৫. পর্যটনশিল্পের প্রসারে গুলিয়াখালী সৈকত, সহস্রধারা ঝর্ণা, চন্দ্রনাথ পাহাড়, ইকোপার্ক, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের যথাযথ উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেয়া।
৬. বর্তমানে সীতাকুণ্ডের সবচে সমস্যাগুলোর অন্যতম, বেকারত্ব নিরসনে স্থানীয় তরুণ-তরুণীদের শিক্ষা ও যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চাকুরির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে আমাদের অন্যতম প্রধান কাজ।
৭. অরক্ষিত সমুদ্র উপকূলে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার পাশাপাশি পাহাড়ি ঢল জনিত জলাবদ্ধতা নিরসনে পর্যাপ্ত স্লুইসগেট নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৮. জাহাজভাঙা শিল্পের প্রসারে বিশেষ ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠা করা।
৯. সীতাকুণ্ডের সবজি সারাদেশের মধ্যে সুস্বাদু। বিশেষত, শীতকালীন শিম, বরবটি, টমেটো অত্যন্ত প্রসিদ্ধ। যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে এ অঞ্চলের কৃষকদের জন্য তা সোনা ফলা বিবেচিত হতে পারে। এজন্য শীতকালীন সবজি বিশেষ করে টমেটো সংরক্ষণাগার নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হবে।
১০. এতদাঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবাকে অত্যাধুনিক ও মডেল হিসেবে উপস্থাপন উপযোগী করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ১৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
১১. পাহাড়কাটা, জমিদখল ও যত্রতত্র কারখানার বর্জ্য অপসারণ রোধকল্পে পর্যাপ্ত ও যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং যথেষ্ট পরিমাণে ইটিপি’র ব্যবস্থাকরণ।
১২. সোনাইছড়ি, ভাটিয়ারী ও সলিমপুরে ফায়ার স্টেশন নির্মাণ।
১৩. স্টেডিয়াম, শিশুপার্ক ও থিয়েটার ইনস্টিটিউট নির্মাণ।
১৪. ২৫৬ কিলোমিটার গ্রামীণ কাঁচারাস্তা পাকাকরণ।
১৫. চট্টগ্রাম-সীতাকুণ্ড বিকল্প সড়ক হাবিব রোডের মানোন্নয়ন।