বেগম জিয়া মাগুরায় যে স্টাইলে নির্বাচন করেছিল, সেই স্টাইলে নির্বাচন করতে চাইছেন ফখরুল সাহেবরা। ওই নির্বাচন এ দেশে হবে না। এখানে নিয়ম মেনে ওয়ান ম্যান ওয়ান ভোটে নির্বাচন হবে।
মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) বিকেলে নগরের কাজীর দেউড়ি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য প্রবীণ সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেছেন।
বিএনপি মানুষের জন্য কাজ করেনি জানিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমেরিকা, ব্রিটিশ, ফ্রান্সে এবং উন্নত দেশে একইভাবে ওই একই নিয়মে নির্বাচন হয়। নির্বাচন হয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে। মির্জা ফখরুল আবারও বলতে চাই আমেরিকায় যখন নির্বাচন হয় তখন সেখানে রাষ্ট্রপতি কি পদত্যাগ করেছিল। ট্রাম্প কি পদত্যাগ করেছিল। রাষ্ট্রপতি বাইডেন কি পদত্যাগ করবেন। তাহলে আমরা কোন দোষ করলাম। পাশের দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী কি পদত্যাগ করবে? তিনিতো প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। নির্বাচন কমিশন বিধিবিধান অনুযায়ী থাকবেন, নির্বাচন পরিচালনা করবেন।
তিনি আরও বলেন, ফখরুল সাহেব পদযাত্রা, সমাবেশ করছে করুক, কারণ তারা অন্য রকমের নির্বাচন চান।
যদি জনপ্রিয়তা থাকে বিএনপি নেতারা নির্বাচন করে জয়লাভ করুক।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আওয়ামী স্বেচ্ছোসেবক লীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। করোনা মহামারিতে পৃথিবী যখন থমকে গেছে, দেশ যখন থমকে গেছে, কৃষকরা যখন তাদের ক্ষেতের ফসল কাটতে পারছে না, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, সহযোগী সংগঠনসগহ সকল নেতাকর্মী মাথায় করে কৃষকের ধান বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন। করোনা মহামারিতে মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতসহ বহুবিধ কাজ স্বেচ্ছাসেবক লীগ করেছে। আজকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের যে নতুন কমিটি হবে ওই কমিটি আগামী নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে পূর্বের ন্যায় তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।
তিনি বলেন, আজকে দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বিএনপি দেশে গণ্ডগোল সৃষ্টি করতে বিভিন্ন স্থানে সভা–সমাবেশ করছে। একই সাথে তারা বিদেশ থেকে দেশের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে ও সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে আসছে। বাংলার মানুষ এক থাকলে কখনো তারা সফল হবে না। স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের মাঠে সক্রিয় থাকতে হবে, ডিজিটালিও সক্রিয় থাকতে হবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি স্বীকার করুক আর না করুক, সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে। আমরা সরকার গঠন করার পর দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনেও ধস নামানো বিজয়ের মাধ্যমে সারা দেশে জয় লাভ করবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, সংবিধানের প্রতি যদি শ্রদ্ধাশীল হন, বাংলাদেশের উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। আন্দোলন করে আওয়ামী লীগকে নামাবেন এই দুঃসাহস ভুলে যান। মানুষ আমাদের প্রত্যাখ্যান করলে আমরা ক্ষমতা ছেড়ে দেব। কিন্তু মানুষ আপনাদের প্রত্যাখ্যান করছে।
তিনি বলেন, পত্রিকায় পড়লাম, মির্জা ফখরুল সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, সরকার নাকি সকল দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। এটি মিথ্যা কথা, অন্তঃসারশূন্য। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মচারী নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত থাকবেন। সহযোগিতা করা নির্বাহী বিভাগের কর্তব্য থাকবে। যেই প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকবে সকলেই নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবেন। আপনাদের ৬ জন সংসদ সদস্য নির্বাচনকালীন সদস্য হতে পারত। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় দেয়া যেত তাদের মধ্যে থেকে। কিন্তু আপনারা তাদের সংসদ থেকে পদত্যাগ করিয়েছেন। দরজা আপনারা বন্ধ করেছেন। ওই ৬ জনের মধ্যে একজন স্বতন্ত্র নির্বাচন করে আবারও সংসদ সদস্য হয়ে এসেছেন।
বিএনপি নেতাকর্মীরাও ভালো আছেন উল্লেখ করে হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, গত ১৫ বছরে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে। ২০১১ সালের পর আওয়ামী লীগের কর্মীরা বাসায় থাকতে পারেনি। মা-বাবার জানাজার নামাজ পড়তে পারেনি। কবরে মাটি দিতে পারেনি। কিন্তু ১৫ বছর ধরে বিএনপির নেতাকর্মীরা বহাল তবিয়তে তাদের বাড়িতে ভালো আছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন।

সকালে সম্মেলন উদ্বোধন করেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু। দুই পর্বের এই সম্মেলনের প্রথম পর্বে জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক এরাদুল হক নিজামী ভূট্টুর সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মো. নাছির উদ্দিন রিয়াজের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। প্রধান বক্তা ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম আফজালুর রহমান বাবু। বিশেষ অতিথি ছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আতাউর রহমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ফারুক আমজাদ খান, ড. জমির উদ্দিন সিকদার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একেএম আজিম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাফিউল করিম নাফা, আশিষ কুমার সিংহ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপ–প্রতিবন্ধী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ডা. উম্মে সালমা মুনমুন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ হানিফ চৌধুরী, মো. সাইফুল্লাহ আনসারী ও মো. মাহবুবুর রহমান বাবর, তারেক মাহমুদ চৌধুরী পাপ্পু, জাহাঙ্গীর হোসেন বাবর, আতাউল মাসুদ প্রমুখ।
নোমান আল মাহমুদের কোরআন তেলাওয়াত, দীপক দাশের গীতাপাঠ ও প্রকৌশলী পলাশ বড়ুয়ার ত্রিপিটক পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। সাংগঠনিক প্রতিবেদন পাঠ করেন মো. নাছির উদ্দিন রিয়াজ। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন এস এম সেলিম।
দ্বিতীয় পর্বে সম্মেলনে দ্বিতীয় অধিবেশন পরিচালনা করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু। এ সময় উপস্থিত সকলের মতামতের ভিত্তিতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এরাদুল হক নিজামী ভূট্টুকে সভাপতি এবং মো. নাছির উদ্দিন রিয়াজকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ উত্তর জেলার দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন।