[bangla_date] || [english_date]

নিজস্ব প্রতিবেদক *

চসিকের বইমেলা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন দীপংকর তালুকদার এমপি

বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি এ দেশের অমূল্য সম্পদ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান অতিথি বন,পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি।

তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক নানা উপাদান এসব জাতিগোষ্ঠীর সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। যুগ যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও জাতিসত্তা এবং অ-উপজাতীয় জনগণ বসবাস করছে। উপ-জাতীয়রা যেমন একদিকে সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের অধিকারী,অন্যদিকে তারা মূল জনগোষ্ঠীর অপরিহার্য অংশ।

দীপংকর তালুকদার এম পি বলেন, জাতীয় উন্নয়নের জন্যই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতির বিকাশে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দরকার। জাতীয় উন্নয়নের জন্যই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতির বিকাশে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দরকার।

ভাষা যদি না থাকে, তবে সংস্কৃতি বিলুপ্ত হবে। তাই প্রয়োজন বাংলাদেশের অনেক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতির সঠিক লালন। সংখ্যাগুরু মানুষের উচিত সংখ্যায় কম মানুষের সংস্কৃতির বিকাশে এগিয়ে আসা।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ১৯৯৬ সাল থেকে একটি নীতিমালার আলোকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে “বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত) শীর্ষক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা শুরু করা হয় এবং কর্মসূচিটি চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের আশা-আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশা পূরণে সর্বদা সচেষ্ট।

আলোচক কবি ও নাট্যজন শিশির দত্ত বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত নিজস্ব আচার, উৎসব ও সংস্কৃতি দারিদ্র্য ও সংখ্যাগরিষ্ঠের আগ্রাসী সংস্কৃতির চাপে আজ তা প্রায় বিপন্ন। তবুও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা ধরে রেখেছেন নিজেদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উৎসবগুলোকে। যুগে যুগে যা সমৃদ্ধ করেছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাহিত্যকে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক নৃগোষ্ঠী গবেষক ড. আজাদ বুলবুলের সভাপতিত্বে  আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন কবি ও নাট্যজন শিশির দত্ত, মাটিরাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ প্রশান্ত ত্রিপুরা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আনন্দ চাকমা।  এসময় উপস্থিত ছিলেন  প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা ও মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম।

পরে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের উপজাতীয় গান ও নৃত্য শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেন।

বাঙালি জীবনে একুশে ফিরে ফিরে আসে নবজীবনের ডাক নিয়ে। একুশ আসে ভাষা চেতনায় গোটা জাতিকে শাণিত, উদ্ধুদ্ধ করতে। কেননা একুশ আমাদের মননের বাতিঘর বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।

তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারী মাস আমাদের জাতিসত্তার বিকাশে এক অনবদ্য সংযোজন। অসাধারণ আত্মত্যাগের এক বিশাল অর্জন। পৃথিবীর ইতিহাসে বাঙালি এক অনন্য জাতি। পৃথিবীতে খুব কম জাতি আছে যারা ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতিস্বত্ত্বা রক্ত দিয়ে রক্ষা করেছে। রক্ত দিয়ে বাঙালি নিজের রাষ্ট্র তৈরি করেছে, তার নিজস্ব সংস্কৃতিকে বিকশিত করছে, অসম্প্রদায়িক চেতনা তুলে ধরছে।একুশের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। একুশের চেতনা হারিয়ে ফেলা যাবে না। বিশেষ করে তরুণ সমাজকে একুশের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করতে হবে।

মেয়র বলেন,বাংলাদেশের কোনো সিটি করপোরেশন বই মেলার আয়োজন করেনা একমাত্র চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এই বইমেলার আয়োজন করে।চট্টগ্রামের   এই বই মেলা এখন তরুণ তরুণী, কিশোর কিশোরী, লেখক, সাহিত্যিকদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের লোক সংস্কৃতি হারিয়ে যেতে বসেছে।  পুঁথি পাঠ হারিয়ে গেছে। কবি গান,যাত্রা গান বিলুপ্ত প্রায়। এজন্য আগামীতে আঞ্চলিক গানের উৎসবের ঘোষণা দেন মেয়র।

প্রধান আলোচক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভাষা বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. সৌরভ সিকদার বলেন,ভাষা একটি জাতির পরিচয়ের অনেক বড় একটি বাহন। ভাষাগত পরিচিতি একটি জাতিকে স্বতন্ত্র মর্যাদায় ভূষিত করে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে। অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে শহিদ মিনার প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, বিদেশি ভাষা শিখা কোনো বৈরিতা নয় কিন্ত আগে আমাদের বাংলা ভাষা শুদ্ধভাবে লিখতে ও পড়তে জানতে হবে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বই মেলার আয়োজনকে একটি মহতি উদ্যোগ বলে অভিহিত করে বলেন, সভ্যতা থাকলে বই থাকবে।

সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ১৯৫২ পর থেকে একুশ ছিল শোকের দিন। ষাটের দশকে প্রতিবাদী হয়ে উঠে। আর স্বাধীনতা পরবর্তী একুশ হয়ে উঠে সৃজনশীলতার উৎসব।সৃজনশীল উৎসবের মাধ্যমে একুশের শোক এখন শক্তিতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।