স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী হলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম আরো বেশি সুফল পাবে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
রবিবার( ১৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস ২০২৩ উদ্যাপন উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচির আয়োজনে এ মন্তব্য করেন মেয়র। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো স্থানীয় সরকার দিবস পালনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে চসিক তিনদিন ব্যাপি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
রঙিন বেলুন উড়িয়ে শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হয় চসিকের স্থানীয় সরকার দিবস উদযাপন। নগরীর লালদিঘী মাঠ থেকে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস উপলক্ষে একটি শোভাযাত্রা থিয়েটার ইন্সটিটিউটে এসে শেষ হয়। এর আগে লালদিঘীস্থ চসিক লাইব্রেরি ভবনে দিনব্যাপী ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা মেডিক্যাল ক্যাম্পের (ডেঙ্গু টেষ্ট, চক্ষু ও শিশু স্বাস্থ্য) উদ্বোধন করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এম.পি.।
এরপর থিয়েটার ইন্সটিটিউটে প্রধান অতিথি হিসেবে মেয়র রেজাউল মুখে খাওয়া কলেরা টিকাদান ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনের পর “সেবা ও উন্নতির দক্ষ রূপকার উন্নয়নে উদ্ভাবনে স্থানীয় সরকার” প্রতিপাদ্য শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশ নেন।
সভাপতির বক্তব্যে মেয়র বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন, সমস্যা এবং তা উত্তরণের উপায় সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি অবগত থাকেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার উন্নয়ন কার্যক্রমের সুফল জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালি করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী হলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম আরো বেশি সুফল পাবে।
“স্থানীয় সরকারের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের উন্নয়নে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে কেবল রাজস্ব আয়ের উপর নির্ভর করায় চসিকের পক্ষে এত বড় শহরের কার্যক্রম পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে। চসিক যে রাস্তাগুলো বানায় বন্দরের ভারী গাড়ি চলার কারণে শহরের সে রাস্তাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সচল রাখতে বন্দরের কাছ থেকে চার্জ আদায়ের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করেছি। আমাদের রাজস্ব আয়ের উপর ভিত্তি করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতকেও এগিয়ে নিচ্ছি। আধুনিকায়ন করা হচ্ছে নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। হোল্ডিং ট্যাক্সকে যথাযথকরণ করে সহনীয় পর্যায়ে কর আদায় করা হচ্ছে। সার্বিকভাবে নানন্দিক চট্টগ্রাম গড়তে কাজ করছি আমরা।”
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
“চট্টগ্রামে ঢাকার মতো শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণি নেই। এজন্য আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে রাজস্ব খাতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। বিশেষ করে বন্দরের আয়ের একটি অংশ চসিক পেলে চট্টগ্রামের উন্নয়ন কার্যক্রম আরো প্রসারিত হবে। জনসেবা বাড়াতে চসিকের অভিযোগ সুরাহা ও নিষ্পত্তির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। জনগণের অর্থ জনস্বার্থে ব্যয় হচ্ছে কী না তা নিশ্চিতে জনপ্রতিনিধিদের মনিটরিং বাড়াতে হবে।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মূল লক্ষ্য ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। আর এ লক্ষ্যে সরকার প্রথমবারের মতো স্থানীয় সরকার দিবস পালন করছে। সরকার চায় যারা সাধারণ মানুষ তাদের ভাগ্য বদলের মাধ্যমে শহরের সুযোগ-সুবিধাকে গ্রাম পর্যায়ে নিয়ে যেতে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে সরকার যে সমস্ত কার্যক্রম গ্রহণ করে তার সুফল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দিতে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। উন্নত দেশ গড়তে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠানে সেরা করদাতা হিসেবে ৪ ব্যক্তি ও ৩ প্রতিষ্ঠানের হতে মেয়র রেজাউল করিম এবং স্মার্ট সিটি কার্যক্রমে অবদান রাখায় প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলাল ও জনসেবায় বিশেষ অবদান রাখায় মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেমের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এম.পি.।
স্বাগত বক্তব্যে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়নে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ও রূপরেখা তুলে ধরেন। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, সমাজ কল্যাণ স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি আবদুস সালাম মাসুম, স্বাস্থ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি জহর লাল হাজারী। অনুষ্ঠানে চসিকের প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলরবৃন্দ, বিভাগীয় সভাপতিবৃন্দসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এবারের আয়োজনের মধ্যে আরো আছে কর মেলা, বিশেষ পরিচ্ছন্নতা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধী ক্যাম্পেইন এবং কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ।
বরাদ্দ পেলে চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যক্রম বাড়াবো: মেয়র
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পেলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যক্রম বাড়িয়ে আরো বেশি প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
রবিবার থিয়েটার ইন্সটিটিউটে মেয়র রেজাউল মুখে খাওয়া কলেরা টিকাদান ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন। এরপর বিকালে টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে জাতিসংঘ শিশু তহবিলের স্বাস্থ্য শাখার প্রধান মায়া ভ্যানডেনেন্টের সাথে সাক্ষাৎ করেন মেয়র।
অনুষ্ঠান দুটিতে মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বাংলাদেশের একমাত্র সিটি কর্পোরেশন যেটি নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে। একসময় চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের সুনাম ছিল সারাদেশে। তবে, পরবর্তীতে পর্যাপ্ত মনোযোগ না পাওয়ায় চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগ তার জনসেবার ঐতিহ্য হারায়। আমি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরপরই চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্দশা দূর করতে দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছি। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর মেমন হাসপাতালকে ঢেলে সাজিয়েছি, অর্থোপেডিক পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তুলেছি। মাতৃসেবা সম্প্রসারণের পাশাপাশি বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল গড়ার পরিকল্পনাও আছে আমার।
“৪১ টি ওয়ার্ডে ৫৬টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে মূলত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সেবা দেয় চসিক। করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগীদের বিনামূল্যে পরীক্ষাও করেছে চসিক। তবে স্বাস্থ্যসেবার জন্য আমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে নিজেদের রাজস্ব আয়ের উপর নির্ভর করতে হয়। এজন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পেলে বর্তমান অবকাঠামো ও জনবল ব্যবহার করেই চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যক্রম বাড়িয়ে আরো বেশি প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব।”
অনুষ্ঠান দুটিতে উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র আফরোজা কালাম, কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, আবদুস সালাম মাসুম, চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও লাইন ডাইরেক্টর, কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম, আইসিডিডিআরবির সিনিয়র কনসালটেন্ট ড. ফিরদৌসি কাদরী, জাতিসংঘ শিশু তহবিলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফিল্ড অফিসের প্রধান মাধুরী বানার্জী, হেলথ স্পেশালিস্ট ডা.রিয়াদ মাহমুদ।