১৮ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ || ৩রা অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

স্টেডিয়ামে বিয়ার বিক্রি নিষিদ্ধ করা ও আবাসন সমস্যা  নিয়ে ফুঁসছিল ইংলিশ ফুটবল দর্শকরা। গতকাল সোমবার টিকিট অ্যাপের ঝামেলায় মাঠে ঢুকতেও বিলম্ব হয়েছে অনেকের। তবে ইরানের বিপক্ষে ৬-২ গোলের জয়ে তাদের সব বিরাগ নিশ্চয় ধুয়ে গেছে। বিশ্বকাপে ফেরাটা জয়ে রাঙিয়ে নিয়েছে নেদারল্যান্ডসও।

লুই ফন হালের দল ২-০ গোলে হারিয়েছে আফ্রিকান চ্যাম্পিয়ন সেনেগালকে।

ইরান বিশ্বকাপে যায় চিহ্ন আঁকতে। আর ইংল্যান্ডের চোখ থাকে শিরোপায়। ম্যাচ পরিসংখ্যান আর ফলে সেটা স্পষ্টও। ৭৮ শতাংশ বল দখলে ছিল ১৯৬৬-র বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের।স্বভাবতই গোলেও সবচেয়ে বেশি শট ইংল্যান্ডের, ১৩টি। তবে বল দখলের মতো গোলে শটেও পিছিয়ে থাকা ইরানের চিহ্ন আঁকা হয়ে গেছে। এঁকেছেন দলটির ফরোয়ার্ড মেহদি তারেমি। পর্তুগিজ ক্লাব এফসি পোর্তো তো আর অকারণে ২০ মিলিয়ন ডলারে দলে ভেড়ায়নি। ইরানের দুটি গোলই তারেমির, যার প্রথমটি বিশ্বমানের। দ্বিতীয়ার্ধে চকিত ভলিতে গোল করে নিজের জাত চিনিয়েছেন তিনি। আর শেষটি ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে, পেনাল্টিতে। তাতে ইরানের জার্সিতে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল এখন তারেমির।

অবশ্য তারেমির ঝলক দেখার আগে একটি রেকর্ড করে বসেন ইংল্যান্ডের জুড বেলিংহাম। ম্যাচের বন্ধ্যত্ব ঘোচে জার্মান ক্লাব বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের এই খেলোয়াড়ের হেডে। রেকর্ড বলছে, ২০০০ সালের পর জন্মগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রথম বিশ্বকাপ গোলদাতা বেলিংহাম। মাইকেল ওয়েনের পর তিনিই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে কম বয়সী গোলদাতা।

৩৫ মিনিটে পিছিয়ে পড়ার পর ইরানকে দেখে মনে হচ্ছিল উদ্বোধনী ম্যাচে ইকুয়েডরের বিপক্ষে পথহারা কাতার! প্রথমার্ধের বাঁশি বাজার আগে খেয়ে বসে আরো দুটি গোল। প্রথমটি বুকায়ো সাকার। ইনজুরি টাইমে পরেরটি করেন রাহিম স্টার্লিং।

প্রথমার্ধে বলার মতো কোনো আক্রমণই গড়ে তুলতে পারেনি ইরান। উল্টো ইংল্যান্ডের ডিফেন্স লাইন প্রায় পুরোটা সময় কাটিয়েছে ইরানের সীমানায়। দ্বিতীয়ার্ধে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন ঘটলেও প্রথম গোলের দেখা পায় ইংল্যান্ডই। আবারও সাকা মাতিয়েছেন ইংলিশ দর্শকদের। মিনিট তিনেক পর হাফ চান্স থেকে দারুণ গোল করে গ্যালারির ইরানি অংশকে আনন্দ দিয়েছেন তারেমি। তবে ৪-১ ব্যবধান ঘুচানো তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। তা ছাড়া বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকা ইংলিশ ফুটবলারদেরও গোলের ক্ষুধা তখনো মেটেনি।

বদলি হিসেবে নেমেই মার্কাস রাশফোর্ড নাম লিখিয়ে ফেলেন স্কোরশিটে। সাইড লাইন থেকে দীর্ঘক্ষণ সতীর্থদের গোলোৎসব করতে দেখা জ্যাক গ্রিয়েলিশও ‘লোভ’ সংবরণ করতে পারেননি, ৬-১ হয় তাঁর লক্ষ্যভেদে। এমন একতরফা ম্যাচে পিছিয়ে পড়া দলের পেনাল্টি পাওয়া বিস্ময়কর। ইরান সেটি পেয়েছে এবং ঠাণ্ডা মাথায় সেটি কাজেও লাগিয়েছেন তারেমি।

সাদিও মানেকে ছাড়া সেনেগালকে যতটা খর্ব শক্তির মনে হচ্ছিল, মাঠের খেলায় হয়েছে তার উল্টো। নেদারল্যান্ডসের রক্ষণভাগের সমন্বয়হীনতায় প্রথমার্ধে বারবার আক্রমণ শানিয়েছে আফ্রিকার চ্যাম্পিয়নরা। ডাচেদর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অনেকটা সময় লড়েছে আলিউ সিসের দল। তবে শেষ পর্যন্ত ডাচেদর সঙ্গে পেরে ওঠেনি আফ্রিকার দলটি। আক্রমণ আর পাল্টা-আক্রমণে কোনো দলেরই চেষ্টার কমতি ছিল না। কিন্তু প্রতিপক্ষের রক্ষণে গিয়ে যতটা ধারালো হওয়া প্রয়োজন, ততটা পারেনি কেউই। ১৯ মিনিটে গোলরক্ষককে একা পেয়েছিলেন ডাচ্ মিডফিল্ডার ডি ইয়ং, কিন্তু তালগোল পাকিয়ে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন বার্সেলোনায় খেলা এই ফুটবলার। প্রথমার্ধে করা ভুল দ্বিতীয়ার্ধে পুষিয়ে দিয়েছেন ডি ইয়ং। ৮৪ মিনিটে তাঁর অসাধারণ ক্রস থেকেই হেডে লক্ষ্যভেদ করেন কোডি গাকপো। সেনেগাল গোলরক্ষক এদুয়ার্দো মেন্দিকে ফাঁকি দিয়ে বল জড়িয়ে যায় জালে। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় ডাচ্রা। গোল করে বদলি নামা ডেভি ক্লাসেন ডাচ্ সমর্থকদের আনন্দে ভাসান।