মোহাম্মদ ইাউসুফ *
দীর্ঘদিন নানা জটিল রোগে ভোগে অবশেষে আজ (২২মে) রাত ৮টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক এমডি, স্পন্সর ডিরেক্টর ও সীতাকুণ্ড সমিতি-ঢাকার সভাপতি এবং চাটগাঁর বাণীর সাবেক উপদেষ্টা এ কে এম সরওয়ারদি চৌধুরী (৭৩)।
মৃত্যুকালে তিনি তাঁর স্ত্রী রাশেদা বেগম, মেয়ে তানিয়া ইসলাম,সুমাইয়া নুসরাত, ছেলে এ কে এম শরফুদ্দিন চৌধুরী সজিব ও এ কে এম জিয়াউদ্দিন চৌধুরীসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
ছেলে সজিব সস্ত্রীক থাইল্যাণ্ডে থাকায় এখনও জানাজার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি।
সরওয়ারদি চৌধুরী ১৯৫০ সালের ১৬ মার্চ সীতাকুণ্ড উপজেলার উত্তর সলিমপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জ্ন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি স্বাধীনতোত্তর বাংলাদেশে তৎকালীন ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে জুনিয়র অফিসার হিসেবে যোগদান করেন।পরবর্তকালে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনে ডেপুটি ম্যানেজার থাকাকালীন বাংলাদেশ বীমা একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত এডভান্স ইন্স্যুরেন্স কোর্স সম্পন্ন করেন।১৯৮৮ সালের ১ জানুয়ারি তিনি ফেডারেল ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে জেনারেল ম্যানেজার পদে যোগদান করেন।এ কোম্পানির সার্বিক দায়িত্ব অত্যন্ত সততা ও দক্ষতার সাথে পালনের ফলে ১৯৯১ সালে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, ১৯৯৪ সালে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ১৯৯৬ সালে তিনি এ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
সরওয়ারদি চৌধুরী মানবীয় গুণাবলী ও আকর্ষণীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারি ছিলেন। শিশুর মতো সহজ-সরল এ মানুষটি আগাগোড়াই ছিলেন একজন সজ্জন ভদ্রলোক। অমায়িক ব্যবহার, মানুষের আপদে-বিপদে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া,সমাজসেবামূলক ও জনহিতকর নানান কাজে নিবিড় সম্পৃক্ততা, চট্টগ্রামসহ রাজধানীর ব্যাংক বীমা, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক পরিমণ্ডল, সুশীলসমাজসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন।
সরওয়ারদি চৌধুরী রাজনীতির মাঠ থেকে ওঠেআসা একজন সফল বীমাবিদ। রাজনীতির চেয়ে বীমাশিল্পে তিনি সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিজের জায়গা করে নিতে পেরেছেন।স্বাধীনবাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম এম আর সিদ্দিকী যে চেয়ারে বসে একসময় দায়িত্ব পালন করেছিলেন, সেই একই চেয়ারে আসীন হয়ে সরওয়ারদি চৌধুরী ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। এম আর সিদ্দিকীর সাথে সরওয়ারদি চৌধুরীর সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত গভীর। এম আর সিদ্দিকী শুধু তাঁর রাজনৈতিক গুরু ছিলেন না, তিনি ছিলেন তাঁর কর্মক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়ানোর সকল অনুপ্রেরণার উৎস। যে ইস্টার্ন কোম্পানিতে সরওয়ারদি চৌধুরীর কর্মজীবন শুরু হয়, সেই কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন তাঁরই বড়ভাই একাত্তরের রণাঙ্গণে শহিদ এ কে শামসুদ্দিন। গরীব দুঃখী মেহনতি মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন তিনি।তাঁর শরণাপন্ন হয়ে কত মানুষ য়ে কতভাবে উপকৃত হয়েছে- তার কোনো হিসেব নেই। আকর্ষণীয় আচার-আচরণ ও মধুর ব্যবহার দিয়ে সরওয়ারদি চৌধুরী সহজেই মানুষের মন জয় করতে পারতেন।উষ্ণ আতিথেয়তায় অতিথিকে সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি প্রদানের ক্ষেত্রে তাঁর খ্যাতি সর্বজনবিদিত। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও স্বাধীনতা সংগ্রামে রয়েছে তাঁর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। সীতাকুণ্ড নির্বাচনী এলাকা থেকে এমপি পদে নির্বাচন করতে কয়েকবার মনোনয়নও চেয়েছিলেন তিনি কিন্তু রাজনীতির নিষ্ঠুর খেলায় তিনি হেরে যান।
উল্লেখ্য, সমাজসেবা ও বীমাশিল্পে বিশেষ অবদানের জন্যে চাটগাঁর বাণী পত্রিকা তাঁকে ২০১৮ সালে সম্মাননা স্মারকে ভূষিত করে।
লেখক- প্রধান-সম্পাদক, সাপ্তাহিক চাটগাঁর বাণী ও চাটগাঁরবাণীডটকম