[bangla_date] || [english_date]

নিজস্ব প্রতিবেদক *

ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের ৯‌টি দানবাক্স থে‌কে পাওয়া গে‌ছে ২৩ বস্তা টাকা। শ‌নিবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল সা‌ড়ে ৭টায় মস‌জি‌দের নিচতলায় থাকা সিন্ধুকগু‌লো খোলা হয়।

এর আগে গত ১৯ আগস্ট ৮‌টি দানবাক্স খু‌লে পাওয়া গি‌য়ে‌ছি‌লো ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৫২৯ টাকা।

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে এর আগে গত ১৯ আগস্ট ৮‌টি দানবাক্স খু‌লে পাওয়া গি‌য়ে‌ছি‌লো ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৫২৯ টাকা।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পু‌লিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখসহ প্রশ‌াসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা‌দের উপ‌স্থি‌তিতে এসব সিন্দু‌কের টাকা ২৩‌টি বস্তায় ভ‌রে মস‌জি‌দের দ্বিতীয় তলায় আনা হয়। এরপর মস‌জি‌দের মে‌ঝে‌তে ঢে‌লে শুরু হয় গণনা। বি‌কেল নাগাদ টাকার প‌রিমাণ জানা যা‌বে।

এর আগে গত ১৯ আগস্ট ৮‌টি দানবাক্স খু‌লে পাওয়া গি‌য়ে‌ছি‌লো ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৫২৯ টাকা। এর আগে গত ৬ মে মস‌জি‌দের দানবাক্স থে‌কে পাওয়া গি‌য়ে‌ছিল রেকর্ড ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৯ হাজার ৫২৫ টাকা।

সকাল থে‌কে দানবা‌ক্সে পাওয়া ২৩ বস্তা টাকা গণনার কা‌জে অংশ নেয় হা‌ফি‌জিয়া মাদ্রাসার শতা‌ধিক শিক্ষার্থী, রূপালী ব্যাংকের ৫০ কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ দুই শতা‌ধিক মানুষ।

জেলা প্রশাসক জানান, শ‌নিবার সকালে মস‌জি‌দের সাম‌নে ও বামপা‌শে রাখা বড় বড় ৯টি লোহার দান‌ সিন্দুক খোলা হয়। সাধারণত তিন মাস পর সিন্দুকগুলো খোলা হয়। এবার ৩ মাস ২০ দিন পর পর সকাল সা‌ড়ে ৭টায় জেলা প্রশাসক, পু‌লিশ সুপার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এটিএম ফরহাদ চৌধুরীসহ কা‌লেক্ট‌রে‌টের ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মসজিদের ৯‌টি লোহার বড় বড় সিন্দুক খোলা হয়। এগু‌লো থেকে ২৩ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। বস্তাভ‌র্তি টাকা মস‌জি‌দের দ্বিতীয় তলায় ঢে‌লে শুরু হয় গণনা।

রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলামসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ দুই শতা‌ধিক মানুষ টাকা গণনায় অংশ নিয়েছেন।

জানা গে‌ছে, পাগলা মসজিদে মানত করলে মনের আশা পূর্ণ হয়। এমন ধারণা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অসংখ‌্য মানুষ এ মসজিদে দান করে থাকেন।

জনশ্রুতি রয়েছে, এক সময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদীর মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা চ‌রে। ওই পাগল সাধকের মৃত‌্যুর পর এটি পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী। তখন থে‌কে এ মস‌জি‌দে লোকসমাগম বাড়‌তে থা‌কে।

এখা‌নে মানত করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এ মসজিদে। তারা নগদ টাকা-পয়সা, সোনা ও রুপার অলঙ্কারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি এমনকি বিদেশি মুদ্রাও দান করেন।

বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নামে। আগতদের মধ্যে মুসলিমদের অধিকাংশই জুমার নামাজ আদায় করেন মসজিদে। এর ইতিহাস প্রায় ২৫০ বছরেরও বেশি সময়ের বলে জানা যায়।

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ জমির ওপর মসজিদটি গড়ে উঠলেও বর্তমানে মসজিদ কমপ্লেক্সের ৩ একর ৮৮ শতাংশ জায়গা রয়েছে। এ মসজিদের পরিধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্য।

এরইমধ্যে দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে পাগলা মসজিদ ইসলামি কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতে অর্থ সাহায্য করা হয়।

মসজিদের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়। এছাড়া করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককেও অনুদান দেয়া হয়েছে এ দানের টাকা থেকে।

পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানিয়েছে, ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দ্রুতই এর কাজ শুরু হবে। যার নামকরণ হবে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’।

এটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। সেখানে ৬০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

কি‌শোরগ‌ঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, খুব দ্রুতই  শুরু হবে মস‌জিদ কমপ্লেক্সের কাজ।