[bangla_date] || [english_date]

ভোটারের স্বাক্ষর জালিয়াতি করার অভিযোগে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

রবিবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন।

জেলা রিটার্নিং অফিসার কার্যালয় সূত্র জানায়, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গিয়াস উদ্দিন তার আবেদনের সঙ্গে এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জমা দিয়েছেন। সেখান থেকে ১০ ভোটারের স্বাক্ষর ও তথ্য যাচাই বাছাই করার জন্য অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। সেখানে ৭ জন ভোটারের তথ্য সঠিক পাওয়া গেলেও তিনজন ভোটারের তথ্য সঠিক পাওয়া যায়নি। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থন যাচাই বিধিমালা ২০১১ এর ৫ বিধি লঙ্ঘিত হয়েছে। তাই আইন অনুযায়ী তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মাহফুজা জেরিন বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের এক শতাংশ ভোটারদের মধ্যে তিন ভোটার বাংলাদেশে নেই। তারা একজন দেড় বছর, দুই বছর ও চার বছর ধরে প্রবাসে রয়েছেন। এই অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

আগামী ৫ থেকে ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে স্বতন্ত্র ওই প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

এর আগে গত ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় গিয়াস উদ্দিন বলেছেন, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং সামাজিক সম্পৃক্ততার কারণে জনগণ তাকেই মিরসরাইয়ের এমপি বানাবে বলে তার বিশ্বাস।

ভোটাররা ‘কেন্দ্রে যেতে পারলে’ নির্বাচনে জয়ী হওয়া নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন বলেন, “আমি কারো ফেভার চাই না। মিরসরাইয়ের মানুষ যাতে তার ভোটাধিকার সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করতে পারে, সেজন্য আপনারা সহযোগিতা করবেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং নির্বাচনী কাজে যারা নিয়োজিত আছেন, তারা যেন এটার জন্য যত্নবান থাকেন।”

জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এ নির্বাচনকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চলছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যদি সোচ্চার থাকে, তাহলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে না।”

চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে আওয়ামী লীগ এবার মনোনয়ন দিয়েছে বর্তমান এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের ছেলে মাহবুব রহমান রুহেলকে। সে কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ প্রত্যক্ষভাবে সঙ্গে থাকতে না পারলেও অনেকেই ‘পক্ষে আছে’ বলে দাবি করেন গিয়াস।

আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলের সাথে থাকার দাবি করে তিনি বলেন, “বিএনপি-জামায়াতের আমলে মিরসরাইয়ে ২৯টি লাশ পড়েছে। আমি সবার লাশ কাঁধে নিয়েছি। ১৯৯১ সালে বিএনপির আমলে যেসব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হামলার শিকার হয়ে আহত হয়েছে, তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে সেবা দিয়েছি।

“তখন থেকেই আমি প্রতিদিন মেডিকেলে যাই আমার এলাকার রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য।সবার সুখে দুঃখে পাশে থেকেছি। যার কারণে মিরসরাইয়ের মানুষ আমাকে বলে ‘মেডিকেল বন্ধু’।”

তরপরও মনোনয়ন না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে গিয়াস বলেন, “মিরসরাই আসনের সাত বারের এমপি, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন দুই বছর আগে আর নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর মিরসরাইবাসী আশায় বুক বেঁধেছিলেন, আমি এমপি হতে পারব।”

একসময় গিয়াস ছিলেন মোশারফের ঘনিষ্ঠ। কিন্তু নানা কারণে তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তাদের এ দূরত্ব ঘিরে মিরসরাইয়ে দুটি বলয় তৈরি হয়েছে।

২০০৯ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন গিয়াস উদ্দিন। পরের দুইবার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান। অন্যদিকে গিয়াস বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে দুই নির্বাচনেই হন দ্বিতীয়। আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর বিরোধে জয় হয় বিএনপি প্রার্থীর।

এবারও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গিয়াস স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় এ আসনে জমজমাট ভোটের লড়াই হবে বলে মনে করা হচ্ছিল।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গিয়াস বলেন, “ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন হেভিওয়েট প্রার্থী। কিন্তু উনার সন্তান না। যদি আল্লাহ উনার হায়াত দান করেন, জনগণের জন্য আরও বেশি কাজ করেন, পাশে থাকেন, তখনই হেভিওয়েট হতে পারবেন। একদিনে কিন্তু হেভিওয়েট হতে পারবেন না।”