চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর অন্যতম বদ্বীপ হচ্ছে বাংলাদেশ। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশে হানা দেয় কোনা না কোনো দুর্যোগ। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর উপকূলীয়বাসীর জীবনে একটি ভয়াবহ কালো রাত ছিল। সেই প্রলয়ঙ্করি জলোচ্ছ্বাসে দশ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। সে সময় মনপুরা দ্বীপের বত্রিশ হাজার জনবসতির মধ্যে বিশ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়।
আজ বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) সকালে হালিশহর আহমদ মিয়া সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অডিটরিয়ামে ১২ নভেম্বর স্মরণে উপকূল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে “উপকূল রক্ষা ও দুর্যোগ মোকাবেলায় পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি ও করণীয়” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সিটিমেয়র আরও বলেন, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, আনোয়ারা, হালিশহর, বন্দর, কক্সবাজার, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় যে তাণ্ডবলীলা সংঘটিত হয় তা উপকূলবাসী হৃদয়কে আজও প্রকম্পিত করে। মেয়র বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড় শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিলো না, এখানে সুদূর রাজনৈতিক প্রভাব পড়েছিল। প্রলয়ঙ্করি ঘুর্ণিঝড় পরবর্তী তৎকালিন পাকিস্তান সরকারের উদাসীনতা প্রমাণ করেছিল পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) মানুষের জীবন মৃত্যুর কোনো গুরুত্ব তাদের কাছে ছিলনা। ৭০’র নির্বাচনের মাধ্যমে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটিয়ে তৎকালিন পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি বাঙ্গালির অবিশ্বাসের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছিল। তিনি বলেন, ৭০’র ১২ নভেম্বর ধবংসযজ্ঞকে কেন্দ্র করে উপকূলীয় জনসাধারণের জন্য একটি পৃথক দিবস ঘোষণা করলে উপকূলবাসীর মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ যে ঝুঁকিতে আছে তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বোঝানো সম্ভব হবে।
দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও মো. কামালের সঞ্চালনায় এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপকূল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এম আমিনুল হক পারভেজ চৌধুরী।

বিশেষ অতিথির হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র রিসার্চ অফিসার এম জহিরুল আলম জহির, বারাকা পাওয়ার লি. প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম। আরো বক্তব্য রাখেন সমাজ সেবক মো. কামাল উদ্দিন, মোজাম্মেল হক চৌধুরী, আহম্মদ মিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রমা বড়ুয়া।
মেয়র আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসে প্রতিবছর বাংলাদেশে লাখ লাখ লোক মৃত্যুবরণ করতে হয়। ঘর-বাড়ি সহায় সম্পদ হারায়। সেসব এখন আর নেই। ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টে বাংলাদেশের ভূমিকা আন্তর্জাতিক বিশ্বে প্রশংসনীয়। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চ্যাম্পিয়ন অবদি আর্থ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করার যে ব্যবস্থা আমরা গড়ে তুলেছি তা এখন সারা বিশ্বের জন্য রোল মডেল। তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এখন আমাদের অনুসরণ করছে। বাংলাদেশে এখনও প্রতিবছর ঘুর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গৃহীত পদক্ষপের পূর্বের মতো এখন আর ঘূণিঝড় জলোচ্ছাসে আগের মতো ক্ষয়-ক্ষতি হয় না।
তিনি বলেন, পলিথিন ও প্লাষ্টিক সামগ্রী পরিবেশ এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সচেতনতার অভাবে দেশে বিপুল পরিমাণ পলিথিন ও প্লাষ্টিক সামগ্রী ব্যবহৃত হচ্ছে। এই পলিথিনের কারণে কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা হারিয়ে বন্দর অচল হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। কর্ণফুলী রক্ষা হলে চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা হবে। আর বন্দর রক্ষা হলে দেশের অর্থনীতি রক্ষা পাবে। তাই পলিথিনের ক্ষতিকর বিষয়টি সম্পর্কে সর্বমহলে সচেতনতা সৃষ্টি করা আজ সময়ের দাবী। তিনি সুন্দর, নিরাপদ ও বাসযোগ্য নগর উপহার দেয়ার জন্য পলিথিন ও প্লাষ্টিক সর্বাগ্রে বর্জন এবং দূষণ রোধের কার্যক্রমকে আরো বেগবান করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
চসিক ভ্রাম্যমাণ আদালত বঙ্গবন্ধু ট্যানেলের সড়কে আনন্দবাজার জেলে খাল এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার নগরীতে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। চসিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলী পরিচালিত অভিযানে নগরীর পতেঙ্গায় বঙ্গবন্ধু ট্যানেলের সড়কে আনন্দবাজার জেলে খাল সংলগ্ন এলাকা থেকে প্রায় ৫০ টি অবৈধ মাছের আড়ত ও দোকান উচ্ছেদ করে রাস্তার জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়। এতে অংশ নেন সিটি মেয়রের একান্ত সচিব ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আবদুল মান্নান। অভিযানকালে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা -কর্মচারী ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটকে সহায়তা প্রদান করেন।