২৪শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ || ৭ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

সাবেক মেয়র ছেলে, ছেলের স্থলাভিষিক্ত হয়ে চেয়ারে বসবেন  মা। গল্পটি ঢাকার পাশের গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন সাবেক সাবেক বরখাস্তকৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। এর মধ্য দিয়ে গাজীপুরবাসী তৃতীয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথম নারী মেয়র পেলো।

টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন দুই লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটে আজমত উল্লাকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জায়েদা খাতুন।

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিটে জেলা পরিষদ ভবনের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে জয়ী ঘোষণা করেন সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম। এর আগে ফল ঘোষণার শুরু থেকে কেন্দ্রে অবস্থান করেছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তবে কেন্দ্রে আসেননি নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ৫৯টি ওয়ার্ডের ৪৮০ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। কোনও ধরনের সংঘর্ষ ছাড়াই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে বিকাল ৪টায় শেষ হয় ভোট।

গাজীপুর তৃতীয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথম নারী মেয়র জায়েদা খাতুন

২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন সিটির প্রথম মেয়র হন এম. এ. মান্নান। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র হন জাহাঙ্গীর আলম। মেয়াদ শেষের আগেই তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। এর মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।

গত ২৭ এপ্রিল মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন মেয়র পদে জাহাঙ্গীর আলম ও তার মা জায়েদা খাতুন মনোনয়ন জমা দেন। ঋণখেলাপের অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। বৈধ হয় জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন। মনোনয়ন বাঁচাতে আদালতে গেলেও তাতে লাভ হয়নি।

জায়েদা খাতুন তার নির্বাচনী হলফনামায় নিজেকে গৃহিণী ও স্বশিক্ষিত বলে উল্লেখ করেছিলেন।

তার জন্ম গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কানাইয়া এলাকায় ১৯৬২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমসহ দুই ছেলে ও এক মেয়ের মা তিনি।

মেয়র পদে মনোনয়ন জমা দেয়ার পূর্বে রাজনীতি বা সামাজিক কোনো ক্ষেত্রেই তার নাম শোনা যায়নি।

তিনি পূর্বে নির্বাচন তো দূরের কথা কোন রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও অংশ নেননি। ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের ইমেজকে ভিত্তি করেই তিনি ক্রমশ পরিচিতি অর্জন এবং নির্বাচন ও রাজনীতিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেন। এভাবেই তিনি এবারের মেয়র পদের নির্বাচনে তার অবস্থান অনেকটাই সুসংহত ও পাকাপোক্ত করে তুলেছেন।

অপরিচিতির ঘোরটোপ ডিঙিয়ে তিনি যেমন নাটকীয়ভাবে পরিচিতি লাভ করেছেন, তেমনি মেয়র পদে নাটকীয় জয়ের মাধ্যমে তিনি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চমক সৃষ্টি করেছেন।

এই নির্বাচনে অপর মেয়র প্রার্থীরা হলেন—লাঙল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। এ ছাড়া স্বতন্ত্র থেকে মেয়র পদে ঘোড়া প্রতীকে মো. হারুন-অর-রশীদ ও হাতি প্রতীকে সরকার শাহনূর ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।