এ দেশের সব সংকটে বাংলাদেশ ছাত্রলীগই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ছাত্রসমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গামাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মরণে ছাত্রসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। সমাবেশ শুরুর আগে তাদের সম্মানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ছাত্রলীগ হচ্ছে তারুণ্যর সেই শক্তি। যারা সব সময় যেকোনো দুর্যোগে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এই তারুণ্যের শক্তি একদিন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আজকে দেখছি ছাত্রলীগ প্রত্যেকটা দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে ; এটা দেখে আমার গর্ভে বুক ভরে যায়।
এই আদর্শ নিয়ে ছাত্রলীগ যদি চলতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা কেউ বন্ধ করতে পারবে না-এই বিশ্বাস আমার আছে।
ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে গর্বে আমার বুক ভরে যায়। যদি তারা আদর্শ নিয়ে চলতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, শহীদের খাতায় নাম দেখতে চাইলে দেখবো- ছাত্রলীগই বুকের রক্ত দিয়ে সব সংগ্রামে ছিল। এমনকি ৭৫ এর পরে ছাত্রলীগই প্রথম প্রতিবাদ করে। বাংলাদেশের যেকোনো দুর্যোগে ছাত্রলীগ সক্রিয় ছিল, পালন করে অগ্রণী ভূমিকা । ২০০৭ সালে আমাকে যখন গ্রেফতার করা হয়, তখন ছাত্রলীগই মাঠে নেমেছিল। এ ছাত্রলীগই হচ্ছে সেই শক্তি, যারা একদিন এগিয়ে নিয়ে যাবে বাংলাদেশকে।করোনায়ও ছাত্রলীগ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিপদের সময় আমার নির্দেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কাস্তে হাতে কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়েছে। এজন্য তাদের প্রতি আমার অনেক বিশ্বাস এবং আস্থা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে অনেক সংগঠন মানবাধিকারের কথা বলে। ৮১ সালে যখন আমি ফিরে এসেছি, তখন তো আমি মা-বাবা-ভাইবোন হত্যার বিচার চাইতে পারিনি। জিয়াউর রহমান খুনিদের ক্ষমতায় বসায়। প্রতি পদে পদে বাধা সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু কোনো বাধাই আমাকে আটকাতে পারেনি। আমি বাবার স্বপ্নপূরণ ও মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের প্রতিজ্ঞা করে দেশে এসেছি। মাঠের পর মাঠ হেঁটেছি। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়েছি। দেখতে চেয়েছি, এদেশের মানুষের কী অবস্থা? আমার বাবা-মার রক্ত নিয়ে তারা দেশের কী করেছে?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পঁচাত্তরের পর আমি যখন দেশে ফিরি তখন কোনো বাধাই আমাকে আটকাতে পারেনি। আমি কাউকে ভয় পাইনি, বাবার স্বপ্ন পূরণ করবই।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ছাত্রদলের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। আর আমরা ছাত্রদের হাতে খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলাম। সেজন্যই বলি অশিক্ষিতদের হাতে বাংলাদেশ চলতে পারে না। দেশের উন্নতি হতে পারে না।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া দুর্নীতিতে বাংলাদেশকে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছিল। আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা ও নির্যাতন করেছিল। তারা হাওয়া ভবন খুলে দেশটাকে লুটপাট ও জঙ্গির দেশ বানিয়েছিল। যার ফলে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা মাত্র ৩০টি সিট পেয়েছিল। কারণ, তাদের ওপর জনগণ আস্থা রাখে না। অথচ যখনই আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেছে দেশের উন্নয়ন হয়েছে। কারণ, আমরা জনগণের জন্য কাজ করি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন বাঙালিরা। আমাদের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্র হাতে যুদ্ধে নামেন। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল মুক্তিকামী মানুষের মুক্তির জন্য।
সরকারপ্রধান বলেন, প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। এমনকি পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর ছাত্রলীগই প্রথম প্রতিবাদ করে। এ ছাড়া ২০০৭ সালে ইমারজেন্সির সময় ছাত্রলীগই প্রথম প্রতিবাদ করেছে। সেই এক-এগারোর সময়েও ছাত্রলীগ কোনো আপস করেনি।
তিনি বলেন, তারুণ্যের শক্তিতে দেশ এগিয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে যে ছাত্রসংগঠন তৈরি তাদের মাধ্যমেই দেশ এগিয়ে যাবে।
সমাবেশে দেয়া ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, মিলিটারির ছত্রছায়ায় যারা ক্ষমতায় এসেছে, সেই বিএনপি এদেশের কোন কল্যাণ চায় না। আগে দারিদ্র্যের হার যেখানে ছিল ৪১ ভাগ, আমরা সেটাকে নামিয়ে এনেছি ১৮ ভাগে। আমাদের লক্ষ্য ছিল, একটা মানুষও গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। ১৯৯৭ সাল থেকে কাজ শুরু করে এ পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ পরিবারকে আমরা ঘর তৈরি করে দিয়েছি বিনা পয়সায়। আমরা চাই, শেখ মুজিবের এই দেশে কোন মানুষ গৃহহীন থাকবে না।
তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেকটা জেলায় মেডিকেল কলেজ করে দিচ্ছি। আরো পাঁচটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করছি। বিনা পয়সায় আমরা বই দিচ্ছি। উচ্চ শিক্ষার জন্য বৃত্তি দিচ্ছি, উচ্চশিক্ষায় বিশেষ বরাদ্দ দিচ্ছি। সব দেশের সঙ্গে সমানতালে মিলিয়ে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাচ্ছি।
আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, ডিজিটাল বাংলাদেশ করব। ২০০৮ এর নির্বাচনে ২০২১ রুপকল্প ঘোষণা দিয়েছিলাম। আজকে সেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।
সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য, বাংলাদেশকে আরো উন্নত করা। এজন্য সারাদেশের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক উন্নত করছি। পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের প্রতি অপবাদ চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। একটা ব্যাংকের এমডি সরকারি বেতনধারী এক ব্যক্তি।
দশ বছর তিনি বেআইনিভাবে ব্যাংক চালিয়ে আবারও সেখানে থাকতে হবে, সেই লোভে আমাদের ওপর বারবার চাপ দিলো একটা বড় দেশ। তাকে এমডি পদে রাখা না হলে নাকি পদ্মা সেতু বন্ধ করে দেবে। কিন্তু আদালত তো তার বয়স কমাতে পারেনি।
এক বছর পর্যন্ত সে থাকতে পারবে, কিন্তু তার সত্তরের উপর বয়স। সুতরাং সে মামলায় সে হেরে যায়। এরপর হিলারি ক্লিনটন নিজে অর্ডার দিয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেয়। তখন আমরা বলেছিলাম, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করবো, কারো কাছে হাত পেতে নয়। সেটা করেছি, বিশ্বকে দেখিয়েছি- বাংলাদেশ পারে, বাংলাদেশের মানুষ পারে।
জাতির পিতা ১৯৭১ সালে বলেছিলেন, ‘এই বাঙালিকে কেউ দাবায়া রাখতে পারবে না’। আমরা কিন্তু সেই জাতি। পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে দেখিয়েছি- আমরা চাইলে নিজের টাকায় নির্মাণ করতে পারি। এরপরই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বদলে গেছে।
এরপর আমরা অনেকগুলো পরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবায়ন করছি। দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করছি। এসবের ফলে আজকে মানুষ সুবিধা পাচ্ছে। সারাদেশে আজকে সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক করে দিচ্ছি। এতে বাংলাদেশের মানুষ খুব অল্প সময়ের মধ্যে যেকোনো জেলা থেকে ঢাকা আসতে পারছে। এখন ১ লাখ ২২ হাজার ৫২২ কিলোমিটার সড়কে পরিণত হয়েছে। আরো ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। সারাদেশে এখন ওয়াইফাই কানেকশন, ব্রডব্যান্ড কানেকশন পৌঁছে গেছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসে এখন আমাদের ছেলেমেয়েরা ‘লার্নিং এন্ড আর্নিং প্রজেক্ট’ এর মাধ্যমে শিক্ষা নিয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে গ্রামে বসে বিদেশে কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারছে।
শেখ হাসিনা বলেন, অনেকের এসব ভালো লাগে না। যাদের চোখ অন্ধ আমি বলব, অনেক আধুনিক আই ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি বাংলাদেশে। যারা এখন অন্ধ, যারা আমাদের উন্নতি দেখেন না- তারা দশ টাকা টিকিট করে সেখানে গিয়ে যেন চোখটা দেখিয়ে আসেন। আসলে তাদের মনের দরজায় অন্ধকার। মানুষের জীবন মান উন্নত হচ্ছে এটা তাদের পছন্দ না। আমাদের লক্ষ্য সমাজের কোন অংশ যেন পিছিয়ে না থাকে।
আমি ছাত্রলীগের ছেলে মেয়েদের একটা অনুরোধ করবো, জাতির পিতা কারাগারে বসে বসে যে বই লিখেছেন অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা ইত্যাদি বইগুলো পড়তে। বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন ডকুমেন্ট থেকেও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। সবার এগুলো পড়া দরকার।
জাতির পিতা বলেছিলেন, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে প্রথম প্রয়োজন সঠিক নেতৃত্ব। ছাত্রলীগ যেন সেই নেতৃত্ব দিতে পারে এভাবেই গড়ে উঠুক। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মনে রাখতে হবে, ছাত্রলীগকে জাতির পিতা অনেক মূল্যায়ন করতেন।
আমরা ঘোষণা দিয়েছি স্মার্ট বাংলাদেশ করব। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট ম্যানপাওয়ার, স্মার্ট গভর্নর, স্মার্ট সোসাইটি হবে এ দেশ। এজন্য আমাদের অনেক কাজ করতে হবে।
ছাত্রলীগকে বলবো, ক্লাস রুম থেকে শুরু করে যেখানেই বসবাস করব নিজের প্রতিষ্ঠান পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। গ্রামের বাড়িতে কোন জমি যেন অনাবাদি না থাকে। যাদের জমি অনাবাদী তাদেরকে উৎসাহিত করবে যেন এগুলোতে ফসল ফলায়। পরিবেশ রক্ষার জন্য ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ করবে।
আজকে স্যাংশান, যুদ্ধের কারণে সারা পৃথিবীতে মুদ্রাস্ফীতি। এজন্য খাদ্য উৎপাদন করব। আমরা আমাদের উৎপাদন বাড়িয়েছি
তিনি বলেন, আমরা সাধারণ মানুষের জন্য সর্বজনীন পেনশনের ব্যবস্থা করেছি। যখন বয়স হয়ে যাবে কর্মক্ষমতা হারাবে তখন সেখান থেকে প্রতিমাসে টাকা নিয়ে নিজেরা চলতে পারবেন। আমি দেখলাম, বিএনপির কিছু নেতারা বললেন-এটা নাকি আমাদের নির্বাচনের ফান্ড তৈরির করার জন্য। এর থেকে লজ্জার আর কি হতে পারে? নিজেরা কিছু করতে পারেনি অথচ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে! এই পেনশন স্কিমের আমানত কখনো খোয়া যাবেনা, কেননা এটা সরকারি কোষাগারে জমা হবে।
২০৪০ এ স্মাট বাংলাদেশের স্মার্ট কান্ডারি হবে এই ছাত্রলীগের ছেলে-মেয়েরা। আমি ডেলটা প্ল্যান করে দিয়েছি। এই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। কিন্তু এই ছাত্রলীগকে সব সময় সজাগ থাকতে হবে। ছাত্রলীগের সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।
ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও উপস্থিত রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিমসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ নেতারা অংশ নেন।