ডা. সাইফুল আলম *
ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সময়ের কথা৷ রাশিয়া এবং তুরস্কের মধ্যকার যুদ্ধ৷
১৮৫০ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে তুরস্কের নিয়ন্ত্রিত দারদানেলিস প্রণালী দিয়ে যুদ্ধ জাহাজ চলাচলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তুরস্কের খ্রিস্টানদের রক্ষার অজুহাতে রাশিয়া আক্রমণ চালায়৷
এই সূত্রে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সূচনা হয়৷ রাশিয়ার সাথে এই যুদ্ধে তুরস্কের সাহায্যার্থে ব্রিটেন ও ফ্রান্স এগিয়ে আসে৷
ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সময় ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল ছিলেন হেড নার্স৷ ইংরেজ- তুর্কি নির্বিশেষে দু’দেশের আহত মুমূর্ষু সৈন্যদের দিনরাত ধরে প্রাণঢেলে সেবা করেন তিনি৷ গভীর রাতে হাসপাতালের করিডোরে রোগীদের প্রয়োজন দেখতে হাতে মোমবাতি নিয়ে তিনি হেঁটে বেড়াতেন৷ তাই মানুষ এখনো স্মরণে রেখেছেন ‘ লেডি উইথ ল্যাম্প’ কে৷
ক্রিমিয়ার যুদ্ধ নার্সিং ইতিহাসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে৷ অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে ৩৮ জন সেবিকা নিয়ে আহত সৈন্যদের সেবা দিয়ে যান নাইটিঙ্গেল৷
আধুনিক নার্সিং এর জননী ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মদিন ১২ মে কে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৭৪ সাল থেকে তাঁর জন্মদিনটি ‘ আন্তর্জাতিক নার্স দিবস’ হিসেবে পুরো বিশ্বে পালিত হয়ে আসছে৷
১৮২০ সালের ১২মে ইতালীর অভিজাত পরিবারে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল এর জন্ম৷
১৭ বছর বয়সে লন্ডনে আসেন ফ্লোরেন্স৷ সেই সময় লন্ডনের হাসপাতালগুলোর অবস্থা ছিল করুণ৷ এর অন্যতম কারণ সে সময় কেউ তেমন সেবিকার কাজে এগিয়ে আসতেন না৷ সামাজিকভাবেও মর্যাদা দেয়া হত না এই পেশাকে৷
তবে ফ্লোরেন্স জানতেন পৃথিবীতে তিনি এসেছেন সেবিকা হওয়ার জন্যই৷ বাবা মা বিরূপ হয়েছেন সময়ে সময়ে ,তবুও আশা ছাড়েন নি৷ অবশেষে বাবা-মার অনুমতি নিয়ে ১৮৫১ সালে নার্সের প্রশিক্ষণ নিতে তিনি জার্মানীতে যান৷
নার্স প্রশিক্ষণের জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজ শুরু করে প্রায় ৪৫ হাজার পাউন্ড জোগাড় করেছিলেন ৷ লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে নার্সিংকে সম্পূর্ণ পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ১৮৬০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘ ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল স্কুল অফ নার্সিং’৷
মানুষের সেবায় তাঁর দৃষ্টান্তমূলক অবদানের জন্য ১৮৮৩ সালে রানী এলিজাবেথ তাঁকে ‘ রয়েল রেডক্রস’ সম্মানে সম্মানিত করেন৷ ১৯০৭ সালে প্রথম মহিলা হিসেবে ‘ অর্ডার অফ মেরিট’ সম্মানে ভূষিত হন নাইটিঙ্গেল৷ ১৯০৮ সালে পান লন্ডনের ‘ অনারারী ফ্রিডম’ উপাধী (তথ্য সূত্র: গুগল)
গেল ১২ মে মহিপাল,ফেনী ‘ট্রমা সেন্টার’ এর নার্সরা খুব সুন্দর ভাবে ‘আন্তর্জাতিক নার্স দিবস’ পালন করেন৷ ব্যানার টাঙিয়ে তার চার পাশে সবুজ বেলুন দিয়ে সাজানো হয়৷
এই বছরের প্রতিপাদ্য বিষয়,
‘ স্বাস্থ্য ব্যবস্হাপনায় শক্তিশালী নার্স নেতৃত্বের বিকল্প নেই- বিশ্ব স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে নার্সিং খাতে বিনিয়োগ বাড়ান ও নার্সদের অধিকার সংরক্ষণ করুন’
-সুন্দর ভাবে ব্যানারে লেখা হয়েছে৷

কেক কেটে অনুষ্ঠানের সূচনা৷ সাথে মিষ্টি, সমুচা ও ড্রিংক্স৷
তারপর আলোচনা অনুষ্ঠান৷ আমি গুগল সার্চ দিয়ে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল সম্পর্কে যা জেনেছি তা শেয়ার করি৷
তারপর ‘সেবিকা কেন হতে চেয়েছিলেন এবং’সেবিকা জীবনের স্মরণীয় ঘটনা’ – এই দু’টো বিষয় নার্সদের শেয়ার করতে বলি৷
বেশীর ভাগই নিজের ইচ্ছা ছাড়াই এই পেশায় এসেছেন, শুধু সুচিত্রা সিস্টার শাবানা অভিনীত ‘অবদান’ ছবিতে নার্সের ড্রেস পরা শাবানাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে সেবিকা হতে চেয়েছিলেন৷ একই কথা বললেন সেলিনা, তবে ছবি দেখে নয়, নার্সদের আগের ড্রেসে (পুরোটাই সাদা) বিমোহিত হয়ে এই পেশায় আসা৷
স্মরণীয় ঘটনায় কয়েকজন বললেন, স্টুডেন্ট থাকার সময় প্রথম দিকে রোগী মারা গেলে কান্নাকাটি করতেন৷ আর হোসনে আরা নার্স স্টুডেন্ট থাকাকালীন একদিন এক্সিডেন্ট এর প্রচুর রোগী আসায় তাড়াহুড়ায় ফাইলের পিন মুখে রেখে কাজ করতে গিয়ে গিলে ফেলেন৷ সে কী ভয়াবহ অবস্থা! ভাগ্য ভালো, হঠাৎ কাঁশির সাথে পিনটা বেরিয়ে আসে৷
অনুষ্ঠানের পুরো আয়োজন ওনারা নিজেরাই করেন৷ সবার মধ্যেই মানুষের সেবা করার প্রবল মানসিকতা দেখলাম,শুধু শেষে একটা কথাই বললেন,
আমাদের চাওয়া-মানুষ যেন সবসময় প্রাপ্য সম্মান টুকু দেন৷